আমরা চাই আমাদের চলচ্চিত্র বিদেশেও সমাদৃত হোক: প্রধানমন্ত্রী
১৪ নভেম্বর ২০২৩ ২৩:১৯
ঢাকা: সিনেমা নির্মাতাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আপনারা একটু নজর দিলে সমাজের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে যে খুব ভালোভালো চলচ্চিত্র নির্মাণ করা যায় তা কিন্তু প্রমাণ করেছেন। আমরা চাই দেশের অঙ্গন ছাড়িয়ে আমাদের চলচ্চিত্র বিদেশেও সমাদৃত হোক। আপনারা এইদিকে আরেকটু মনোযোগ দেবেন।’
মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত হয়ে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০২২ প্রাপ্তদের হাতে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একথা বলেন।
অনুষ্ঠানে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্তদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানের দর্শকসারিতে তার ছোট বোন শেখ রেহানা উপস্থিত ছিলেন। পরে তিনি ছোট বোন রেহানাসহ উপস্থিত অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপভোগ করেন।
গত ৩১ অক্টোবর ২৭টি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০২২ প্রাপকদের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল।
চলচ্চিত্র অঙ্গনের সঙ্গে সম্পৃক্তদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা একটু নজর দিলে সমাজের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে যে খুব ভালোভালো চলচ্চিত্র নির্মাণ করা যায় তা কিন্তু প্রমাণ করেছেন। আমি বলতে পারি ইদানিংকালে যতগুলো চলচ্চিত্র বাংলাদেশে নির্মাণ হয়েছে প্রতিটি কিন্তু পরিবার দেখতে পারে, মানুষ যেতে পারে, একসাথে বসতে পারে, আনন্দ উপভোগ করতে পারে অথবা দুঃখে কাঁদতে পারে। মানুষের সঙ্গে একাত্ম হতে পারে; এই যে একটা অনুভূতি সেটা কিন্তু ফিরে এসেছে। এভাবেই আপনারা চালিয়ে যান।’
‘আর এখন তো ডিজিটাল যুগ। আমরা বলব তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে বিশ্বমানের চলচ্চিত্র যাতে নির্মাণ হয় সেই পদেক্ষপ আপনারা নেবেন। সেটিই আমরা চাই।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে এফিডিসির প্রতিষ্ঠাসহ আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন মেয়াদে চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নে নানামুখী পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করার প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী।
এফডিসিকে আরও প্রযুক্তিসম্পন্ন আধুনিক করার প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এর জন্য প্রকল্পে যথেষ্ট টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। তবে টাকার অংক দিয়ে হিসাব করি না। আমাদের শিল্পীরা ভালোভাবে কাজ করতে পারবে সেই পরিবেশটা তৈরি করতে চাই।’
পাশাপাশি চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নে গাজীপুরে কবিরহাট বঙ্গবন্ধু ফিল্ম সিটি তৈরি করার কাজ চলছে বলেও অবহিত করেন।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের দেশের অঙ্গন ছাড়িয়ে আমাদের চলচ্চিত্র বিদেশেও সমাদৃত হোক। সেই সঙ্গে আমাদের পরিচালক শিল্পী কলাকৌশলী প্রযোজক থেকে যারা আছেন সবাইকে এই আহ্বানেই করব যে, আপনারা এইদিকে আরেকটু মনোযোগ দেন। যেহেতু আমাদের মানুষের সাধারণ জীবনে স্বচ্ছলতা এসেছে তাই তারা বিনোদনের দিকে কিন্তু আরও ঝুঁকছে। কাজেই এই বিনোদনের ক্ষেত্রটাও তৈরি করে আপনারা দিতে পারেন।’
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন-২০২৩ সংসদে পাস করে দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই আইনের বলে চলচ্চিত্র শিল্পের মান নির্ণয়ের ব্যবস্থাও সন্নিবেশিত হবে। আমরা চাই না যে, আমাদের দেশে অশ্লীল চলচ্চিত্র অথবা পাইরেসি চলুক। আমাদের সকলের নিজেদের সকলের যে মেধা আছে সেই মেধা কাজে লাগিয়ে কিন্তু ভাল মানের শিল্প গড়ে তোলা যায়। সেই ব্যবস্থাটা যেন হয় আমরা চাই।’
ফিল্ম আর্কাইভ ভবন নির্মাণ করার ফলে পুরনো চলচ্চিত্রগুলো ডিজিটাল আর্কাইভ করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পুরনো সিনেমাগুলোর সঙ্গে আমাদের অনেক ইতিহাস জড়িত। সেগুলোও আমাদের দেশের মানুষ জানুক দেখুক ‘
১৬ তলা বিশিষ্ট তথ্য ভবন নির্মাণ এবং গণমাধ্যমের তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করাসহ নতুন প্রস্তাব আমরা এটাই চাই আমাদের শিল্পীদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থাটা। শুধু শিল্পী না, শিল্পী-কলাকৌশলী সকলের জন্য। কারণ এখনকার যুগে যেটাই আমরা করতে যাই সবকিছুর জন্য প্রশিক্ষণটা কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সেদিকে লক্ষ্য রেখেই প্রশিক্ষণ ট্রেনিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা কাজেই আমি আশা করব যারাই কাজ করতে যান। ট্রেনিং নিলে অনেক কিছু জানা বোঝার সুযোগ সৃষ্টি হবে।
শিশুদের বিনোদনের জন্য চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের শিশু-শিল্পীরা তারা এতো চমৎকার অভিনয় করে যে তা বলার মতো না। আর সেখান থেকে আমাদের আস্তে আস্তে অনেক নায়িকাও গড়ে উঠছে। তাই শিশু চলচ্চিত্র নির্মাণের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেবেন।’
সেক্ষেত্রে আরও যত সহযোগিতা লাগে তার দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যদিও আমাদের সময় শেষ। তারপরও বলব যেখানেই থাকি আমরা সহযোগিতা করে যাব।’
বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদ্যোগে মুজিব একটি জাতির রূপকার চলচ্চিত্র নির্মাণের সঙ্গে জড়িত সকলের প্রতি ধন্যবাদও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘তারা এতো চমৎকারভাবে অভিনয় করেছেন। আমি নিজে তো এটির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলাম। মনে হয় তারা সম্পূর্ণ অন্তর দিয়ে কাজ করেছেন। আশা করি, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এটি একটি শ্রেষ্ঠ অর্জন হিসেবে থাকবে।’
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত হিসাবে ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু। স্বাগত বক্তব্য রাখেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. হুমায়ুন কবির খন্দকার।
সারাবাংলা/এনআর/একে