Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মার্কিন ভিসা নীতির শঙ্কায় নির্বাচন নিয়ে সংশয় জি এম কাদেরের

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৫ নভেম্বর ২০২৩ ০০:২৯

ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এসেছে। নির্বাচনের তফসিলও ঘোষণা হতে যাচ্ছে আজ। তবে জাতীয় নির্বাচনে জাতীয় পার্টি (জাপা) অংশ নেবে কি না— সে বিষয়ে পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের এখনো সিদ্ধান্তই নেননি। জি এম কাদের মনে করছেন, এই মুহূর্তে নির্বাচনে গেলে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির আওতায় পড়ে যেতে পারেন। এ কারণেই এখনো নির্বাচন নিয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত তিনি নেননি।

তবে পার্টির অনেক নেতাই বলছেন, নির্বাচনে যাওয়ার সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে জাপা। আর জি এম কাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে যে বক্তব্য দিচ্ছেন, সেটি রাজনৈতিক কৌশল হতে পারে বলে মনে করছেন তারা। বলছেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে জাতীয় পার্টি সংসদের প্রধান বিরোধী দলের অবস্থান হারাবে। ফলে বিএনপি নির্বাচনে যাচ্ছে কি না, সে বিষয়ে নিঃসন্দেহ হয়েই সিদ্ধান্ত নিতে চান জি এম কাদের।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভা সূত্র বলছে, সভায় জি এম কাদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের চিঠি এসেছে আমাদের কাছে। এই চিঠির গুরুত্ব অনেক। এটি যুক্তরাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক চিঠি। তারা সংলাপ চায়। আমরাও সংলাপের কথা বলে আসছি। আমরা আর কোনো দলের মুখাপেক্ষী থাকতে চাই না।

জাপার নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রুদ্ধদ্বার বৈঠকে জেলা ও উপজেলাসহ মাঠপর্যায় থেকে ছুটে আসা নেতারা বিভিন্ন ইস্যুতে মন খুলে কথা বলেছেন। কোনো কোনো নেতা তাদের বক্তব্যে দলে মূল্যায়ন না হওয়াসহ নানা বঞ্চনার কথা তুলে ধরেন। সংগঠনকে শক্তিশালী করতে না পারার ব্যর্থতার কথাও তুলে ধরেন অনেক নেতা।

বিজ্ঞাপন

সভায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনা করেছেন অনেক নেতাই। তৃণমূলের বেশির ভাগ নেতাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার পক্ষে কথা বলেন। তাদের মতে, আওয়ীমী লীগর সঙ্গে জোটবদ্ধ নির্বাচনে অংশ নিলে লাভবান হয় আওয়ামী লীগ, ক্ষতিগ্রস্ত হয় জাতীয় পার্টি। তৃণমূল নেতাদের কেউ কেউ বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পরামর্শও দেন।

চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সর্বশেষ ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের সঙ্গে বৈঠকসহ সাম্প্রতিক বিষয়গুলো সভায় তুলে ধরেন জি এম কাদের। বলেন, আগামী নির্বাচন জাতীয় পার্টির জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জে জয়ী হতে হবে। দল ও দেশের স্বার্থে তিনি সময়মতো সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান। মাঠের নেতাদের তার ওপর আস্থা রাখারও আহ্বান জানান তিনি। জবাবে মাঠের নেতারাও এসব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের ওপর অর্পণ করেন।

জি এম কাদের সভায় বলেন, আমরা ভুল করলে জাতীয় পার্টি অস্তিত্বের সংকটে পড়বে। তাই কোনো অবস্থাতেই ভুল করা যাবে না। অক্টোবরে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ছিল, নিতে পারিনি। এখন নভেম্বর মাস। এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। কারণ পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে, কেউ জানে না। দুই বড় দল মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। কী হবে, কী হতে যাচ্ছে— কেউ জানে না।

জাপা চেয়ারম্যান আরও বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে আছি। ক্ষমতার বাইরে থেকে নানাভাবে বঞ্চনার শিকার হচ্ছি। আমাদের নেতাকর্মীরা যথাযথ মূল্যায়ন পাচ্ছে না। তারপরও একটি বিষয় প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি— জাতীয় পার্টি মাথা উঁচু করেই আছে।

নির্বাচন প্রসঙ্গে জি এম কাদের আরও বলেন, হঠাৎ করে এখনই কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারব না। এর জন্য আরও সময় লাগবে। জাতীয় পার্টিকে অতীতে নানাভাবে বিভক্ত করা হয়েছে। দুর্বল করে রাখা হয়েছে। এখন আমরা ঐক্যবদ্ধ। এখন আমরা অনেক শক্তিশালী। তাই আমাদের ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অতীতে আমরা যখনই কোনো সিদ্ধান্ত নিতে গিয়েছি, কিছু লোক পেছন থেকে তা নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র করেছে। আগামীতে আর এরকম হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ জাতীয় পার্টি এখন আগের চাইতে অনেক বেশি শক্তিশালী। এটাই আমাদের এখন শক্তির উৎস।

নির্বাচন নিয়ে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে জানিয়ে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, সবার মতামত নিয়ে এবং সবার সঙ্গে কথা বলে আমি সিদ্ধান্ত নেব। আমার সিদ্ধান্ত কারও মতের বিরুদ্ধেও যেতে পারে। কিন্তু বৃহত্তর স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত সবাইকে মেনে নিতে হবে।

জাতীয় পার্টির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জি এম কাদেরের নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিয়ে বক্তব্যকে রাজনৈতিক কৌশল বলেই মনে করছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য সারাবাংলাকে বলেন, ‘পার্টি চেয়ারম্যান বর্তমানে যেসব বক্তব্য দিচ্ছেন, সেগুলো তার রাজনৈতিক কৌশল। নির্বাচনে বিএনপি আসবে কি না, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে— এটি সত্যি। তবে জাতীয় পার্টি যেন সরকারের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে দর কষাকষি করতে পারে, সেটিই চাইছেন জি এম কাদের। তিনি সরকারের সঙ্গে দর কষাকষির পথ শক্ত করছেন।’

সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর

জাতীয় পার্টি জাতীয়-নির্বাচন জি এম কাদের টপ নিউজ নির্বাচনি কৌশল মার্কিন ভিসানীতি

বিজ্ঞাপন

আজ সশস্ত্র বাহিনী দিবস
২১ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:১৬

আরো

সম্পর্কিত খবর