পদ্মা সেতুর শতভাগ, পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ৬১ শতাংশ কাজ শেষ
১৮ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:০৫
ঢাকা: উদ্বোধনের প্রায় একবছর পর অবশেষে শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু প্রকল্পের। তবে গত অক্টেবার মাস পর্যন্ত ভৌত অগ্রগতি শতভাগ হলেও আর্থিক অগ্রগতি এখনো ৯১.১০ শতাংশ। অর্থাৎ এখন পর্যন্ত প্রকল্পের আওতায় ব্যয় হয়েছে ২৯ হাজার ৭০৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এখানে বরাদ্দ দেওয়া আছে ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এছাড়া আরেক মেগা প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ শেষ হয়েছে ৬১ শতাংশ। ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি শতভাগ বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে।
এদিকে ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত মেগা ৮ প্রকল্পের গড় অগ্রগতি হয়েছে ৮৫.৯৩ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৭৩.৫৫ শতাংশ। বাস্তবায়ন,পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের অক্টোবর মাস পর্যন্ত অগ্রগতি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সারাবাংলাকে বলেন, ‘মেগা প্রকল্পগুলো আমাদের সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। এগুলোর মাধ্যমে জনগণের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটেছে। শেখ হাসিনা নেতৃত্বে ছিলেন বলেই এগুলোর বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে। জনগণ নির্বাচনে অবশ্যই সেটি বিবেচনা করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে এগুলো বাস্তবায়নে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। কেননা যারা প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে তারা নির্বাচন নিয়ে ব্যাস্ত থাকবে না। আমরা নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও তারা তাদের কাজ করবে।’
জানা গেছে, গত অক্টোবর মাস পর্যন্ত প্রকল্পগুলোর অনুকূলে ব্যয় হয়েছে ২ লাখ ১২ হাজার ৮৯৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। তবে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ছয় হাজার ২৬৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা। ইতোমধ্যে পদ্মা সেতু এবং মেট্রোরেলের উত্তরা-আগারগাঁও অংশের উদ্বোধন হলেও প্রকল্প শেষ হতে এখনও বেশ কিছুটা সময় বাকি আছে।
অন্য প্রকল্পগুলো হলো- মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ এবং দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু-মায়ানমারের নিকটে ঘুমধুম পর্যন্ত সিংগেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প।
শতভাগ ভৌত কাজ শেষ পদ্মা সেতুর
গত বছরের ২৫ জুন উদ্বোধন করা হয় পদ্মা সেতু প্রকল্পের। কিন্তু এরপর প্রায় এক বছরের কাছাকাছি সময়ে প্রকল্পটির ভৌত কাজ শতভাগ শেষ হলো। প্রকল্পের মেয়াদ আছে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। গত অক্টোবর পর্যন্ত প্রকল্পটির আওতায় ব্যয় হয়েছে ২৯ হাজার ৭০৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৯১.১০ শতাংশ।
পুরো প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে শতভাগ। এটি বাস্তবায়নে মোট ৩২ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া এই প্রকল্পে কয়েক দফা মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প
দেশের সবচেয়ে বেশি ব্যয়ের প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। শুরু থেকে অক্টোবর পর্যন্ত প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৬১ .৬২ শতাংশ। প্রকল্পের আওতায় এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৬৭ হাজার ১১ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৫৯.৩২ শতাংশ।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে এক লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে।
চলতি বছরের শেষ নাগাদ এ বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের উৎপাদন লক্ষ্য ছিল, কিন্তু কোভিড মহামারিতে সঞ্চালন লাইনের কাজ দেরি হওয়ায় কেন্দ্রটির উৎপাদন পিছিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ রূপপুর প্রকল্পটি উৎপাদনে আসতে পারে।
মেট্রোরেল
বহুল প্রত্যাশিত মেট্রোরেল প্রকল্পের উত্তরা-আগারগাঁও অংশ গত বছর ২৮ ডিসেম্বর উদ্বোধন হয়েছে। এরপর গত ৪ নভেম্বর উদ্বাধন করা হয় আগারগাঁও-মতিঝিল অংশ। কিন্তু পুরো প্রকল্প শেষ হতে অপেক্ষা করতে হবে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। শুরু থেকে অক্টোবর পর্যন্ত প্রকল্পটির আওতায় ব্যয় হয়েছে ২৩ হাজার ৯৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৬৯ শতাংশ। এছাড়া ভৌত অগ্রগতি ৮৩ শতাংশ।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সংশোধিত ব্যয়সহ মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। ২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু দ্বিতীয় সংশোধনীতে ব্যয় বাড়ার সঙ্গে মেয়াদ বেড়েছে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এটির মূল ব্যয় ছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা।
পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ
আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পে গত অক্টোবর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার ৩২২ কোটি টাকা। প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৭৭.২৬ শতাংশ।
এছাড়া ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৮৪ শতাংশ। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে মোট ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। প্রকল্পটি ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। ইতোমধ্যেই রেল চলাচলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মহেশখালী-মাতারবাড়ি সমন্বিত কার্যক্রম
মহেশখালী-মাতারবাড়ি সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম (১২টি প্রকল্পযুক্ত) প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। গত অক্টোবর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৩৫ হাজার ৪৮১ কোটি ৩১ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি ৬৮.৪২ শতাংশ এবং সার্বিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৭৯.৯৫ শতাংশ।
রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প
এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। গত অক্টোবর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১৪ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৯১ দশমিক ১৩ শতাংশ। ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৯৬.৬১ শতাংশ।
পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর
এ প্রকল্পটি ৪ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে। গত অক্টোবর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে তিন হাজার ৭৬১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৮৫.৯৬ শতাংশ এবং ভৌত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৯২.২৭ শতাংশে।
দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেলপথ
দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু-মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত সিংগেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।
গত অক্টোবর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৮ হাজার ৩৩৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৪৬.২৩ শতাংশ। এছাড়া ভৌত অগ্রগতি ৯০ শতাংশ।
সারাবাংলা/জেজে/এমও