ডেঙ্গুর কারণ মশা— জানে না ২০% রোগী: গবেষণা
১৬ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:০৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো: সচেতনতার অভাবে চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশি হওয়ার তথ্য উঠে এসেছে এক গবেষণায়। এতে বলা হয়েছে, আক্রান্তদের ২০ শতাংশই জানে না যে ডেঙ্গুর মূল কারণ মশা। জমাটবদ্ধ পানিতে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী মশার বিস্তার হয়— এ তথ্য জানা নেই ১৫ শতাংশ রোগীর। আর ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের মধ্যে ৪০ শতাংশ ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করতেন না।
এসপেরিয়া হেলথ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে সম্প্রতি চট্টগ্রামের ছয়টি প্রতিষ্ঠানের গবেষকদের যৌথ গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। চট্টগ্রামে এক হাজার ৫৫০ জন ডেঙ্গু রোগীর ওপর চার মাস ধরে পরিচালিত এ গবেষণায় রোগীদের রোগতত্ত্ব, জনস্বাস্থ্যগত প্রভাব, ভাইরাসের ধরন এবং জিনোমের প্রকরণও উঠে এসেছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবার চট্টগ্রামে স্বল্পশিক্ষিত মানুষ ডেঙ্গুতে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ৪৫ শতাংশই পঞ্চম শ্রেণির বেশি পড়ালেখা করেননি।
ডেঙ্গুর চারটি ধরনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডেন-২ সেরোটাইপে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের পরিমাণ প্রায় ৭৫ শতাংশ। এ ছাড়া ডেন-১ সেরোটাইপে ১১ শতাংশ ও ডেন-৩ সেরোটাইপে আক্রান্তের সংখ্যা ১৪ শতাংশ।
গবেষকরা বলছেন, চট্টগ্রামে দীর্ঘসময় পর ডেন-১ সেরোটাইপে আক্রান্ত ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। দীর্ঘসময় ধরে জমাটবদ্ধ থাকা পানিতে সৃষ্ট এডিস মশা থেকে এ ধরনের বিস্তার ঘটেছে।
গবেষণা প্রকল্পের প্রধান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক আবদুর রব সারাবাংলাকে বলেন, ‘২০০০ সাল এবং এর পরবর্তী কিছু সময় চট্টগ্রামে ডেন-১ সেরোটাইপে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গিয়েছিল। এরপর গত ১০-১৫ বছর কিংবা তারও বেশি সময় ধরে চট্টগ্রামে সেভাবে ডেন-১ সেরোটাইপে আক্রান্ত ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যায়নি।’
‘কিন্তু এবার আমরা প্রায় ১১ শতাংশ রোগী পেয়েছি। আবার যাদের মধ্যে সেরোটাইপ-১ শনাক্ত হয়েছে, তাদের ৭০ শতাংশ শিশু। ঢাকায় আবার ডেন-১ ধরনে আক্রান্ত রোগী নেই। যে স্থানে দীর্ঘসময় ধরে পানি জমাটবদ্ধ হয়ে থাকে, সেখানে বংশবিস্তার করা এডিস মশা থেকে ডেন-১ সেরোটাইপের বিস্তার ঘটতে পারে,’— বলেন এই গবেষক-চিকিৎসক।
প্রধান গবেষক চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডাক্তার এম এ সাত্তার সারাবাংলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে সাধারণত ডেন-২, ডেন-৩ ধরনের আক্রান্ত রোগী এতদিন পাওয়া যেত। এবার ডেন-১ পাওয়া গেছে। এগুলোর মধ্যে উপসর্গে তেমন কোনো হেরফের নেই। তবে ডেন-১ শিশুদের আক্রান্ত করে বেশি।’
গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, চট্টগ্রামে ডেন-২ সেরোটাইপে আক্রান্ত ৭৫ শতাংশ রোগীর মধ্যে ৬৫ শতাংশ পুরুষ। রোগীদের প্রতি পাঁচজনে একটি শিশু। ৯৯ শতাংশ রোগী জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। অন্যদিকে শতভাগ শিশু জ্বরে আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে বেশিরভাগই শহরের।
চট্টগ্রামের ৬০ শতাংশ ডেঙ্গু রোগীর অবস্থান পাওয়া গেছে নগরীর পাঁচটি এলাকায়, যেগুলোকে ‘হটস্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন গবেষকরা। এলাকাগুলো হলো— বাকলিয়া, চকবাজার, কোতোয়ালি, ডবলমুরিং ও বায়েজিদ বোস্তামি। গ্রামাঞ্চলের মধ্যে সীতাকুণ্ড, হাটহাজারী, পটিয়া ও কর্ণফুলী এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন ও পেডিয়াট্রিকস বিভাগ, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি), আইসিডিডিআরবি ও নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিং রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন ল্যাব চিটাগংয়ের গবেষকরা ডেঙ্গু রোগীদের নিয়ে এ গবেষণা সম্পন্ন করেন।
সহ-প্রধান গবেষক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক আদনান মান্নান সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবার ডেঙ্গুর সেরোটাইপ নিয়ে খুব বেশি গবেষণা হয়নি। কিট আনতে না পারায় গবেষণা সেভাবে হয়নি। আমরা চট্টগ্রামের ছয়টি সেবাদাতা কেন্দ্র থেকে নমুনা সংগ্রহ করে এবং আক্রান্ত রোগীদের সঙ্গে কথা বলে গবেষণাটি সম্পন্ন করেছি। আমাদের প্রতিবেদনে যেসব হটস্পটের কথা বলা হয়েছে, এসব জায়গায় যেন পানি জমাট বেঁধে না থাকে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া উচিত।’
সারাবাংলা/আরডি/টিআর
এডিস মশা এসপেরিয়া হেলথ রিসার্চ গবেষণা প্রতিবেদন চট্টগ্রাম ডেঙ্গু ডেঙ্গুর প্রকোপ