চট্টগ্রাম ব্যুরো: অবরোধ চলাকালে চট্টগ্রাম নগরীতে মধ্যরাতে বিএনপি কার্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে পুলিশ কার্যালয় ঘিরে রাখায় হামলাকারীরা ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। বিএনপি এ হামলার জন্য সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চুর অনুসারী যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দায়ী করেছে।
বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে শ’খানেক লোক মিছিল নিয়ে নগরীর নুর আহমদ সড়কে নগর ও উত্তর জেলা বিএনপির কার্যালয় নাসিমন ভবনের সামনে যান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে মিছিলকারীরা নাসিমন ভবন লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। নাসিমন ভবনের প্রধান ফটকের সামনে থাকা কয়েকটি ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে। এরপর ভেতরে ঢুকে মাঠ পার হয়ে তারা কার্যালয়ের দ্বিতীয় গেইটের সামনে যান। সেখানে থাকা কয়েকটি ব্যানারও তারা ছিঁড়ে ফেলেন।
পুলিশ আগেভাগেই নাসিমন ভবনের দ্বিতীয় ফটকের সামনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ জন্য মিছিলকারীরা ভেতরে ঢুকতে পারেননি। পরে পুলিশ তাদের বের করে দিলে তারা মিছিল নিয়ে লালখান বাজারের দিকে চলে যান।
নগর বিএনপির দফতরের দায়িত্বে থাকা নেতা ইদ্রিস আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘লালখান বাজারে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চুর কার্যালয় থেকে বের হয়ে যুবলীগ-ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা বিএনপি অফিসে হামলা করেছে। নগর বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা এ সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানাই।’
জানা গেছে, বিএনপির ডাকে চলমান অবরোধের মধ্যে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বুধবার রাত ১১টার দিকে নগরীর ওয়াসার মোড়ে আক্তারুজ্জামান ফ্লাইওভারের নিচে দাঁড়িয়ে থাকা দুটি স্থানীয় রুটের বাসে আগুন দেয়া হয়। এর প্রতিবাদে সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চুর অনুসারীরা মিছিল বের করেন। মিছিল নাসিমন ভবনের সামনে দিয়ে যাবার সময় একদল নেতাকর্মী হামলার ঘটনা ঘটায়।
এ বিষয়ে নগর যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চুর বক্তব্য জানতে পারেনি সারাবাংলা।
জানতে চাইলে নগর পুলিশের কোতোয়ালী জোনের সহকারি কমিশনার অতনু চক্রবর্তী সারাবাংলাকে বলেন, ‘নাসিমন ভবনের সামনে বিক্ষোভ হয়েছে। খবর পেয়ে আমরা দ্রুত সেখানে পৌঁছে যাই। আমরা কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়েছিলাম। কাউকে আমরা ভেতরে প্রবেশ করতে দিইনি। মিছিলকারীরা কোনো ব্যানার-ফেস্টুন ব্যবহার করেননি। এ জন্য এরা কারা সেটা আমরা জানতে পারিনি।’
এদিকে বিএনপির ডাকা পঞ্চম দফা অবরোধের দ্বিতীয় দিনে বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) সকাল থেকে নগরীর বিভিন্নস্থানে ঝটিকা মিছিল করেছেন নেতাকর্মীরা।
সকালে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক রাজিবুল হক বাপ্পীর নেতৃত্বে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা দেওয়ানহাট রেললাইনের ওপর টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে। নগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও আহবায়ক কমিটির সদস্য আহমেদুল আলম চৌধুরী রাসেলের নেতৃত্বে প্রবর্তক মোড় এবং ষোলশহর দুই নম্বর গেইট এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে।
সারাবাংলার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি এস এম মাহফুজ আহমেদ জানিয়েছেন, বৃহস্প্রতিবার (১৬ নভেম্বর) সকালে নগরীর ষোলশহর রেলস্টেশন এলাকায় চবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমানের নেতৃত্বে মিছিল হয়েছে। মিছিল থেকে এক সমাবেশে আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে ডাক দিয়েছেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল তা বাস্তবায়নে দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ। জনগন এই তফসিল ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেছে। এই তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে এই ফ্যাসিস্ট সরকার মুলত নিজের পতনের দিন-ক্ষণ নিদিষ্ট করেছে। এখন থেকে এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের ঠিকানা হয় রাজপথ না হয় কারাগার।’
বিক্ষোভ মিছিলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ও ফ্যাকাল্টি শাখা ছাত্রদলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
অবরোধের মধ্যে চট্টগ্রামে যথারীতি পণ্যবাহী ট্রাক-কাভার্ডভ্যান চলাচল করছে। তবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ আছে। শাহ আমানত সেতু এলাকা থেকে কক্সবাজার-বান্দরবান জেলা ও অভ্যন্তরীণ রুটের বাস ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। নগরীতে রিকশা, অটোরিকশা, হিউম্যান হলার, বাসসহ গণপরিহন ও পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক আছে।
গত ২৮ অক্টোবর ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশে পুলিশের সঙ্গে সংঘাতের ঘটনা ঘটে। এতে এক পুলিশ সদস্য নিহত হন। সংঘাতের জেরে পরদিন সারাদেশে হরতাল ডাকে বিএনপি। একইসময়ে জামায়াতও হরতাল আহ্বান করে। এরপর ৩১ অক্টোবর থেকে ধারাবাহিকভাবে অবরোধ কর্মসূচি আহ্বান করে আসছে বিএনপি-জামায়াত।