‘মিধিলি’র প্রভাবে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য উঠানামা বন্ধ
১৭ নভেম্বর ২০২৩ ১৩:৫৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করা ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’ এগিয়ে আসছে। যার ফলে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এরপর বন্দর নিজেদের নিয়মানুযায়ী দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সতর্কতা ‘অ্যালার্ট-৩’ জারি করে যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের কারণে জাহাজ থেকে পণ্য উঠানামা বন্ধ আছে। কিন্তু জেটির ইয়ার্ড থেকে বিভিন্ন পরিবহনে পণ্য বন্দরের বাইরে বের হয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে যাচ্ছে। বন্দরের জেটিতে বিভিন্ন সরঞ্জাম বেঁধে রাখা হয়েছে।
শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) সকাল বহির্নোঙরে থাকা জাহাজগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জেটিতে থাকা সব জাহাজ বের করে দেওয়া হয়। সেগুলোকে নিরাপদে অবস্থান করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক সারাবাংলাকে জানান, চট্টগ্রাম বন্দরে অ্যালার্ট-থ্রি জারি করা হয়েছে। জেটিতে থাকা ২২টি জাহাজকে নিরাপদে চলে যেতে বলা হয়েছে। সকাল থেকে জাহাজগুলো পর্যায়ক্রমে জেটি ত্যাগ করে গভীর সাগরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। বহির্নোঙরে মাদার ভ্যাসেল থেকে পণ্য খালাস বন্ধ আছে। লাইটারেজ জাহাজ চলাচল বন্ধ আছে।
কর্ণফুলী নদীতে কয়েক’শ লাইটারেজ জাহাজ নোঙর করে রাখা হয়েছে। জাহাজ থেকে পণ্য উঠানামা বন্ধ থাকলেও জেটির ইয়ার্ড থেকে বিভিন্ন পরিবহনে পণ্য বন্দরের বাইরে বের হয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে যাচ্ছে।
মিধিলি’র প্রভাবে চট্টগ্রামে টানা বৃষ্টি
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’র প্রভাবে চট্টগ্রামে বৃষ্টি অব্যাহত আছে। শুক্রবার সকাল থেকে কোথাও গুঁড়ি গুঁড়ি আবার কোথাও মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ আফতাব আহমেদ সারাবাংলাকে জানান, ঘূর্ণিঝড় মিধিলির’র কারণে সকাল থেকে চট্টগ্রামে টানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পতেঙ্গা আবহাওয়া অধিদফতর ৬২ দশমিক ৮ লিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। বিকেল বা সন্ধ্যার দিকে বৃষ্টি কমে আসতে পারে। আবহাওয়া অধিদফতরের সর্বশেষ বুলেটিন অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড় মিধিলি উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আজ (শুক্রবার) সন্ধ্যা নাগাদ খেপুপাড়ার কাছ দিয়ে মোংলা-পায়রা উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত আবহাওয়ার ৯ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় মিধিলি উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় (২০.৩০ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮.৬০ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছে। এটি আজ (১৭ নভেম্বর) সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪১৫ কি.মি. পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৯৫ কি.মি. পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ২৬৫ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ২৭০ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আজ সন্ধ্যা নাগাদ খেপুপাড়ার কাছ দিয়ে মোংলা-পায়রা উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
৬০৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখার নির্দেশ
ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। শুক্রবার সকাল থেকেই নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা আকবরশাহ এলাকার এক, দুই ও তিন নম্বর ঝিল এবং বিজয়নগরে মাইকিং করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মো. ফখরুজ্জামান জেলার সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে অনলাইনে জরুরি সভা করেছেন। এতে ঘূর্ণিঝড়ের আগাম প্রস্তুতি নিতে সংশ্লিষ্ট দফতরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সভায় জেলার ৬০৯টি (মহানগর ১১৬টি ও জেলা ৪৯৩টি) আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখতে বলা হয়। একইসঙ্গে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখতে বিভিন্ন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ছাইফুল্লাহ মজুমদার সারাবাংলাকে জানান, বর্তমানে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নিকট ত্রাণের জন্য ২২ লাখ ৩০ হাজার টাকা, ২৪৪ মেট্রিক টন চাল, ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকার মূল্যের গো-খাদ্য, সমপরিমাণ মূল্যের শিশুখাদ্য, ৪৭২ ব্যাগ শুকনা খাবার, ১ হাজার পিস কম্বল এবং ৪৭ হাজার ওরস্যালাইন মজুত আছে। পরিস্থিতি পর্যালোচনায় এসব সামগ্রী দ্রুত বরাদ্দ প্রদান করা হবে।
সারাবাংলা/আইসি/এনএস
ঘূর্ণিঝড় আপডেট ঘূর্ণিঝড় মিধিলি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর টপ নিউজ মিধিলি মিধিলি আপডেট