‘নির্বাচনের দরজা সবার জন্য উন্মুক্ত, অগ্নিসন্ত্রাস করলে ছাড় নয়’
১৭ নভেম্বর ২০২৩ ১৮:২১
ঢাকা: নির্বাচন বানচাল করার জন্য যারা অগ্নিসন্ত্রাস করছে তাদের এবার কোনো ছাড়াছাড়ি নাই বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে সবাইকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে করার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘জনগণের কাছে এই যে অপরাধ করেছেন; বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াত; অগ্নিসন্ত্রাস হত্যা-জানমাল ক্ষতি করেছেন সেজন তাদের কাছে মাফ চেয়ে তারপরে এসে আপনারা নির্বাচনে আসনে, সেটিই আমরা চাই। নির্বাচনের দরজা সবার জন্য উন্মুক্ত।’
শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির অফিসে এ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি বানচালে বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এরা এখন নিজেরা লুকিয়ে থাকে। আমার কথা হচ্ছে যে, বিএনপির নেতৃত্ব কোথায়? একজন তো এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে সাজাপ্রাপ্ত। বয়স হয়ে গেছে অসুস্থ। তার বোন এসে কান্নাকাটি করেছে, ভাই এসে বলেছে। আমার এক্সিকিউটিভ ক্ষমতা বলে শাস্তিটা স্থগিত করে খালেদা জিয়াকে বাসায় থাকার অনুমতি দিয়েছি। তিনি এখন স্বাধীনভাবে চিকিৎসা নিচ্ছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোনো সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে বিদেশে যেতে হলে তাকে কোর্টের পারমিশন নিতে হবে। আমরা সেটিও বলেছি, কোর্টে গিয়ে হাজিরা দিয়ে পারমিশন নিক। সেটি না করে আন্দোলন করার চেষ্টা করে। আসলে এটিকে ইস্যু হিসেবে দেখে। আদৌ যদি তার চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে হতো নিশ্চয়ই বিএনপি পদক্ষেপ নিতো। কারণ ছেলেই তো মাকে দেখতে এলো না। এই যায় যায়, মরে মরে- কত শুনি, ছেলের মন তো কাঁদে না।’
তারেক রহমান দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি, গ্রেনেড হামলা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি, দুর্নীতি-মানিলন্ডারিং মামলার আসামি বলেও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাদের একজন পলাতক ২০০৭ সাল থেকে। কেয়ারটেকার সরকারের সময় মুচলেকা দিয়েছিল আর কোনোদিন রাজনীতি করবে না। সে মুচলেকা দিয়ে চলে গেছে। এখন লন্ডনে বসে হুকুম দেয়। যারা অগ্নিসন্ত্রাস করে তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, সেই বিএনপি নেতাকর্মীদের কাছেই প্রশ্ন, যে দলের নেতা নেই, একটি মুণ্ডহীন দল। শুধু ধড় নিয়ে চলা দল। সেই নেতা সে তো কখনও আসবে না। আসার ইচ্ছা থাকলে চলে আসতে পারত!’
‘তার হুকুমে এই যে মানুষের ক্ষতি যারা করে যাচ্ছে বাংলাদেশে বসে, আগুন দিয়ে পোড়াচ্ছে, জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে তাদের ক্ষতি করছে। এই দায়িত্বটা তারা নিচ্ছে কেন? বিএনপির কাছে এটিই আমার প্রশ্ন।’
‘তারা ইলেকশন করতে চায় না। তার কারণ মুণ্ডহীন, একটা ধড় হয়ে গেছে। কারণ খালেদা জিয়াও ইলেকশন করতে পারবে না তারেক জিয়াও করতে পারবে না। তারা সাজাপ্রাপ্ত আসামি। এই জন্য তারা ইলেকশন চায় না। চায় না বলেই এখন ইলেকশন বানচাল করতে হবে। বানচাল করে তাদের লাভটা কী হবে? বাংলাদেশের মানুষের লাভটা কী হবে?’
‘যারা এই ধরনের নেতৃত্বের হুকুমে মানুষের ক্ষতি করে তারা তো অভিশাপ পাবে। তাদের ওপর তো মানুষের অভিশাপ পড়বে। যে কয়টা মানুষ আজকে অগ্নিসন্ত্রাসের শিকার তারা তো অভিশাপ দিচ্ছে। তাদের পরিবার দিচ্ছে। কারণ তাদের তাদের পোড়া ঘা নিয়ে দিনের পর দিন বেঁচে থাকতে হচ্ছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।
পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট করে জনগণের ক্ষতি করছে বলেও দাবি করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা সাধারণ মানুষকে এভাবে হত্যা করার পরিকল্পনা করে এবং হত্যা করে। তাদের কেন মানুষ ভোট দেবে? তাদের ওপর কেন মানুষ আস্থা রাখবে? তারা আস্থা রাখে না। মানুষ বিশ্বাস করে না। তারা ঘাতক হিসেবে চিহ্নিত। তারা ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে চিহ্নিত। সেটি তো মাথায় রাখতে হবে।’
‘নির্বাচন জনগণের সাংবিধানিক অধিকার। এটি তাদের ভোটের অধিকার। সময় আসছে নির্বাচন হবে জনগণ ভোট দেবে। কারও যদি সাহস থাকে এসে ইলেকশন করবে। যদি জনগণের ভোট পাওয়ার তাদের সেই শক্তি থাকে তারা ভোট পাবে। আর জনগণ যাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে সেই সরকার গঠন করবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণের ওপর এরা আস্থা রাখতে না পেরে এরা হামলা চালাচ্ছে। তাই এদের সম্পর্কে দেশবাসীকে বলব, প্রত্যেক এলাকায় যেখানেই এই রকম অগ্নিসন্ত্রাস করছে বা গাড়িতে বোমা মারছে বা গাড়ি পোড়াচ্ছে ওই অঞ্চলে যারা বিএনপি-জামায়াত আছে, তাদের খুঁজে বের করতে হবে।’
‘জনগণকেও বলব, প্রত্যেক এলাকায় নিজেদেরকেও পাহারা দিয়ে এদেরকে ধরিয়ে দিন; যারা অগ্নিসন্ত্রাস করে। কারণ জনগণ যদি প্রতিরোধটা করে তাহলে কিন্তু এইভাবে মানুষের ক্ষতি করতে পারবে না। আর যে পোড়াবে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এবার আর কোনো ছাড়াছাড়ি নেই’ বলে হুঁশিয়ারি দেন প্রধানমন্ত্রী।
জাতীয় নির্বাচনের তফশিল বয়কট করে আন্দোলন করা বিএনপিসহ অন্যান্য দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইলেকশনের শিডিউল ঘোষণা হয়েছে। সবাই আসেন ইলেকশনে অংশ নেন। জনগণের কাছে গিয়ে জনগণের কাছে ভোট চান। জনগণের কাছে এই যে অপরাধ করেছেন; বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াত; অগ্নিসন্ত্রাস হত্যা-জানমাল ক্ষতি করেছেন সেজন তাদের কাছে মাফ চেয়ে তারপরে এসে আপনারা নির্বাচনে আসনে, সেটাই আমরা চাই। নির্বাচনের দরজা সবার জন্য উন্মুক্ত।’
জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভায় বসার কারণ তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমরা সবসময় একটা নিয়ম মেনে চলি। আমাদের গঠনতন্ত্র আছে। সেই গঠনতন্ত্র মেনে আমরা চলি। গঠনতন্ত্র মোতাবেকেই আমাদের নির্বাচন পরিচালনার জন্য আমরা নির্বাচন কমিটি করেছি।’
সভায় সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান শেখ হাসিনা এবং সভা পরিচালনা করেন কমিটির সদস্য সচিব দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদে।
এরইমধ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে চেয়ারম্যান এবং সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে সদস্য সচিব করে গঠিত দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও ১৪টি উপ-কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়েছে। আজ প্রথম সভায় জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান মনোনীত করা হয় দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহকে।
সারাবাংলা/এনআর/একে