আচরণবিধি না মেনে নৌকায় ভোট চাচ্ছেন এমপি ফারুক
১৮ নভেম্বর ২০২৩ ১০:১৭
রাজশাহী: নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) ওমর ফারুক চৌধুরী গত বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) তানোরে দুটি সভা করেন। সভা থেকে তিনি দলীয় প্রতীকে ভোট চান। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনে একটি প্রতিবেদন পাঠাচ্ছেন এ আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ। এরপরও গতকাল শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) গোদাগাড়ী উপজেলায় সভা করে নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়েছেন তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার তানোরের কলমা ও পাঁচন্দর ইউনিয়ন পরিষদ সভা দুটির আয়োজন করে। এ সভায় এলাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, সরকারের বিভিন্ন ভাতাভোগী ও ৪০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিকদের উপস্থিত থাকতে বাধ্য করা হয়। পরদিন শুক্রবারও গোদাগাড়ী সদর ইউনিয়ন পরিষদ ও চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন পরিষদ দু’টি সভার আয়োজন করে।
তানোরের সভা নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। তাই গোদাগাড়ীর ব্যানারে কিছুটা পরিবর্তন দেখা গেছে। গোদাগাড়ী সদর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে আয়োজিত সভার ব্যানারে ‘বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশাজীবী মানুষের সাথে’ লেখা অংশটুকু পরে মোটা সাদা কাগজে ঢেকে দেওয়া হয়। এর ওপরে লেখা হয় ‘দলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে’। আবার আয়োজক হিসেবে আগে লেখা ‘গোদাগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ’ এর ‘পরিষদ’ অংশটি ঢেকে দেওয়া হয়।
আগেই প্রিন্ট করা ব্যানার সংশোধন করে ‘দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়’ করা হলেও মঞ্চের সামনে ছিলেন সরকারের বিভিন্ন উপকারভোগী সাধারণ মানুষ। দলীয় নেতা-কর্মী তেমন ছিলেন না। দুপুরে এ সভায় আসা লোকজনকে খাওয়াতে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ভোররাতেই বেশকিছু পাতিলে বিরিয়ানি রান্না করা হয়। সভায় এমপির বক্তব্যের পর সবাইকে খেতে দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
রান্নার ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে মো. মারুফ নামের এক ব্যক্তি লেখেন, ‘আজ শুক্রবার গোদাগাড়ী ইউনিয়নে এমপি মহোদয় সরকারী সুবিধাভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার প্রস্তুতিমূলক কাজের কিছু স্থিরচিত্র। সার্বিক সহযোগিতায় মাসিদুল গনি মাসুদ, সুযোগ্য চেয়ারম্যান, ১ নম্বর গোদাগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ, গোদাগাড়ী, রাজশাহী। আপনারা সকলেই আমত্রিত।’
মঞ্চে বসে থাকা অবস্থায় এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী তার ফেসবুক আইডিতে কিছুসময় সরাসরি সম্প্রচার করেন। তখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মাসিদুল গণি। চেয়ারম্যান বলেন, ‘আজকে জুমার দিন। আগামীতে নির্বাচন আসতেছে। ভাল থাকার জন্য আমাদের সবাইকে নৌকার সঙ্গে থাকতে হবে। পাশাপাশি আমাদের নেতা, আমাদের সাংসদ, যিনি আমাদের চালান- আলহাজ্ব ওমর ফারুক চৌধুরীকে আগামী দিন নৌকায় ভোট দিবেন। দিবেন তো? আজকে শুক্রবার, বলেন দিবেন? কথা বলেন, হাত তোলেন। নাহ! হাত তো বেশি উঠে না দেখি। একটু পরে বিরানি-মাংস খাওয়াব। সবাই হাত তোলেন দেখি।’ এ সময় কেউ কেউ হাত উঁচু করলে চেয়ারম্যান বলেন, ‘যাই হোক চলবে, আলহামদুলিল্লাহ।’ এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী হাসিমুখে তখন লাইভ দিচ্ছিলেন।
গতকাল শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৫টায় চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন পরিষদের একজন সদস্য জানান, চর আষাড়িয়াদহ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকেই সভার আয়োজন করা হয়েছে। দুপুরের পর থেকেই বিভিন্ন ভাতাভোগীরা সভাস্থলে এসে বসে আছেন। তবে তখন পর্যন্ত এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী পদ্মা নদী পার হয়ে সেখানে গিয়ে উপস্থিত হতে পারেননি। কিছু সময়ের পর এমপি সেখানে যান বলেন বলে জানান ওই ইউপি সদস্য।
এসব সভার বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘সভার বিষয়টি আমিও জানলাম। আচরণবিধি অনুযায়ী এটা করা যায় না। আমি একটা প্রতিবেদন রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দিয়ে দেব।’
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর এবং প্রতীক বরাদ্দের আগে এই ধরনের সভা এবং ভোট চাওয়া আচরণবিধির লঙ্ঘন। তানোরের সভার বিষয়ে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছ থেকে একটি প্রতিবেদন পেয়েছি। তিনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টিই উল্লেখ করেছেন। এটা নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়ে দেব। তারপর নির্বাচন কমিশন বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর বক্তব্য জানতে তাকে ফোন করা হয়। তবে তিনি ফোন ধরেননি।
সারাবাংলা/এমই/এনএস