‘এলডিসি স্নাতক দেশগুলোকে শাস্তি নয়, সহযোগিতা করুন’
১৮ নভেম্বর ২০২৩ ০২:২৭
ঢাকা: স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) বের হওয়া দেশগুলোকে শাস্তি নয়, বরং সহযোগিতা করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) রাতে ভারতের উদ্যোগে আয়োজিত ‘দ্বিতীয় ভয়েস অব গ্লোবাল সাউথ সামিট’ এর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের অধিবেশনে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে এ মন্তব্য করেন তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গ্লোবাল সাউথের বৃহত্তর উদ্দেশ্যকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমরা যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, তার উদাহরণ এই শীর্ষ সম্মেলন। আমাদের ঐক্য, সহযোগিতা এবং সমান দৃষ্টিভঙ্গি গ্লোবাল সাউথের প্রতি আমাদের যৌথ প্রচেষ্টার চেতনাকে তুলে ধরে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় আমরা শান্তির সংস্কৃতি প্রচারের মাধ্যমে এ অঞ্চলে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের পক্ষে কথা বলছি। আমরা বিশ্বাস করি, টেকসই আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিবেশী দেশগুলোর মঙ্গলের জন্য পারস্পরিকভাবে উপকারী। যেমন, একটি প্রবাদ আছে, যদি তুমি একা যাও, তুমি এতদূর যেতে পারবে, কিন্তু যদি তুমি একসঙ্গে যাও, তবে তুমি অনেকদূর যেতে পারবে।
ড. মোমেন বলেন, যেহেতু আমরা একটি উন্নত ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছি, আমি আপনাদের সকলকে মনে করিয়ে দিতে চাই যে, আমাদের বর্তমানই আমাদের ভবিষ্যতকে নির্ধারণ করবে। আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যা ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান যুদ্ধ ও সংঘাতের কারণে আরও বেড়েছে। এই সংঘাতের প্রভাব গ্লোবাল সাউথ দেশগুলোকে অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিকভাবে আরও দুর্বল করে তুলছে।
সামিটে গ্লোবাল সাউথের জন্য পাঁচটি পরামর্শ দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
প্রথম পরামর্শে তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ হওয়া দেশগুলোকে শাস্তি নয়, বরং পুরস্কৃত করা উচিত। যেহেতু স্বল্পোন্নত দেশগুলো কোভিড-১৯ এবং বিশ্বের বিভিন্ন অংশে সংঘাতের ফলে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে, তাই আমি এলডিসি স্নাতক দেশগুলোর জন্য অন্তত ৬ বছর বাজারে প্রবেশে শুল্ক ও কোটামুক্ত এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত রাখার জন্য অনুরোধ করব।
দ্বিতীয় সুপারিশে তিনি বলেন, যুদ্ধের কারণে সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যাহত হওয়ায় অনেক প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম আকাশচুম্বী। যেহেতু অনেক দেশ, বিশেষ করে গ্লোবাল সাউথের দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তাই যুদ্ধের কারণে মুনাফা অর্জনকারী দেশ ও কোম্পানিগুলোর মুনাফার অন্তত ২৫ শতাংশ এসব ক্ষতিগ্রস্ত দেশের জন্য বরাদ্দ করা উচিত।
তৃতীয় সুপারিশে তিনি বলেন, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এই পৃথিবীকে বাঁচাতে হবে। এজন্য আমাদের অবশ্যই বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা হ্রাস ও সীমিত করার প্রতিশ্রুতি পূরণে সমস্ত প্রচেষ্টা চালাতে হবে। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী উন্নত দেশগুলোকে আরও বেশি জলবায়ু অর্থায়ন ও প্রযুক্তি নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
চতুর্থ সুপারিশে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বহুপাক্ষিক সংস্থা, আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থা এবং বাণিজ্যের শর্তাবলীতে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রয়োজন। এসব প্রতিষ্ঠান এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াগুলোতে গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোর বৃহত্তর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
পঞ্চম সুপারিশে তিনি বলেন, গ্লোবাল সাউথ প্রক্সি যুদ্ধ এবং সংঘাতের কারণে বিশ্বের বেশিরভাগ শরণার্থী এবং বাস্তুচ্যুত মানুষকে আশ্রয় দেয়। এর ফলে গ্লোবাল সাউথের বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলোর সঙ্গে আরও একটি চ্যালেঞ্জ যুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে যুদ্ধ বন্ধ করার সুপারিশ করে, এবং ১২ লাখ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের তাদের মূল দেশ মিয়ানমারে দ্রুত প্রত্যাবাসনে সকল বন্ধুত্বপূর্ণ দেশের সমর্থনের প্রত্যাশা করে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, উদীয়মান অর্থনীতি হিসেবে বাংলাদেশ সবসময়ই গ্লোবাল সাউথের পক্ষে সোচ্চার। আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশ ও ভারত একসঙ্গে কাজ করলে গ্লোবাল সাউথের অনুঘটকের ভূমিকা পালন করতে পারে।
সারাবাংলা/আইই