Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘জীবাশ্ম নয়, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে হবে’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৯ নভেম্বর ২০২৩ ০০:১৬

ঢাকা: পরিবেশ ও কৃষিজমির ক্ষতি করে এমন যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া বন্ধ করতে হবে। উন্নয়ন পরিকল্পনায় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিতে থাকা জনগণের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে হবে এবং তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার দ্রুত বাড়াতে হবে।

শনিবার (১৮ নভেম্বর) বিকেলে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় সিদ্ধেশ্বরী ক্যাম্পাসে সমাবেশ মঞ্চে দুই দিনব্যাপী জলবায়ু ন্যায্যতা সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রস্তাব ও দাবি তুলে ধরা হয়।

বিজ্ঞাপন

সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন ওয়াটারকিপার্স-বাংলাদেশের সমন্বয়ক ও প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব শরীফ জামিল। সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক সাংবাদিক নিখিল চন্দ্র ভদ্রের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন এশিয়ান পিপলস মুভমেন্ট অন ডেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এপিএমডিডি) সমন্বয়ক লিডি ন্যাকপিল, গ্লোবাল গ্যাস অ্যান্ড ওয়েল নেটওয়ার্কের স্টুয়ার্ট ম্যাক উইলিয়াম, জাপান থেকে আগত প্রতিনিধি মাকিকু আরিমা, ব্রতী সমাজ কল্যাণ সংস্থার প্রধান নির্বাহী শারমিন মুরশিদ, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের বেসরকারি উপদেষ্টা এম এস সিদ্দিকী, বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরামের সভাপতি কাওসার রহমান, ইউনাইটেড নেশনস ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের কর্মকর্তা আরাফাত জুবায়ের প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে সুলতানা কামাল বলেন, ‘জলবায়ু ন্যায্যতার অভাবে দেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই জলবায়ু ন্যায্যতার দাবি ও ক্ষতিপূরণে দাবি কোনোভাবেই অনুদানের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো ঐচ্ছিক বিষয় নয়। বরং এটি একটি ন্যায্য অধিকার। যুগ যুগ ধরে ধনী দেশগুলোর অনিয়ন্ত্রিত কার্বন নিঃসরণ ও ভ্রান্ত উন্নয়ননীতির কারণে আমরা বরাবরই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘এ ছাড়া দেশের ভেতরেও পরিবেশ সংকটাপন্ন জায়গাগুলোয় বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ এবং দলখ-দূষণের কারণে জলবায়ু ঝুঁকি বাড়ছে। এসব জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমস্যা ও সংকট সমাধানে সম্মিলিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে এই সমাবেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

এপিএমডিডির লিডি ন্যাকপিল বলেন, ‘জীবাশ্ব জ্বালানি থেকে বের হয়ে আসার বিষয়টি সঙ্গে রাজনৈতিক সদিচ্ছা গুরুত্বপূর্ণ। জীবাশ্ব জ্বালানি সস্তা হলেও নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে নিয়মিত জ্বালানি কিনতে হয় না বলে এটাতে তুলনামূলক খরচ কম ও নিরাপদ। ফলে অনবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের জন্য যারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আর এই ক্ষতিপূরণ কোনো দান-দক্ষিণা নয়, এটা আমাদের ন্যায্য প্রাপ্য।’

গ্লোবাল গ্যাস অ্যান্ড ওয়েল নেটওয়ার্কের স্টুয়ার্ট ম্যাক উইলিয়াম বলেন, ‘জলবায়ু সংকট মূলত, জীবাশ্ম জ্বালানি সংকট, যা মোট বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণের ৯১ ভাগ নিঃসরণের জন্য দায়ী। এ ছাড়া জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বের হয়ে এলে শুধু যে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কাজে আসবে তা নয়। জনস্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান ও সহজলভ্য জ্বালানির ক্ষেত্রেও তা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।’

শরীফ জামিল বলেন, ‘জলবায়ু সম্মেলন সামনে রেখে আয়োজিত সমাবেশে সারা দেশ থেকে আসা ভুক্তভোগী নানা শ্রেণি-পেশার জনগণ সমস্যা ও সংকট চিত্র তুলে ধরেছেন। ওইসব বিষয়ে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা গুরুত্বপূর্ণ মতামত ও পরামর্শ দিয়েছেন। যার ভিত্তিতে প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রস্তাবগুলো আগামী জলবায়ু সম্মেলনে তুলে ধরা হবে।’ প্রস্তাব বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ সরকারসহ বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

প্রস্তাবে বলা হয়, স্থানীয় বাস্তুসংস্থান ও মানুষের ওপর জীবাশ্ম জ্বালানি ও উন্নয়ন প্রকল্পের নেতিবাচক প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কর্মসংস্থান হারানো ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর মিথ্যা ও কপটতাপূর্ণ প্রতিশ্রুত কর্মসংস্থান নয়, বরং স্থানীয়দের আগের কর্মসংস্থানে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ধনী দেশগুলো থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ে অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়ন করতে হবে। জীবাশ্ম ও অপরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে ফিরে আসতে এর বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার নিশ্চিত করতে অর্থনৈতিক সহায়তা বাড়াতে হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি পরিকল্পনা নিতে হবে, যাতে সবুজ কর্মসংস্থান তৈরি হতে ভূমিকা রাখবে।

প্রস্তাবে আরও বলা হয়, সাফারি পার্কের নামে বনাঞ্চল ধ্বংস ও বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত বন্ধ করতে হবে। নদীগুলোকে ক্ষয়, বন্যা, সাইক্লোন ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষায় বিভিন্ন সমাধানমূলক প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

চলন বিল কর্তৃপক্ষ গঠন করে স্থানীয় বিভিন্ন উন্নয়নের সমন্বয় সাধন করে বিলের বাস্তুসংস্থান রক্ষায় পদক্ষেপ নিতে হবে। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসতি থেকে উচ্ছেদের প্রবণতা থেকে বেরিয়ে এসে পাহাড়ি ও সমতলের আদিবাসীদের বাসস্থান ও জীবনধারণের উপকরণের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। যথাযথ পরিবেশগত ও সামাজিক মূল্যায়ন ছাড়াই আগ্রাসী শিল্পায়ন ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন গ্রহণ বন্ধ করতে হবে।

সারাবাংলা/আরএফ/পিটিএম

জীবাশ্ম জ্বালানি নবায়নযোগ্য জ্বালানি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর