আ.লীগ ব্যস্ত প্রচারণায়, বিএনপি আন্দোলনে, জাপা কেন্দ্রে তাকিয়ে
১৯ নভেম্বর ২০২৩ ১৩:০৩
কক্সবাজার: জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা গণসংযোগ ও প্রচারণা নিয়ে মাঠ চষে বেড়ালেও বিএনপিসহ সমমনা বিরোধী দলগুলো ব্যস্ত সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে। অন্যদিকে, বর্তমান সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা তাকিয়ে আছেন কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনার দিকে। এতে নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে বাড়ছে মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীদের ছড়াছড়ি আর পারস্পরিক বিরোধ।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, বড় দল হিসেবে প্রতিটি আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী থাকলেও দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই নেতাকর্মীরা নির্বাচনী কাজে অংশ নেবেন। অন্যদিকে, বিএনপি নেতারা বলছেন, আপাতত তারা নির্বাচন নিয়ে ভাবছেন না। তারা ব্যস্ত সরকার পতনের আন্দোলন নিয়ে। বড় দল হিসেবে আন্দোলন ও নির্বাচনী কাজ তাদের এক সাথে চলছে। অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানই তাদের লক্ষ্য।
গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার জেলার ৪ সংসদীয় আসনেই জয়ী হয় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। আগামী নির্বাচনেও নৌকার টিকেট পেতে চলছে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ছড়াছড়ি। এতে ৪টি আসনেই নৌকার মনোনয়ন চাইছেন বর্তমান সংসদ সদস্য, কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতাদের পাশাপাশি অবসরপ্রাপ্ত আমলা, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র ও ইউপি চেয়ারম্যানসহ অন্তত ৩০ জন।
কক্সবাজার-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম। এ আসনে তিনিসহ মনোনয়ন চাইছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমেদ, সাবেক সহ সভাপতি ও চকরিয়ার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম, জেলা কমিটির সাবেক সদস্য রাশেদুল ইসলাম, চকরিয়া পৌর মেয়র মোহাম্মদ আলমগীর, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ নুরুল আমিনসহ কয়েকজন।
কক্সবাজার-২ আসনের টানা দুইবারের সংসদ সদস্য বর্তমান সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক। গত ১১ নভেম্বর মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে আয়োজিত জনসভায় দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ইঙ্গিত দিয়ে তাকে জনতার হাতে তুলে দেন। তিনি ছাড়াও এ আসনে মনোনয়ন চাইছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তাফা, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী ও পরিবেশ বিজ্ঞানি ড. আনসারুল করিমসহ আরও কয়েকজন।
কক্সবাজার-৩ আসনে টানা দুইবারের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল এবারও মনোনয়ন চাইছেন। তিনিসহ এ আসনে মনোনয়নের দৌঁড়ে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান, কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফোরকান আহমেদ এবং রামু উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা সভাপতি সোহেল সরওয়ার কাজলসহ কয়েকজন।
আর কক্সবাজার-৪ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য শাহীন আক্তারের পাশাপাশি মনোনয়ন চাইছেন তার স্বামী ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি। দলীয় রাজনীতির নানা সমীকরণ আর আইনগত জটিলতার কারণে বদি ও শাহীন আক্তার মনোনয়ন বঞ্চিত হলে ছেলে আব্দুল্লাহ আরমান শাওন অথবা বদির শ্যালক উখিয়া উপজেলা কমিটির সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীর মনোনয়ন নিশ্চিতের জন্য জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।
এছাড়া এ আসনে মনোনয়ন চেয়ে মাঠে তৎপর রয়েছে টেকনাফ উপজেলা কমিটির সভাপতি নুরুল বশর ও সাধারণ সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ, জেলা কমিটির সাবেক সহ সভাপতি শাহ আলম চৌধুরী ওরফে রাজা শাহ আলম, জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি সোহেল আহমেদ বাহাদুর। পাশাপাশি মাঠে প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন মন্ত্রিপরিষদের সাবেক সচিব শফিউল আলম ও উখিয়া উপজেলা কমিটির সাবেক সভাপতি আদিল চৌধুরীও।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, ক্ষমতাসীন ও বড় দল হিসেবে প্রার্থিতার প্রতিযোগিতা থাকবে। এতে সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে সাময়িক দ্বিধা-বিভক্তি থাকলেও দলীয়ভাবে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হলে সব বিভেদ দূর হয়ে যাবে।
আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তাফা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে প্রার্থী হওয়াকে কেন্দ্র করে যেন নিজেদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি না হয়। আমি দলীয় মনোনয়ন চাই। আল্লাহ্ যদি কবুল করেন তাহলে মহেশখালী-কুতুবদিয়ার মানুষ আমাকে পাবে।’
কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল জানান, গত ৩ বার পার্লামেন্ট নির্বাচনে দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। এখন অনেক যোগ্য প্রার্থী। দল যদি মনোনয়ন দেয় তাহলে আমি নির্বাচন করব।
কক্সবাজার সংরক্ষিত নারী আসন-৮ সংসদ সদস্য কানিজ ফাতেমা জানান, ‘প্রধানমন্ত্রী ভালো করে জানেন কাকে মনোনয়ন দিলে ভালো হবে। এখানে অনেকে নির্বাচন করছে। আমার স্বামী সারা জীবন দলের জন্য কাজ করেছেন।’
কক্সবাজারের সাবেক পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘একসময় এমপি প্রার্থী পাওয়া যেত না। আর এখন অনেক নেতা সৃষ্টি হয়েছে। জনগণ জানে কে নিবেদিত নেতা, কার জনপ্রিয়তা বেশি? জনগণ সবসময় আমাকেই চেয়েছেন। আমি নিজেও জনগণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। তবে দল থেকে যাতে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষে কাজ করব সবাই।’
এদিকে বিএনপি নেতারা বলছেন, এই মুহূর্তে তারা নির্বাচন নিয়ে ভাবছেন না। সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনেই মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। এতে আন্দোলন, সংগঠন ও নির্বাচনী কাজ একইসঙ্গে সংগঠিত হচ্ছে। আন্দোলনে থাকায় সবকটি আসনে একাধিক প্রার্থী থাকলেও দলে বিভেদ নেই। দলীয় হাইকমান্ড যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষে সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করবে।
বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির মৎস্যজীবী সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজল বলেন, ‘এখনও বিএনপি কেন্দ্রীয়ভাবে নির্বাচনের চিন্তা করছে না। আন্দোলন কিভাবে সফল করা যায় সেই চেষ্টায় আছি। আন্দোলনের সফলতা দিনক্ষণ দিয়ে আসে না। স্বৈরাচারি সরকারের পতন হবে একদিন। যদি এই সরকারের পতন হয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার হলে আমরা নির্বাচনে যাব। আমাদের সব প্রস্তুতি আছে নির্বাচনের। আর দল যদি মনোনয়ন দেয় তাহলে নির্বাচন অবশ্যই করব।’
কক্সবাজার জেলা বিএনপি’র সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরীও একইভাবে জানান, ‘কেন্দ্রীয়ভাবে এখনও নির্বাচনের কোনো ভাবনা নাই। এখন একটাই কাজ সরকার পরির্বতন করা। অবৈধ সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামানো। তাদের কিছু গৃহপালিত বিরোধীদল ছাড়া এই মুহূর্তে কোন বিরোধীদল নির্বাচন করবে না।’
বড় ২ দল ছাড়াও নির্বাচনী মাঠে তৎপর রয়েছে বর্তমান সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ইসলামীসহ আরও কয়েকটি দল। নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াত ইতিমধ্যে জেলার ৪টি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নামে পোস্টারিং করে প্রচারণা চালাচ্ছে।
অন্যদিকে, সংসদীয় বিরোধী দল জাতীয় পার্টির নেতারা চেয়ে আছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশনার। কক্সবাজার জেলা জাতীয় পার্টির সহ-সভাপতি ও কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তারেক বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে এখনো কোন দিন-নির্দেশনা আসেনি। তবে দল থেকে বলা হয়েছে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত থাকতে। দেখা যাক কেমন হয়। অপেক্ষায় আছি কেন্দ্রীয় নির্দেশনার।’
উল্লেখ্য, কক্সবাজারে জাতীয় ও আর্ন্তজাতিকভাবে সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ওই নির্বাচনে জেলার ৪ আসনের একটিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, দুইটিতে বিএনপি এবং একটিতে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী জয়লাভ করেছিলেন।
সারাবাংলা/ওএফএইচ/এমও
আওয়ামী লীগ আন্দোলন গণসংযোগ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রচারণা বিএনপি