মঙ্গলবার বিএনএম’র দায়িত্ব নিচ্ছেন মেজর হাফিজ, আসছে আরও চমক
১৯ নভেম্বর ২০২৩ ২১:২৪
ঢাকা: সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আগামী মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম)-এর দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি ছেড়ে আসা ‘মধ্যম সারির’ কয়েকজন নেতার উদ্যোগে গঠিত বিএনএম’র নেতৃত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে রাজনীতির নতুন মেরুকরণের সঙ্গে নিজেকে ‘পুরোমাত্রায়’ যোগ করতে যাচ্ছেন বিএনপির সাবেক এই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী।
বরগুনার বেতাগী থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমানকে আহ্বায়ক করে এবং দলটির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য মেজর (অব.) মো. হানিফকে সদস্য সচিব করে ২০২১ সালের ৭ জুলাই গঠিত হয় বিএনএম।
গত বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) বিএনএম’র জাতীয় কাউন্সিলে আগের ৩১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করে গঠনতন্ত্র মোতাবেক ২০১ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় ও ১৭ সদস্যদের জাতীয় স্থায়ী কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। চেয়ারম্যান ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের পদ খালি রেখে তাৎক্ষণিকভাবে ১০০টি পদ পূরণ করা হয়। ফলে, ওই দিন থেকেই জোর গুঞ্জন ওঠে বিএনএমের দায়িত্ব নিচ্ছেন মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ, বীর বিক্রম। কিন্তু এসব গুঞ্জন নাকোচ করে দেন হাফিজ।
তবে, সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সবকিছু ঠিক থাকলে সোমবার (২০ নভেম্বর) সরকারের ‘উচ্চ পর্যায়ের’ সঙ্গে বৈঠক শেষে মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) বিএনএমের দায়িত্ব বুঝে নেবেন মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ। আর ওই দিন থেকেই বিএনএম’র নির্বাচনি কর্মকাণ্ড পুরোমাত্রায় শুরু হবে। আগ্রহী প্রার্থীদের মধ্যে দলীয় মনোনয়ন ফর্ম বিক্রি ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের নামের তালিকাও ঘোষণা করা হবে মঙ্গলবার।
বিএনএম’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) মো. হানিফ রোববার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে সময় খুব বেশি নেই। আমরা এখনও দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করিনি। আগামী দুয়েকদিনের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনি কর্মকাণ্ড শুরু করব। প্রার্থীদের নামের তালিকাও ঘোষণা করব দুয়েকদিনের মধ্যে। সবকিছু মিডিয়াকে জানিয়েই করা হবে।’
বিএনএম’র চেয়ারম্যান কে হচ্ছেন?- এমন প্রশ্নের জবাবে মো. হানিফ বলেন, ‘দুয়েকদিনের মধ্যে আপনারা সবকিছু জানতে পারবেন।’ তবে, বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি বিএনএম’র দায়িত্ব নিতে যাওয়া মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ, বীর বিক্রম।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, শুধু মেজর হাফিজের দায়িত্ব গ্রহণ নয়, আরও বড় চমক আছে বিএনএম-কে ঘিরে। দলটির প্রার্থীর তালিকায় বিএনপির অন্তত ৪০/৫০ জন নেতার নাম রয়েছে; যারা এখনও বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। দলের দুর্বল নেতৃত্বের প্রতি বিতশ্রদ্ধ, দলের কাছে গুরুত্ব না পাওয়া, ব্যক্তিগত হতাশাসহ নানা কারণে এসব নেতা বিএনপি ছেড়ে বিএনএম’র প্রার্থী হতে যাচ্ছেন।
বিএনএম’র প্রার্থী তালিকায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ এক সদস্যের ছেলের নাম আছে বলে জানা গেছে। সূত্র বলছে, দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বের প্রতি শুরু থেকেই বিতশ্রদ্ধ স্থায়ী কমিটির ওই সদস্য নিজে নির্বাচন না করলেও ছেলের নির্বাচন নিয়ে আপত্তি নেই তার। ছেলের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করতে চান না তিনি। বাবার দল বিএনপি ছেড়ে বিএনএম’র প্রার্থী হতে যাওয়া ওই ব্যক্তির নামের আদ্যাক্ষর ‘ম’। সবকিছু ঠিক থাকলে বাবার আসনে নির্বাচন করবেন তিনি।
বিএনএম’র প্রার্থী তালিকায় থাকা আরেকজন হলেন খোদ বেগম খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠজনের পুত্র। পিতার উত্তারাধিকার সূত্রে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও দলটির বর্তমান অবস্থানের প্রতি আস্থা রাখতে পারছেন না তিনি। এ ব্যক্তিও বিএনএম’র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ‘ত’ আদ্যাক্ষরের এই নেতা বিএনএম’র প্রার্থী হলে বড় ধরনের ধাক্কা খাবে বিএনপি।
বলা হয়ে থাকে, ‘তৃণমূল হচ্ছে বিএনপির প্রাণ’। দলটির তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সীমাহীন ত্যাগ, দলের প্রতি প্রশ্নাতীত আনুগত্য বাংলাদেশের রাজনীতিতে শক্ত অবস্থানে দাঁড় করিয়েছে বিএনপিকে। সেই তৃণমূল থেকেও গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেতা বিএনপি ছেড়ে বিএনএম-এ ভিড়ছেন বলে জানা গেছে। নোঙ্গর প্রতীকে নির্বাচন করার জন্য ইতোমধ্যে এসব নেতা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে মঙ্গলবার নাগাদ এসব নেতা তাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে পারেন।
সূত্রমতে, বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার দুই প্রভাবশালী নেতা রয়েছেন এ তালিকায়। নিজ নিজ নির্বাচনি আসনে এদের প্রভাব এতটাই বেশি যে, যেকোনো দলের প্রতীকে ভোট করে জিতে আসার মতো সক্ষমতা তাদের আছে। সরকার প্রতিশ্রুত ‘সুষ্ঠু’ নির্বাচন হলে বিএনএম’র নোঙ্গর প্রতীকে নির্বাচন করেও জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী তারা। তদুপরি আওয়ামী লীগের সঙ্গে ‘আসন সমোঝতা’ হলে তো কোনো কথা-ই নেই। এমন সমীকরণ সামনে রেখে ‘আ’ আদ্যাক্ষরের বিএনপির সাবেক দুই সংসদ সদস্য বিএনএম’র হয়ে নির্বাচন করতে যাচ্ছেন।
এছাড়া বিএনপির কয়েকজন ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, সাংগঠনিক সম্পাদক, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য, সহ-সম্পাদক, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কয়েকজন শীর্ষ নেতা এবং জেলা পর্যায়ের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা রয়েছেন বিএনএম’র প্রার্থী তালিকায়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মেজর (অব.) মো. হানিফ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের প্রার্থী তালিকা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। দুয়েকদিনের মধ্যে সবকিছু চূড়ান্ত হবে। তখন আপনারা সবকিছু জানতে পারবেন।’
উল্লেখ, বিদ্যমান সংবিধানের আলোকে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থেকে ধারাবাহিক হরতাল-অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। পাশাপাশি দলের অখণ্ডতা রক্ষায় আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন দলটির দায়িত্বশীল নেতারা। ভাঙন রোধে সবরকম চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন তারা। তবে, মেজর হাফিজ বিএনএম’র দায়িত্ব নিলে বিএনপির শেষ রক্ষা হবে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) বিএনপি মেজর (অব.) মো. হানিফ মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ