আ.লীগে একক প্রার্থী মাস্টারপুত্র রাসেল, বিএনপিতে একাধিক
২০ নভেম্বর ২০২৩ ১৩:১১
গাজীপুর: একটি সমৃদ্ধ ও প্রাচীন জনপদের নাম গাজীপুর। এই জেলাটিতে জ্ঞান-বিজ্ঞানে, শিল্প-সাহিত্যে, সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদানকারী বিখ্যাত ব্যক্তিদের জন্ম হয়েছে। ১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে উঠে এই গাজীপুরে। বাংলাদেশকে বিশ্বে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পর যার নাম উচ্চারিত হয় তিনি হলেন বঙ্গতাজ তাজউদ্দিন আহমেদ। তিনি ছিলেন বিরল মেধা ও প্রজ্ঞার অধিকারী এবং প্রচণ্ড ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যে চিহ্নিত ক্ষণজন্মা এক ব্যক্তিত্ব। তাজউদ্দিনের বাইরেও সুস্থ রাজনীতির বাহক, দেশ উন্নয়নে নিবেদিত প্রাণ ও মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখায় যাদের নাম উচ্চারিত হয় তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন- প্রয়াত শামসুল হক, শহিদ আরজ উদ্দিন, শহিদ মোহাম্মদ ময়েজউদ্দিন, গাজী গোলাম মোস্তফা, প্রয়াত হাবিবুল্লাহ, শহিদ হুরমত আলী, শহিদ আহসান উল্লাহ মাস্টার, মো. রহমত আলী ও আ ক ম মোজাম্মেল হক।
পোশাক শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা এই গাজীপুরকে এক কথায় বলা চলে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। এই জেলার পাঁচটি আসনই বর্তমানে আওয়ামী লীগের দখলে। রাজনীতির পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা এই গাজীপুরের রাজনীতি আবর্তিত হয় স্থানীয় জনগণ ও পোশাক শ্রমিকদের নিয়ে। এই জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার পোশাক কারখানা রয়েছে। ফলে এখানে স্থানীয় জনগণের পাশাপাশি শ্রমিকের সংখ্যা বেশি। যে কারণে এই জেলার আসনগুলোতে ভোটার অন্যান্য আসনের চেয়ে বেশি।
আসছে ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে গাজীপুরের আসনগুলোতে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বড় দল এবং দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় এই জেলার কয়েকটি আসনে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাওয়া প্রার্থীর সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে। তবে রাজপথের প্রধান বিরোধীদল বিএনপির প্রার্থীর সংখ্যাও কম নয়। নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাশী অনেকেই মাঠে নেমেছেন। বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি কেন্দ্রেও যোগাযোগের চেষ্টা করছেন তারা। তবে দুই দলেই মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় অনেক জায়গায় অভ্যন্তরীণ বিরোধের খবরও পাওয়া যাচ্ছে।
বর্তমানে সারাদেশে বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় থেমে নেই সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা ও ভোটারের জেলা গাজীপুরের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও। মিছিল-মিটিং, উঠান বৈঠকসহ নিজেকে যোগ্য প্রমাণে উঠে-পড়ে লেগেছেন তারা। এবারও জাতীয় পার্টি মহাজোটে থেকে নির্বাচন করছে। আর রাজপথের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি রয়েছে আন্দোলনে। তবে বিএনপি নির্বাচনে এলে ভোটের হিসাব-নিকাশ কিছুটা হলেও পাল্টে যাবে। কারণ, তারাও দুয়েকটি আসন দখলে ভোটের মাঠে নামবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আসনভিত্তিক পরিক্রমায় এবার সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে সারাবাংলার আয়োজনে থাকছে গাজীপুর-২ আসনের চিত্র।
গাজীপুরে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত গাজীপুর-২ আসন। সদর উপজেলা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের দুই-তৃতীয়াংশ নিয়ে আসনটি গঠিত। এই আসনে তিন বারের নৌকার মাঝি আওয়ামী লীগ নেতা শহিদ আহসানউল্লাহ মাস্টারের ছেলে জাহিদ আহসান রাসেল। তিনি শুধু সংসদ সদস্যই নন, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করছেন। তবে বলতে গেলে নির্বাচনের মাঠে তার দলীয় কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই।
অন্যদিকে, নির্বাচনে গেলে বিএনপির মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে থাকবেন বিগত নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার। পাশাপাশি মনোনয়ন প্রত্যাশায় মাঠে রয়েছেন- গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক সালাউদ্দিন সরকার, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল করিম রনি, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রাকিব উদ্দিন সরকার পাপ্পু ও টঙ্গী থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি সরাফত হোসেন।
বড় দু’টি দলের বাইরেও রয়েছে জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী। গাজীপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি ও সাবেক সচিব এমএম নিয়াজ উদ্দিন মনোনয়ন প্রত্যাশায় মাঠে রয়েছে। সেইসঙ্গে পিছিয়ে নেই জাকের পার্টিও। গাজীপুর মহানগর জাকের পার্টি যুব ফ্রন্টের সভাপতি রাজু আহাম্মেদ মৃধা নির্বাচবি প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
নির্বাচন নিয়ে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি আপামর জনগণের উন্নয়ন করেছি। সরকারি বরাদ্দের পাশাপাশি আমি ব্যক্তিগত তহবিল থেকেও বরাদ্দ দিয়েছি। আমি চাই দেশের মানুষ ভালো থাকুক। মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি, সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সক্রিয় অংশ নিয়েছি। তবে বর্তমান সরকারের উন্নয়নের কথা ভেবে মানুষ আবারও নৌকাকে জয়ী করবে, ইনশাআল্লাহ।’
গাজীপুর মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. বিল্লাল হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘গাজীপুর-২ আসনে জাহিদ আহসান রাসেলের বিকল্প নেই। জেলা আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী করেছেন তিনি। ব্যক্তিগত ও সরকারিভাবে অনেক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করেছেন। তিনি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিপুল পরিমাণ বরাদ্দ দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, স্টেডিয়াম, হাসপাতাল, মসজিদ-মাদরাসা থেকে শুরু করে বিভিন্ন এলাকার উন্নয়নমূলক কাজে অংশ নিয়েছ্নে।’
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার ১৯৮৬ সালে ও ১৯৮৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে গাজীপুর-২ আসন থেকে পর পর দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মনোনয়নে নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি পরাজিত হন। ২০১৮ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি বিএনপির মেয়র প্রার্থী ছিলেন। মনোনয়ন প্রসঙ্গে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে গেলে আমার ইচ্ছে আছে নির্বাচন করার। মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রেও শতভাগ আশাবাদী। তবে দল যাকে মনোনয়ন দেবে আমরা তার হয়েই কাজ করব।’ তবে নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অন্য কোনো প্রার্থী কথা বলতে রাজি হননি।
উল্লেখ্য, এই আসনে মোট ভোটার ৭ লাখ ৪৫ হাজার ৮৪১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩ লাখ ৭৭ হাজার ১৭২ জন এবং নারী ভোটার ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৬৬৯ জন। ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে ২ লাখ ৬৪ হাজার ৭১০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের জাহিদ আহসান রাসেল। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির হাসান উদ্দিন সরকার। তিনি পান ১ লাখ ৩৯ হাজার ২৭৮ ভোট। এর পর ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান রাসেল। সেবার তিনি এই আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান আহসানউল্লাহপুত্র জাহিদ আহসান রাসেল। ওই নির্বাচনে তিনি ৪ লাখ ১২ হাজার ১৪০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির সালাউদ্দিন সরকার পান ১ লাখ ১ হাজার ৪০ ভোট।
সারাবাংলা/টিকে/পিটিএম
গাজীপুর-২ জাহিদ আহসান রাসেল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন মঞ্জুরুল করিম রনি যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. বীরেন শিকদার শহিদ আহসানউল্লাহ মাস্টার সরাফত হোসেন সালাউদ্দিন সরকার হাসান উদ্দিন সরকার