পোশাক খাতের ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির হার শুভঙ্করের ফাঁকি: টিআইবি
২১ নভেম্বর ২০২৩ ২০:২৭
ঢাকা: পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৫২ থেকে ৫৬ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হলেও, বাস্তবে বৃদ্ধির হার ২৫ থেকে ২৮.৮৮ শতাংশ উল্লেখ্য করে, নিম্নতম মজুরি বোর্ডের কাছে নিজেদের বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। নিম্নতম মজুরি বোর্ড চেয়ারম্যানকে পাঠানো চিঠি ও বিশ্লেষণে দেখানো হয়েছে- বাৎসরিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, ডলারের বিনিময়মূল্যের ঊর্ধ্বগতি বিবেচনায় পোশাকশ্রমিকদের মজুরি প্রকৃত অর্থে ৩০ শতাংশও বাড়েনি। পোশাক শ্রমিকদের জীবনমান, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত মানদণ্ড বিবেচনায় নিয়ে প্রস্তাবিত ন্যূনতম মজুরি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) নিম্নতম মজুরি বোর্ডকে প্রেরিত চিঠিতে টিআইবির পক্ষ থেকে বলা হয়, ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর প্রকাশিত নিম্নতম মজুরি কাঠামো অনুযায়ী প্রতিবছর ৫% হারে মূল মজুরি বৃদ্ধির নির্দেশনা রয়েছে। সে হিসেবে এই গ্রেডে মূল মজুরি ৬৩% বাড়ানো হয়েছে বলা হলেও, তা প্রকৃতপক্ষে বেড়েছে ২৮ শতাংশ। গ্রেড চারের ক্ষেত্রে এই বৃদ্ধির হার সাড়ে ২৬ শতাংশ। একইভাবে, গ্রেড তিন, দুই ও এক-এর ক্ষেত্রে মূল মজুরি প্রকৃত বৃদ্ধি পাবে ২৪.১৬%, ২৩.৯৭% এবং ২৪.৭১%। প্রতিবছর মূল মজুরি ৫% হারে বাড়লে ২০২৩ সালে এসে নতুন প্রস্তাবিত গ্রেড পাঁচে ন্যূনতম মোট মজুরি টাকা হওয়ার কথা ৯ হাজার ৬৯৯.১৩ টাকা। নতুন প্রস্তাবিত মজুরি কাঠামো অনুযায়ী এই গ্রেডে সর্বমোট মজুরি প্রস্তাব করা হয়েছে ১২ হাজার ৫০০ টাকা। অর্থাৎ, ৫৬ শতাংশ সর্বমোট মজুরি বাড়ানো হয়েছে বলা হলেও, তা প্রকৃত বিচারে বেড়েছে মাত্র ২৮.৮৮%।
আবার, মূল্যস্ফীতিকে বিবেচনায় মূল মজুরি বৃদ্ধির প্রকৃত হার আরও কম। মূল্যস্ফীতি সমন্বয় করা হলে পঞ্চম গ্রেডে পোশাকশ্রমিকদের ন্যূনতম মূল মজুরি হওয়ার কথা ৫ হাজার ৫৭২.২৬ টাকা, যেখানে নতুন প্রস্তাবিত মূল মজুরি ৬ হাজার ৭০০ টাকা। অর্থাৎ, মূল মজুরি ৬৩% বাড়ানো হচ্ছে বলা হলেও তা মূলত বাড়ছে ২০.২৪%।
সর্বমোট মজুরির হিসাবে দেখা যায়, মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিলে গ্রেড পাঁচে ২০২৩ সালে একজন শ্রমিকের ৯ হাজার ৯১৩.৫০ টাকা পাওয়ার কথা। সর্বমোট মজুরি এই গ্রেডে ৫৬% বাড়িয়ে ১২ হাজার ৫০০ টাকা করা হয়েছে বলা হলেও, মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিলে সর্বমোট মজুরি বৃদ্ধির হার মাত্র ২৬.০৯%।
অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী মূল মজুরি সর্বমোট মজুরির ৬০ শতাংশ ধরা হলেও, বাংলাদেশের প্রস্তাবিত মজুরি কাঠামো অনুযায়ী তা ৫৩ থেকে ৫৬ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে বছর প্রতি ৫% মূল মজুরি বৃদ্ধির সুযোগ রাখা হলেও, সামনের দিনে তুলনামূলক কম মজুরি বাড়বে শ্রমিকদের। যা এই মজুরি কাঠামোর বড় দুর্বলতা।
এমন সব বাস্তবতায় শ্রমিকদের মজুরি ৫৩-৫৬% বাড়ানো হয়েছে- এমন হিসেবকে শুভংকরের ফাঁকি উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘নির্ভরযোগ্য বিভিন্ন গবেষণা ও বিশ্লেষণে আমরা দেখতে পাচ্ছি, সামগ্রিক বিবেচনায় পোশাকশ্রমিকদের নতুন প্রস্তাবিত ন্যূনতম মজুরি জীবনধারণের প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থাকর্তৃক নির্ধারিত মানদন্ড অনুযায়ী নিম্নতম মজুরি নির্ধারণের ক্ষেত্রে শ্রমিক ও তার পরিবারের প্রয়োজন, দেশের সাধারণ মজুরি কাঠামো, জীবনযাপনের ব্যয় এবং এ সংক্রান্ত পরিবর্তন, সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধা, অন্যান্য সংশ্লিষ্ট শ্রমজীবিদের জীবনযাত্রার মান এবং অর্থনৈতিক বিবেচ্য, বিশেষ করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, উৎপাদনশীলতা এবং উচ্চ কর্মসংস্থান তৈরির বিষয়সমূহ মাথায় রাখার কথা বলা হয়েছে। নতুন মজুরি নির্ধারণের ক্ষেত্রে কোনগুলো কি আকারে বিবেচনা করা হয়েছে তা স্পষ্ট নয়।’
সারাবাংলা/জিএস/একে