দেশে খেলাপি ঋণ এক লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা
২১ নভেম্বর ২০২৩ ২৩:০০
ঢাকা : নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পরও ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমছে না। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ১৫ লাখ ৬৫ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছে এক লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা। এটি মোট বিতরণকৃত ঋণের ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। খেলাপি ঋণের এই পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৩ হাজার এক কোটি টাকা বেশি। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা।
অন্যদিকে, চলতি বছরের জুন প্রান্তিক শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ ৪২ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের এ অংক দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ছিল। যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ১০ দশমিক ১১ শতাংশ। যদিও সর্বশেষ তিন মাসে দেশে খেলাপি ঋণ কমেছে ৬৪২ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে।
এ ব্যাপারে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে ঋণ আদায়ের পরিবর্তে ঋণ যাতে দিতে না হয় সেজন্য একের পর এক সুবিধা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে সুদ কমিয়ে পরিশোধেরে মেয়াদ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আবার ঋণের কিস্তির পরিমাণও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও আইএমএফ‘র শর্তের কারণে খেলাপি ঋণ যাতে না বাড়ে সেজন্য নানান ধরনের শর্ত শিথিল করা হয়েছে। তারপরেও খেলাপি ঋণ কমছে না। এতে বোঝা যায়, দেশে খেলাপি ঋণের অবস্থা কতটা ভয়াবহ।’ তিনি বলেন, ‘সঠিকভাবে ঋণের হিসাব করলে দেশে প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেক বেশি হবে।’
অপরদিকে, ডলার সংকটে পড়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের দারস্থ হয় বাংলাদেশ। ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭৬ দশমিক ২৭ মিলিয়ন ডলার বা ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার পেয়েছে দেশ। বাকি ছয় কিস্তির মধ্যে দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের কথা রয়েছে আগামী ডিসেম্বরে। কয়েক ধাপে ঋণ ছাড়ের ক্ষেত্রে সংস্থাটি ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণও ধাপে ধাপে কমিয়ে আনার শর্ত জুড়ে দেয়। আগামী ২০২৬ সালের মধ্যে বেসরকারি খাতে খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের নিচে এবং সরকারি ব্যাংকে ১০ শতাংশের নিচে নামাতে হবে। সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, খেলাপি ঋণের হার ১০ শতাংশের নিচে এলো, অর্থাৎ ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
আইএমএফ’র ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের অন্যতম শর্ত হচ্ছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা। তবে এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২১ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। আইএমএফ’র শর্ত মতে, পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠন করা ঋণ, সন্দেহজনক ঋণ ও আদালতের আদেশে খেলাপি স্থগিতাদেশ থাকা ঋণকেও খেলাপি দেখাতে হবে। সেক্ষেত্রে আইএমএফ’র হিসাবে খেলাপি দাঁড়াবে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি।
সারাবাংলা/জিএস/পিটিএম