নির্বাচনে যাচ্ছে সমমনা ইসলামী ৬ দল!
২৪ নভেম্বর ২০২৩ ০১:১৭
ঢাকা: বিদ্যমান সংবিধানের আলোকে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে একে একে সরে আসছে রাজনৈতিক দলগুলো। ভোটের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো তাদের আগের অবস্থান পরিবর্তন করে নির্বাচনি ট্রেনে উঠে পড়ছে। নিজ নিজ প্ল্যাটফর্ম থেকে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিচ্ছে তারা। সবশেষ এ তালিকায় যোগ হতে যাচ্ছে ‘সমমনা ইসলামী দলসমূহ’-এর ব্যানারে ধর্মভিত্তিক ছয়টি রাজনৈতিক দল। দলগুলোর নেতারা হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত।
‘সমমনা ইসলামী দলসমূহে’র শরিকরা হলো— মাওলানা হাফেজ আতাউল্লাহ ইবনে হাফেজ্জী ও মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন (বটগাছ), বদরুদ্দোজা আহমেদ সুজা ও কাজী আবুল খায়েরের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (হারিকেন), মাওলানা জিয়া উদ্দীন ও মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দীর নেতৃত্বাধীন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ (খেজুর গাছ), মাওলানা মুহাম্মদ ইসমাইল নূরপুরী ও মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস (রিকশা), মাওলানা আব্দুল বাছিদ আজাদ ও ড. আহমদ আব্দুল কাদেরের নেতৃত্বাধীন খেলাফত মজলিস (দেয়াল ঘড়ি) এবং মাওলানা হারুন ইজহার ও আজিজুল হক ইসলামাবাদীর নেতৃত্বাধীন নেজামে ইসলাম পার্টি।
এ ছয়টি দলের মধ্যে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি ছাড়া বাকি সবার-ই নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন আছে। নির্বাচন কমিশনে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নিবন্ধন নম্বর ২০, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের ২১, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের ২৩, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ৩৩ এবং খেলাফত মজলিসের নিবন্ধন নম্বর ৩৮। সুতরাং নির্বাচনে গেলে নিজেদের প্রতীক ও নাম ব্যবহার করেই ভোট করতে পারবে এসব দল।
এদিকে নির্বাচনে যাওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) রাতে গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের সভাপতি মাওলানা হাফেজ আতাউল্লাহ ইবনে হাফেজ্জী ও মহাসচিব মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের মহাসচিব কাজী আবুল খায়ের এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির শাহিনুর পাশা চৌধুরী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এই সৌজন্য সাক্ষাতের আগেই নির্বাচনে যাওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেন সমমনা ইসলামী দলসমূহের নেতারা। গত মঙ্গলবার কামরাঙ্গীর চরের একটি মাদরাসায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেন তারা।
ওই বৈঠকে মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের মহাসচিব কাজী আবুল খায়ের, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা আজীজুল হক ইসলামাবাদী ও খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইনসহ জোটের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা জানান, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না সমমনা ইসলামী দলসমূহ।
তবে ওই দিনের বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্রে জানা যায়, খেলাফত মজলিস ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করলেও খেলাফত আন্দোলন, মুসলিম লীগ ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতারা নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন।
সেদিন রাতে সারাবাংলার সঙ্গে আলাপকালে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আমহদ আব্দুল কাদের বলেন, ‘জোটগতভাবে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি নির্বাচনে না যাওয়ার। তবে জোটের কোনো দল যদি ইনডিভিজুয়ালি নির্বাচনে যেতে চায়, সেটা তাদের ব্যাপার।’
‘সামনে আমরা আরও কয়েকটি বৈঠক করব। সেসব বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে,’— বলেছিলেন ড. আহমদ আব্দুল কাদের।
এদিকে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে আতাউল্লাহ হাফেজ্জী সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করলেও এখন পর্যন্ত আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিইনি। দলীয় ফোরামে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) খেলাফত মজলিস ও শনিবার (২৫ নভেম্বর) বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন দলীয় ফোরামে বৈঠক করবে। সেসব বৈঠক থেকে দলগুলো নির্বাচনে যাওয়া কিংবা না যাওয়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। এরপর রোববার (২৬ নভেম্বর) নাগাদ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করবে ‘সমমনা ইসলামী দলসমূহ’।
সূত্রমতে, কারাবন্দি মামুনুল হকের মুক্তির শর্তে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেতে চায় বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। অন্যদিকে নেতাদের সব মামলা প্রত্যাহারের শর্তে নির্বাচনে যেতে রাজি খেলাফত মজলিস। আবার অন্তত দুটি আসন ছেড়ে দিলে নির্বাচনে যেতে প্রস্তুত জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম। আর পাঠ্যবই প্রয়োজনীয় সংশোধনসহ কিছু শরিয়া বিষয়ে সরকার নমনীয় মনোভাব দেখালে নির্বাচনে যেতে আপত্তি নেই বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের। অর্থাৎ প্রতিটি দলই আলাদা আলাদা শর্তসাপেক্ষে নির্বাচনে যেতে চায়।
সবকিছু ঠিক থাকলে ২৬ নভেম্বরের মধ্যে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনের মাঠে নামবেন এসব ইসলামী দলের নেতারা।
সারাবাংলা/এজেড/টিআর
ইসলামী দল খেলাফত মজলিস জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস বাংলাদেশ মুসলিম লীগ সমমনা ইসলামী দল সমমনা ইসলামী দলসমূহ