নিবন্ধিত ২৭টি দল ভোটে যাচ্ছে, ১২টি যাচ্ছে না, ৫টি দোদুল্যমান
২৫ নভেম্বর ২০২৩ ২১:৫০
ঢাকা: ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ (জাপা) নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত অন্তত ২৭টি রাজনৈতিক দল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। অন্যদিকে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং রাজনীতিতে ধীরে ধীরে প্রভাবশালী হয়ে ওঠা চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ অন্তত ১২টি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে যাচ্ছে না।
ইসিতে নিবন্ধিত বাকি পাঁচটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনের ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। আগামী মঙ্গলবার (২৭ নভেম্বর) নাগাদ এ পাঁচটি দল নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানা গেছে।
নির্বাচন কমিশনে (ইসি) এই মুহূর্তে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৪৪টি। নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া ২৭টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে অন্তত ১২টি দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক। অন্যদিকে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকা ১২টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে অন্তত আটটি বিএনপির নেতৃত্বে যুগপৎ আন্দোলনে আছে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (বাংলাদেশ জাসদ), বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)— এই চারটি দল কোনো জোটেই নাই। নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত তাদের নিজস্ব।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটে না থাকা সত্ত্বেও নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা অন্তত ১৫টি। এসব দলের নেতারা বলছেন, বিদেশি আগ্রাসন থেকে দেশ রক্ষার তাগিদে এবং সম্ভাব্য সংঘাত থেকে দেশকে বাঁচাতে ভোটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তারা বলছেন, বিদ্যমান সংকট নিরসনে ভোটের কোনো বিকল্প নেই। নানা অপ্রাপ্তি, ক্ষোভ ও হতাশা থাকলেও জাতির প্রয়োজনে দলীয় স্বার্থকে বড় করে না দেখে দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখছেন বলেই নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ভোটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া গণফ্রন্টের চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিদেশি শক্তিগুলো দেশটাকে ধ্বংস করতে চাচ্ছে। আর আমাদের দেশের একটি বড় শক্তি তাদের ইন্ধন জোগাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা বিশ্বাস করি, ভোটের পর দেশে স্থিতিশীল অবস্থা ফিরে আসবে।’
অন্যদিকে ভোটে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশের মহাসচিব মো. রেহান আফজাল (রাহবার) সারাবাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচনে যাওয়ার পূর্ব শর্ত হিসেবে জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া এবং ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দিয়ে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নির্বাচন আয়োজনসহ আমরা চারটি প্রস্তাব দিয়েছিলাম। আমাদের একটি প্রস্তাবও আমলে নেওয়া হয়নি। সে কারণে আমরা নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
অন্যদিকে এখনো সিদ্ধান্ত নিতে না পারা বাংলাদেশ মুসলিম লীগের মহাসচিব কাজী আবুল খায়ের সারাবাংলাকে বলেন, “আমাদের একটি জোট আছে ‘সমমনা ইসলামী দলসমূহ’ নামে। এই জোটের সঙ্গে আরেক দফা মিটিং করে আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব। তাছাড়া আমার দলের চেয়ারম্যান বদরুদ্দোজা সুজা ভীষণ অসুস্থ। উনি সিলেটে আছেন। আগামীকাল আকাশপথে তাকে ঢাকায় আনার ব্যবস্থা হচ্ছে। দলের জরুরি বৈঠকে তিনি যে সিদ্ধান্ত দেবেন, সেটাই আমরা মেনে নেব।’
যে ২৭টি দল ভোটে যাচ্ছে
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও শেখ শহীদুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (নিবন্ধন নম্বর ২, প্রতীক বাইসাইকেল), দিলীপ বড়ুয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (নিবন্ধন নম্বর ৩, প্রতীক চাকা), বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম ও হাবিবুর রহমান তালুকদার বীর প্রতীকের নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ (নিবন্ধন নম্বর ৪, প্রতীক গামছা) শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ (নিবন্ধন নম্বর ৬, প্রতীক নৌকা), ব্যারিস্টার মো. আরশ আলী ও ডা. শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণতন্ত্রী পার্টি (নিবন্ধন নম্বর ৮, প্রতীক কবুতর), আইভি আহমেদ ও মোহাম্মদ আলী ফারুকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (নিবন্ধন নম্বর ৯, প্রতীক কুঁড়েঘর), রাশেদ খান মেনন ও ফজলে হোসেন বাদশার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি (নিবন্ধন নম্বর ১০, প্রতীক হাতুড়ি), অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও মেজর (অব.) আবদুল মান্নানের নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারা বাংলাদেশ (নিবন্ধন নম্বর ১১, প্রতীক কুলা), গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জি এম কাদের) ও মো. মুজিবুল হকের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (নিবন্ধন নম্বর ১২, প্রতীক লাঙ্গল), হাসানুল হক ইনু ও শিরীন আখতারের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) (নিবন্ধন নম্বর ১৩, প্রতীক মশাল), মোস্তফা আমীর ফয়সল ও এজাজুর রসুলের নেতৃত্বাধীন জাকের পার্টি (নিবন্ধন নম্বর ১৬, প্রতীক গোলাপ ফুল), সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী ও ড. সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন (নিবন্ধন নম্বর ১৯, প্রতীক ফুলের মালা), শেখ ছালাউদ্দিন ছালু ও মো. ইদ্রিস চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (নিবন্ধন নম্বর ২২, প্রতীক আম)।
এই তালিকায় আরও আছে মো. জাকির হোসেন ও আহমেদ আলী শেখের নেতৃত্বাধীন গণফ্রন্ট (নিবন্ধন নম্বর ২৫, প্রতীক মাছ), জেবেল রহমান গাণি ও এম গোলাম মোস্তফা ভুইয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি- বাংলাদেশ ন্যাপ (নিবন্ধন নম্বর ২৭, প্রতীক গাভী), অধ্যাপক ডা. এম এ মুকিত ও জাফর আহমেদ জয়ের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (নিবন্ধন নম্বর ২৮, প্রতীক কাঁঠাল), সৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদী ও আবুল বাশার মুহাম্মদ জয়নুল আবেদীনের নেতৃত্বাধীন ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ (নিবন্ধন নম্বর ৩০, প্রতীক চেয়ার), মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক ও আবদুল আউয়াল মামুনের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি (নিবন্ধন নম্বর ৩১, প্রতীক হাতঘড়ি), হাফেজ মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী ও মুফতি ফয়জুল্লাহর নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোট (নিবন্ধন নম্বর ৩২, প্রতীক মিনার), মাওলানা এম এ মতিন ও অধ্যক্ষ স উ ম আবদুস সামাদের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট (নিবন্ধন নম্বর ৩৫, প্রতীক মোমবাতি), অ্যাডভোকেট শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী ও মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (নিবন্ধন নম্বর ৪০, প্রতীক হাতের পাঞ্জা), আবু লায়েস মুন্না ও মো. শাহজামাল আমিরুলের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (নিবন্ধন নম্বর ৪১, প্রতীক ছড়ি), এস এম আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ (নিবন্ধন নম্বর ৪২, প্রতীক টেলিভিশন), অ্যাডভোকেট কাজী রেজাউল হোসেন ও অ্যাডভোকেট মো. ইয়ারুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ কংগ্রেস (নিবন্ধন নম্বর ৪৪, প্রতীক ডাব), শমসের মবিন চৌধুরী ও তৈমুর আলম খন্দকারের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল বিএনপি (নিবন্ধন নম্বর ৪৫, প্রতীক সোনালী আঁশ), শাহ মো. আবু জাফর ও ড. মো. শাজহাজানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম (নিবন্ধন নম্বর ৪৮, প্রতীক নোঙ্গর), শাহাজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ ও মো. আব্দুল আজিজ সরকারের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (নিবন্ধন নম্বর ৪৯, প্রতীক একতারা)।
যে ১২টি দল ভোটে যাচ্ছে না
ড. অলি আহমদ বীর বিক্রম ও ড. রেদোয়ান আহমেদের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটি পার্টি (নিবন্ধন নম্বর ১, প্রতীক ছাতা), মোহাম্মদ শাহ আলম ও রুহিন হোসেন প্রিন্সের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি (নিবন্ধন নম্বর ৫, প্রতীক কাস্তে), খালেদা জিয়া ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বাধীন বিএনপি (নিবন্ধন নম্বর ৭, প্রতীক ধানের শীষ), আ স ম আবদুর রব ও শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি (নিবন্ধন নম্বর ১৫, প্রতীক তারা), কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ (নিবন্ধন নম্বর ১৭, প্রতীক মই), ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (নিবন্ধন নম্বর ১৮, প্রতীক গরুর গাড়ি)।
নির্বাচনে না যাওয়ার তালিকায় আরও আছে মাওলানা শায়খ জিয়া উদ্দিন ও মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দীর নেতৃত্বাধীন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ (নিবন্ধন নম্বর ২৩, প্রতীক খেজুর গাছ), মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম ও ইউনুস আহম্মেদের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (নিবন্ধন নম্বর ৩৪, প্রতীক হাতপাখা), সাইফুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি (নিবন্ধন নম্বর ৩৭, প্রতীক কোদাল), ববি হাজ্জাজ ও হুমায়ুন পারভেজ খানের নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (নিবন্ধন নম্বর ৪৩, প্রতীক সিংহ), ইমাম আবু হায়াত ও মো. রেহান আফজালের (রাহবার) ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ (নিবন্ধন নম্বর ৪৬, প্রতীক আপেল), শরীফ নুরুল আম্বিয়া ও নাজমুল হক প্রধানের নেৃতত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (নিবন্ধন নম্বর ৪৭, প্রতীক মোটর গাড়ি)।
যে ৫টি দল দোদুল্যমান
মাওলানা হাফেজ আতাউল্লাহ ইবনে হাফেজ্জী ও মাওলানা হাবীবুল্লাহ মিয়াজীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন (নিবন্ধন নম্বর ২০, প্রতীক বটগাছ), বদরুদ্দোজ্জা আহমেদ সুজা ও কাজী আবুল খায়েরের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (নিবন্ধন নম্বর ২১, প্রতীক হারিকেন), ড. কামাল হোসেন ও ডা. মো. মিজানুর রহমানের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম (নিবন্ধন নম্বর ২৪, প্রতীক উদীয়মান সূর্য), মাওলানা মুহাম্মদ ইসমাঈল নূরপুরী ও মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস (নিবন্ধন নম্বর ৩৩, প্রতীক রিকশা), মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ ও ড. আহমদ আবদুল কাদেরের নেতৃত্বাধীন খেলাফত মজলিস (নিবন্ধন নম্বর ৩৮, প্রতীক দেয়াল ঘড়ি)।
সারাবাংলা/এজেড/এমও