যেসব কারণে রোজা ভাঙে ও মাকরুহ হয়
১৯ মে ২০১৮ ১৪:৩৬
।। জহির উদ্দিন বাবর।।
ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ রোজা। প্রত্যেক সুস্থ-সবল মানুষের ওপর রোজা ফরজ। মোটাদাগে খাদ্য, পানীয় ও জৈবিক চাহিদা পূরণ থেকে বিরত থাকার নাম রোজা। তবে এর বেশ কিছু বিধিবিধান রয়েছে। এগুলো রোজার প্রয়োজনীয় মাসয়ালা-মাসায়েল হিসেবে পরিচিত। যারা রোজা রাখেন তাদের প্রত্যেককে এই মাসয়ালাগুলো সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা থাকা চাই। অনেক সময় প্রয়োজনীয় বিধানগুলো জানা না থাকার কারণে সারাদিন উপোস থাকার পরও রোজা হয় না। এ কারণে শরিয়তে প্রয়োজনীয় জ্ঞান শিক্ষা করাকে ফরজ করা হয়েছে। বিশুদ্ধভাবে রোজা পালনের জন্য যতটুকু ইলম বা জ্ঞান দরকার ধর্মীয় দৃষ্টিতে তা ফরজ বা অবশ্যই পালনীয়। তাই আসুন রোজার প্রয়োজনীয় কিছু বিধান জেনে নিই:
রোজা ভাঙে যেসব কারণে:
১. ইচ্ছাকৃত কিছু খেলে বা পান করলে
২. স্ত্রী সহবাস করলে
৩. কোনো বৈধ কাজ করার পর রোজা ভেঙে গেছে মনে করে ইচ্ছাকৃত খেলে
৪. কানে বা নাকে ওষুধ ঢোকালে
৫. ইচ্ছা করে মুখ ভরে বমি করলে অথবা অল্প বমি আসার পর তা গিলে ফেললে
৬. কুলি করার সময় গলার ভেতরে পানি চলে গেলে
৭. কামভাবে কাউকে স্পর্শ করার পর বীর্যপাত হলে
৮. খাদ্য না এমন বস্তু খেলে যেমন: কাঠ, কয়লা, লোহা ইত্যাদি
৯. ধূমপান করলে
১০. আগরবাতি ইত্যাদির ধোঁয়া ইচ্ছা করে নাকে ঢোকালে
১১. সময় আছে মনে করে সুবহে সাদিকের পর সেহেরি খেলে
১২. ইফতারের সময় হয়ে গেছে মনে করে সময়ের আগেই ইফতার করে ফেললে
১৩. দাঁত দিয়ে বেশি পরিমাণ রক্ত বেরিয়ে তা ভেতরে চলে গেলে
১৪. জোর করে কেউ রোজাদারের গলার ভেতরে কিছু ঢুকিয়ে দিলে
১৫. হস্তমৈথুন দ্বারা বীর্যপাত ঘটালে
১৬. মুখে পান রেখে ঘুমালে এবং সে অবস্থায় সেহেরির সময় চলে গেলে
১৭. রোজার নিয়ত না করলে
১৮. কানের ভেতরে তেল ঢোকালে
রোজা মাকরুহ হয় যেসব কারণে
১. বিনা প্রয়োজনে কোনো কিছু চিবালে
২. মাজন, কয়লা, গুল বা পেস্ট দিয়ে দাঁত মাজলে
৩. রাতে ফরজ হওয়া গোসলসহ সারাদিন অতিবাহিত করলে।
৪. রোজা অবস্থায় রক্তদান করলে।
৬. পরনিন্দা, কুৎসা, অনর্থক কথা ও মিথ্যা বললে।
৭. ঝগড়া, ফাসাদ ও গালমন্দ করলে।
৮. ক্ষুধা ও পিপাসার কারণে অস্থিরতা প্রকাশ করলে।
৯. মুখে থুথু জমা করে গিলে ফেললে।
১০. স্ত্রীকে কামভাবের সঙ্গে স্পর্শ করলে।
১১. মুখে কিছু চিবিয়ে শিশুকে খাওয়ালে।
১২. বুটের কণার চেয়ে ছোট কিছু দাঁতের ফাঁক থেকে বের করে গিলে ফেললে।
যেসব কারণে রোজা ভাঙে না
১. ভুলে কিছু খেলে বা পান করলে
২. অনিচ্ছাকৃত বমি করলে
৩. রোজা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে
৪. অসুস্থতাজনিত কারণে বীর্যপাত হলে
৫. স্বামী-স্ত্রী চুম্বন ও আলিঙ্গন করলে
জরুরি কথা
কেউ ইচ্ছাকৃত রোজা ছেড়ে দিলে তাকে একাধারে ৬০টি রোজা রাখতে হবে। মাঝে একটি রোজা ছুটে গেলে আবার ৬০টি রোজা রাখতে হবে। তবে কেউ ৬০টি রোজা একাধারে রাখতে সক্ষম না হলে ৬০ জন মিসকিনকে তৃপ্তি সহকারে দুই বেলা খাওয়াতে হবে, অথবা একজন মিসকিনকে ৬০ দিন দুই বেলা করে খাওয়াতে হবে। রোজা অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো কিছু খেলে অথবা পান করলে তার ওপর রোজার কাজা ও কাফফারা উভয়ই ওয়াজিব হবে। রোজা অবস্থায় স্বামী-স্ত্রীর ইচ্ছাকৃতভাবে দৈহিক মিলন ঘটলে তাদের ওপর রোজার কাজা ও কাফফারা উভয়ই ওয়াজিব হবে।
রোজার মৌখিক নিয়ত কি জরুরি?
আমাদের দেশে রোজার মৌখিক একটি নিয়তের প্রচলন আছে। অনেক বইপুস্তকে বা ক্যালেন্ডারে নিয়তটি দেয়া থাকে। ‘আসুমা গাদাম মিন…’ এই আরবি নিয়তটি না করলে অনেকে মনে করেন রোজা হবে না। আবার অনেকে মনে করেন কমপক্ষে ‘আগামীকাল রোজা রাখছি’ এটা অন্তত বলতে হবে। মূলত এটা ভুল ধারণা। রোজার কোনো মৌখিক নিয়ত কোরআন-হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়। সেহেরি খাওয়া এবং মনে মনে সংকল্প করায় যথেষ্ট।
সারাবাংলা/জেডএফ
লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম