টাঙ্গাইলের ফারুক হত্যা: মুক্তির জামিন বাতিল, আত্মসমর্পণের আদেশ
২৬ নভেম্বর ২০২৩ ২১:৩৯
ঢাকা: টাঙ্গাইলের আওয়ামী লীগ নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তির জামিন প্রত্যাহার করে বাতিল (রিকল) করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তাকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া তথ্য গোপন করায় আসামিপক্ষের দুই আইনজীবীকে সতর্ক করেছেন হাইকোর্ট।
রোববার (২৭ নভেম্বর) বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান ও বিচারপতি ফাহমিদা কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে আসামি পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আইনজীবী এম এ মুমতাকিম ও মো. জাকারিয়া হাবিব। রাষ্ট্রপক্ষের ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুর রহমান সিদ্দিকী ও মো. মজিবুর রহমান মুজিব।
এর আগে গত সোমবার (২০ নভেম্বর) একই বেঞ্চ থেকে ছয় মাসের জামিন পান সহিদুর রহমান খান মুক্তি। এরপর বুধবার (২২ নভেম্বর) দুপুরে টাঙ্গাইল কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে শহরের কলেজপাড়ার বাসায় ফেরেন তিনি।
সহিদুর রহমান খান মুক্তি টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য আতাউর রহমান খানের ছেলে। তার ভাই আমানুর রহমান খান ওরফে রানা ওই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য।
আদেশের তথ্য জানিয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক সারাবাংলাকে বলেন, টাঙ্গাইলের মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যা মামলার অন্যতম আসামি সহিদুর রহমান খান মুক্তিকে গত ২০ নভেম্বর দেওয়া জামিন বাতিল করে তাকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে আপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী ছয় মাস পূর্ণ হওয়ার আগ পর্যন্ত তার জামিন বিষয়ে রুল শুনানি করা যাবে না বলেও আদেশ দিয়েছেন আদালত। আসামিপক্ষের দুই আইনজীবী এম এ মুমতাকিম ও মো. জাকারিয়া হাবিবকে তথ্য গোপন ও নোটিশ গরমিলের জন্য জন্য সতর্ক করেছেন আদালত।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, গণমাধ্যমে সহিদুর রহমান খান মুক্তির জামিনের বিষয়ে তথ্য গোপনের অভিযোগ ওঠায় কোর্ট সুয়োমুটো (স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে) বিষয়টি পুনরায় কজ লিস্টে আদেশের জন্য আনেন এবং এ আদেশ দেন।
এর আগে গত ২৭ আগস্ট মুক্তির জামিন আবেদন খারিজের আদেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে ছয় মাসের মধ্যে এ মামলা অধস্তন আদালতকে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেওয়া হয়।
তারও আগে গত ১৯ জুলাই ফারুক হত্যা মামলায় টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান ওরফে মুক্তির জামিন আবেদন খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তথ্য গোপন করে জামিন আবেদন করায় তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন আদালত। বিচারপতি মো. বদরুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি রাতে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদের গুলিবিদ্ধ মরদেহ তার কলেজপাড়া এলাকার বাসার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিন দিন পর তার স্ত্রী নাহার আহমদ বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন। পরে গোয়েন্দা পুলিশ রাজা ও মোহাম্মদ আলী নামে দুজনকে ২০১৪ সালের আগস্ট মাসে গ্রেফতার করে।
আদালতে এ দুজনের দেওয়া স্বীকারোক্তিতে তৎকালীন সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান, তার তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার তৎকালীন মেয়র সহিদুর রহমান খান, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান ও ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সানিয়াত খানের জড়িত থাকার বিষয়টি উঠে আসে। এরপর অভিযুক্ত ব্যক্তিরা আত্মগোপনে চলে যান।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে গোয়েন্দা পুলিশ আদালতে আমানুর রহমান খান, তার আরও তিন ভাইসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। আমানুর রহমান খান রানা ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে আত্মসমর্পণ করেন। প্রায় তিন বছর কারাভোগের তিনি জামিনে মুক্ত পান। তার অপর দুই ভাই পলাতক রয়েছেন।
সারাবাংলা/কেআইএফ/টিআর
বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যা মুক্তির জামিন বাতিল সহিদুর রহমান খান মুক্তি