জামায়াত নেতা শাহজাহানের জামিন আপিলে বহাল, মুক্তিতে বাধা নেই
২৭ নভেম্বর ২০২৩ ২১:৪৭
ঢাকা: জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরীকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। ফলে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে ২০২১ সালে হেফাজতে ইসলামের সহিংসতায় প্ররোচনা ও ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগের মামলায় সাতকানিয়ার সাবেক এ সংসদ সদস্যের মুক্তিতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা।
শাহজাহান চৌধুরীর জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন খারিজ করে সোমবার (২৭ নভেম্বর) ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বোরহান উদ্দিনর নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন। শাহজাহান চৌধুরীর পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অনিক আর হক। তার সঙ্গে ছিলেন রেদওয়ান আহমেদ রানজীব ও রুকন উদ্দিন মোহাম্মদ ফারুক।
এর আগে গত ২২ অক্টোবর হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ শাহজাহান চৌধুরীকে জামিন দেন। পরে জামিন স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
গত ৫ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন শুনানি নিয়ে চেম্বার জজ আদালত শাহজাহান চৌধুরীর জামিন স্থগিত করেন। একই সঙ্গে এ বিষয়ে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেন। তারই ধারাবাহিকতায় আজ আপিল বিভাগে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
শাহজাহান চৌধুরীর আইনজীবী রুকন উদ্দিন মোহাম্মদ ফারুক জানান, ২০২১ সালের ১৪ মে চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির ও সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয়। ওই বছরের ১৪ মে গভীর রাতে সাতকানিয়া পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ছমদর পাড়ার বাসভবন থেকে তাকে আটক করা হয়।
এরপর ২০২১ সালের ২৬ মার্চ হেফাজতের সহিংসতায় ইন্ধন দেওয়ার মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। এবং ১৫ মে দুপুরে শাহজাহান চৌধুরীকে চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট শাহরিয়ার ইকবালের আদালতে হাজির করলে আদালত আসামির তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
২০২১ সালের ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনকে ঘিরে ঢাকার বায়তুল মোকাররমে মুসল্লিদের সঙ্গে সংঘর্ষের জেরে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও ভাঙচুর ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে পুলিশের গুলিতে চারজন নিহত হয়।
ওই ঘটনায় হেফাজতের তৎকালীন আমির জুনায়েদ বাবুনগরীসহ জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীদের আসামি করে হাটহাজারী থানায় পৃথক পৃথক ১০টি মামলা দায়ের করে পুলিশ।
আইনজীবী রুকন উদ্দিন মোহাম্মদ ফারুক আরও জানান, শাহজাহান চৌধুরীকে সরাসরি কোন মামলার আসামি করা হয়নি। তবে তাকে সবকটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো (শ্যোন অ্যারেস্ট) হয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির ও সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরীকে বার বার গ্রেফতার (শ্যোন অ্যারেস্ট) করা হয়েছে। আমরা এ সংক্রান্ত বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট বিভাগের সুনিদিষ্ট গাইড লাইন দেখিয়ে তাকে যেন কারাগারের সামনে থেকে গ্রেফতার দেখানো না হয়, তার নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদন করেছিলাম। ওই রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট শাহজাহান চৌধুরীকে কারাগারের গেট থেকে যেন আর গ্রেফতার না করে সে সংক্রান্ত আদেশ দেন। কিন্তু ওই আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করেন। ওই আবেদন শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া তাকে গ্রেফতার করা যাবে না, সংক্রান্ত আদেশটি মোডিফাই করে আপিলটি নিষ্পত্তি করে দেন।
তিনি আরও বলেন, জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী ২০২১ সালের ১৪ মে গ্রেফতার হওয়ার পর তিনি এক মামলায় জামিন নেন। কারাগার থেকে বের হওয়ার পূর্বে তার বিরুদ্ধে আবারও মামলা দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাকে যেন আর গ্রেফতার করা না দেখানো হয় এ জন্য আইনজীবী শাহদাত হোসেন চৌধুরী হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন।
ওই রিট নিষ্পত্তি হয়েছে। এতে হাইকোর্ট নির্দেশনা দেন যে, শাহজাহান চৌধুরীর বিরুদ্ধে যদি আমলযোগ্য (ওয়ারেন্ট বা এফআইআরভুক্ত) কোন মামলা না থাকে তাহলে তাকে যেন গ্রেফতার করা না হয়।
আইনজীবী বলেন, হাইকোর্টের এ নির্দেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আপিল বিভাগে আপিল করলে আপিল বিভাগের নির্দেশনায় বলা হয়, শাহজাহান চৌধুরীকে কারাগারের সামনে থেকে কোন অবস্থায় গ্রেফতার করা যাবে না এবং হয়রানি করা যাবে না। আপিল বিভাগের এ নির্দেশনা চট্টগ্রাম কারাগারে পৌঁছালে তা বাস্তবায়ন না করে তড়িঘড়ি করে আরেকটি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানোর জন্য আবেদন করা হয়। নামবিহীন একটি মামলায় তাকে আটক রাখার জন্য আবেদন দাখিল করা হয়। যা উচ্চ আদালতের উক্ত আদেশের লঙ্ঘন। তবে উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে চট্টগ্রামে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেট আদালত তাকে আবারও গ্রেফতার দেখান।
চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমির ও কেন্দ্রীয় জামায়াতের মজলিশে সূরার সদস্য শাহজাহান চৌধুরী ১৯৯১ ও ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
সারাবাংলা/কেআইএফ/এনইউ