Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সব আসনে নৌকা: ‘সমমনা ইসলামী দলসমূহে’র ইউটার্ন

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৯ নভেম্বর ২০২৩ ১০:৫০

ঢাকা: সব আসনে নৌকার প্রার্থী দেখার পর নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে ইউটার্ন নিয়েছে ‘সমমনা ইসলামী দলমূহে’র পাঁচ শরিক। তবে জোটের অন্যতম শীর্ষ দল মাওলানা হাফেজ আতাউল্লাহ ইবনে হাফেজ্জী ও মাওলানা হাবীবুল্লাহ মিয়াজীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন (নিবন্ধন নম্বর ২০, প্রতীক বটগাছ) বিদ্যামান সংবিধানের আলোকেই নির্বাচনে যাচ্ছে।

এরই মধ্যে দলটির পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সারাদেশে ৪০টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তারা। ঢাকা-২ ও ঢাকা- ৭ আসনসহ ঢাকায় অন্তত চারটি আসনে প্রার্থী দেবে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন। ঢাকা-২ আসনে বটগাছ প্রতীকে নির্বাচন করবেন দলটির আমির মাওলানা হাফেজ আতাউল্লাহ ইবনে হাফেজ্জী। এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম।

বিজ্ঞাপন

সব আসেন নৌকার প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও নির্বাচনে যাওয়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগরের আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আসন ভাগাভাগির শর্তে আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি ওপর বিশ্বাস রেখে নির্বাচনে যাচ্ছি। ভোট সুষ্ঠু হলে আমাদের একাধিক প্রার্থী জিতে আসবে বলে বিশ্বাস করি।’

আরও পড়ুন- নির্বাচনে যাচ্ছে সমমনা ইসলামী ৬ দল!

নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থেকে বিএনপি ও তাদের মিত্ররা ‘সহিংস’ আন্দোলনের পথ বেছে নিলে ‘সমমনা ইসলামী দলসমূহে’র ব্যানারে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন (বটগাছ), বদরুদ্দোজা আহমেদ সুজা ও কাজী আবুল খায়েরের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (হারিকেন), মাওলানা জিয়া উদ্দীন ও মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দীর নেতৃত্বাধীন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ (খেজুর গাছ), মাওলানা মুহাম্মদ ইসমাইল নূরপুরী ও মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস (রিকশা), মাওলানা আব্দুল বাছিদ আজাদ ও ড. আহমদ আব্দুল কাদেরের নেতৃত্বাধীন খেলাফত মজলিস (দেয়াল ঘড়ি) এবং মাওলানা হারুন ইজহার ও আজিজুল হক ইসলামাবাদীর নেতৃত্বাধীন নেজামে ইসলাম পার্টি নির্বাচনে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে।

বিজ্ঞাপন

এ লক্ষ্যে গত বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) রাতে গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের সভাপতি মাওলানা হাফেজ আতাউল্লাহ ইবনে হাফেজ্জী ও মহাসচিব মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের মহাসচিব কাজী আবুল খায়ের এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সিনিয়র সহসভাপতি অ্যাডভোকেট শাহিনুর পাশা চৌধুরী।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের পক্ষ থেকে দলটির মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দীর জন্য নীলফামারী-১, সিনিয়র সহসভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শাহিনুর পাশা চৌধুরীর জন্য সুনামগঞ্জ-৩ এবং সহসভাপতি ওবায়দুল্লাহ ফারুকের জন্য সিলেট-৫ আসন চাওয়া হয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনে শাহিনুর পাশা চৌধুরী এবং ওবায়দুল্লাহ ফারুক ধানের শীষ প্রতীকে সুনামগঞ্জ-৩ ও সিলেট-৫ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। ২০০৫ সালের উপনির্বাচনে সুনামগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপি প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছিলেন শাহিনুর পাশা চৌধুরী।

সূত্রমতে, খেলাফত মজলিসের আমীর আব্দুল বাছিত আজাদের জন্য হবিগঞ্জ-২, মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদেরের জন্য হবিগঞ্জ-৪, মুনতাসির আলীর জন্য সিলেট-২ এবং দলের সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব জাহাঙ্গীর হোসেনের জন্য বরগুনা-১ আসন চাওয়া হয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আব্দুল বাছিত আজাদ ও ড. আহমদ আব্দুল কাদের হবিগঞ্জ-২ ও হবিগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী হয়েছিলেন।

অন্যদিকে দলের আমীর মাওলানা মুহাম্মদ ইসমাঈল নূরপুরী, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব জালাল উদ্দীন, সিনিয়র নায়েবে আমির ইউসুফ আশরাফের জন্য আসন চায় বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। যদিও খেলাফত মজলিসের এসব নেতার নিজের কোনো নির্বাচনি আসন নেই। নিজ নিজ এলাকায় তেমন কোনো তৎপরতা বা জনভিত্তিও গড়ে তুলতে পারেননি তারা। কেবল সুযোগ বুঝে নৌকার ভোটে এমপি হতে চেয়েছিলেন।

শুধু আসন নয়, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের মুক্তিসহ দলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলোও প্রত্যাহার চেয়েছিল খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। কিন্তু, ‘আসন ছাড়’ এবং ‘মামলা প্রত্যাহার’-এর ব্যাপারে মৌখিক প্রতিশ্রুতি ছাড়া তাৎক্ষণিক কোনো উদ্যোগ বা জোরালো সিদ্ধান্ত দৃষ্টিগোচর হয়নি। উল্টো যেসব আসন ইসলামী সমমনা দলসমূহের নেতারা প্রত্যাশা করেছিলেন, সেগুলোতে নৌকার প্রার্থী ঘোষণার পাশাপাশি ‘ডামি’ প্রার্থী রাখার নির্দেশও দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ফলে কিছু পাওয়ার সম্ভবনা না থাকায় নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন সমমনা ইসলামী দলসমূহের নেতারা।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সোমবার (২৭ নভেম্বর) খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেমীর সভাপতিত্বে এক জরুরি বৈঠকে বসেন তারা। ওই বৈঠকে দলের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহসভাপতি মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন আহমদ উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীন জাতীয় নির্বাচনের দাবি না মেনে সরকার যেভাবে একতরফা নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে, তা দেশের বিরাজমান রাজনৈতিক সংকটকে আরও তীব্র করবে। দেশ এক অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ইসলামি দলগুলোর নেতারা বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক সংঘাতময় পরিস্থিতিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়।

অবশ্য ছয় দলীয় এই জোটের অন্য দুই শরিক দল বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগের বিষয়টি একটু ভিন্ন। মাওলানা হাফেজ আতাউল্লাহ ইবনে হাফেজ্জী ও মাওলানা হাবীবুল্লাহ মিয়াজীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের তেমন কিছু চাওয়ার ছিল না। দেশের চলমান ‘নৈরাজ্যকর’ পরিস্থিতি থেকে মুক্তির জন্য দ্রুত একটি নির্বাচন হয়ে যাওয়া উচিত বলে মনে করে দলটি।

অন্যদিকে বদরুদ্দোজা সুজা ও কাজী আবুল খায়েরের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ মুসলিম লীগ নির্বাচনে গিয়ে সরকারের নেক নজরে থাকতে চেয়েছিল। কিন্তু সোমবার (২৭ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটি ও ওয়ার্কিং কমিটির জরুরি বৈঠকে বেশিরভাগ সদস্য নির্বাচনে না যাওয়ার ব্যাপারে রায় দেন। ফলে দলের সভাপতি ও মহাসচিবের ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও নির্বাচনে যেতে পারছে না বাংলাদেশ মুসলিম লীগ।

এ প্রসঙ্গে দলটির মহাসচিব কাজী আবুল খায়ের সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্থায়ী কমিটি ও ওয়ার্কিং কমিটির জরুরি বৈঠকে বেশির ভাগ নেতা নির্বাচনে না যাওয়ার ব্যাপারে মত দিয়েছেন। সে কারণে আমাদের দল নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে।’

নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমেদ আব্দুল কাদের সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা কখনো বলিনি নির্বাচনে যাব। আমাদের একটি জোট ছিল। সেই জোটের পক্ষ থেকে আমারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিলাম। যখন দেখলাম সরকার একতরফা নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে, তখন আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছি— আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি না।’

এদিকে জোটের অন্যতম শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও দলটির সিনিয়র সহসভাপতি শাহিনুর পাশা চৌধুরী তৃণমূল বিএনপির মনোনয়ন নিয়েছেন সুনামগঞ্জ-৩ আসন থেকে। এ আসনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করবেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

সারাবাংলা/এজেড/টিআর

ইসলামী দল খেলাফত মজলিস জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস বাংলাদেশ মুসলিম লীগ সমমনা ইসলামী দল সমমনা ইসলামী দলসমূহ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর