কক্সবাজার: শহরের বদরমোকাম জামে মসজিদের পাশেই ছোটখাটো জটলা। কাছে গিয়ে দেখা যায়, শীতপিঠা বিক্রি করছে দু’জন। জটলায় থাকা লোকজন যতটুকু না পিঠা কিনছে তার চেয়ে বেশি পিঠা বানানোর দৃশ্য দেখছে।
মূলত আব্দুল মজিদই (৩৮) হচ্ছে এই জটলার কেন্দ্রীয় চরিত্র। কারণ তার দু’টি পা অকেজো। জন্ম থেকেই তিনি পঙ্গু। চলাফেরা করেন ক্র্যাচ ভর করে। আব্দুল মজিদের মত বহু মানুষ আছেন এই শহরে, যারা চলতি পথে পথচারীদের কাছ থেকে ভিক্ষা করেন। কিন্তু মজিদ ব্যতিক্রম। তাই তার পিঠা বিক্রি’র দৃশ্য সবার নজর কেড়েছে।
জটলায় থাকা মনিরুল ইসলাম নামে এক যুবক বলেন, ‘মানুষটার দুই পা অচল কিন্তু কর্ম করে খাচ্ছে। এই লোক তো চাইলেই অনেক বেশি ভিক্ষা করতে পারতো। নকল ভিক্ষুকদের জ্বালায় অতিষ্ঠ মানুষ, অথচ প্রকৃত প্রতিবন্ধী হয়েও কাজ করছে। লোকটাকে দেখে খুব ভালো লাগলো।’ কথাগুলো বলেই তিনি দু’টি পিঠার অর্ডার করলেন।
ভিড় ঠেলে কথা হয় আব্দুল মজিদের সঙ্গে। তিনি জানান, জন্ম থেকেই তার দুই পা পঙ্গু। ক্র্যাচ ছাড়া চলাফেরা করতে পারেন না। সুস্থ মানুষের মতো কাজ করতে পারেন না। এখন পরিবার বলতে আছে স্ত্রী ও দুই কন্যা সন্তান। তাদের মুখে তো আহার তুলে দিতে হবে!
আব্দুল মজিদ বলেন, ‘পা দুটো চলে না কিন্তু হাত তো চলে। এই হাত দুটো অন্যের দিকে বাড়িয়ে না দিয়ে কাজে লাগাচ্ছি। ভিক্ষা চাইতে লজ্জা লাগে। মেয়েদের বিয়ে দিতে হবে। সমাজে মাথা উঁচু করে থাকতে চাইলে ভিক্ষা করা যাবে না, এই চিন্তাটা আমার সব সময়ই কাজ করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘একটা হুইলচেয়ার কেনা খুব জরুরি। তিনি আশাবাদী নিজের টাকায়ই একদিন একটা হুইলচেয়ার হবে। হুইলচেয়ার হলে কাজ করতেও খুব সুবিধা হবে, জীবনটা সহজ হবে।’
মজিদের সহযোগী ৭৫ বছর বয়সী কবির আহম্মদ। তিনি বলেন, ‘আমি নিজেও শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং বয়সের ভারে তেমন কিছু করতে পারি না। কিন্তু আব্দুল মজিদের এই মানসিক শক্তি দেখে আমারও সাহস বেড়েছে। তাকে সহযোগিতা করছি। কারণ সে ভিক্ষা করছেনা, কষ্ট করে আয় করছে।’
স্থানীয় মসজিদের ইমাম মোহাম্মদ লিয়াকত হোসেন বলেন, ‘নবীজির শিক্ষা করো না ভিক্ষা। আব্দুল মজিদ তার জ্বলন্ত প্রমাণ। শত প্রতিকূলতার মাঝেও ভিক্ষা না করে পিঠা বিক্রি করে জীবন চালানোর চেষ্টা করেছে। যেসব মানুষ সুস্থ-সবল হওয়ার পরেও ভিক্ষা করে, তাদের এখান থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিৎ।’