দাসের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে চাই— বগুড়ায় বিএনপি নেতা জিয়াউল
২৯ নভেম্বর ২০২৩ ২৩:৫৫
বগুড়া: বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বিএনপির চার বারের সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য ডা. জিয়াউল হক মোল্লা। মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর তিনি বলেছেন, আমি দাসপ্রাথা থেকে, এই দাসের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। এই জন্যই আমি নির্বাচন করছি।
বুধবার (২৯ নভেম্বর) বিকেলে কাহালু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার মেরিনা আফরোজের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন তিনি। এসময় তার সঙ্গে নির্বাচনি এলাকার বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর সাংবাদিকদের উদ্দেশে জিয়াউল হক মোল্লা বলেন, ‘আমার পিতা সাবেক সংসদ আজিজুল হক মোল্লার মৃত্যুর পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আমাকে জোর করে রাজনীতিতে নিয়ে আসেন। আমি সরকারি চাকরি ছেড়ে খালেদা জিয়ার নির্দেশে নির্বাচনে অংশ নিই। পর পর চার বার আমি এই আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হই। এমপি থাকাকালীন আমার জীবনে কোনো কালো দাগ নেই। আমার জনপ্রিয়তার কমতি নেই, কোনো নেতিবাচক দিক নেই। তারপরও আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি।’
ডা. মোল্লা বলেন, ‘আমি রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা থেকে অনুধাবন করেছি, বিএনপি নির্বাচন করলেও আমি হয়তো মনোনয়ন পাব না। জনগণ যাদের চায় না, এখানে জোর করে অনৈতিকভাবে তাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। কচুয়ায় মিলনের জায়গায় রাস্তা থেকে এক আদম ব্যাপারীকে তুলে এনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের আঙ্গুর মাঠের লোক, চার বারের এমপি- সেখানে একজন ব্যবসায়ীকে ধরে এনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আমার যারা বন্ধুবান্ধব বিএনপি করতো তারা সবাই নির্বাচন করতে চায়; হয়তো তাদের এলাকার পরিস্থিতি ভিন্ন হওয়ার কারণে তারা সাহস পায়নি। আমি এই সাহসটা, এই ঝুঁকিটা নিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘দলের নেতাকর্মীদের অভিযোগ আমি নাকি দলের সঙ্গে বেঈমানি করেছি। আমার ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। প্রতিটি নির্বাচনি এলাকার ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি। আমি চাকরি ছেড়ে দিয়ে রাজনীতিতে এসেছি বেগম জিয়ার নির্দেশে। আমি চাকরি ছাড়তে চাইনি। আমার পিতা যখন মারা যান, তখন বেগম জিয়া আমার মায়ের হাত ধরে বললেন, আমি ডাক্তার ছেলেকে চাই। আমরা চেয়েছিলাম আমার ছোটভাই নির্বাচনে আসুক। সেই থেকে আমার নির্বাচনে আসা। তারপরও আমাকে পরে আর মনোনয়ন দেওয়া হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুধু আমার ক্ষেত্রেই নয়, আমি এটা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি বিএনপির কোনো সিনিয়র নেতাই- বিশেষ করে মহাসচিব থেকে শুরু করে যারা আছেন, তারা কেউ স্বাচ্ছন্দে নেই। তারা ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করেন। আমি এই দাসপ্রাথা থেকে, এই দাসের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। এই জন্যই আমি নির্বাচন করছি।’
নির্বাচন সুষ্ঠ হবে কি? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এবার নির্বাচনে আন্তর্জাতিক চাপ আছে, এখানে অনেকের দৃষ্টি থাকবে। তাই আমার বিশ্বাস, নির্বাচনে কারচুপি কেউ করতে পারবে না।’
সরকারের কোনো গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে নির্বাচনে এসেছেন কি-না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার জন্য গ্রিন সিগন্যাল থাকলে নতুন কোনো রাজনৈতিক দল, যাকে কিংস পার্টি বলা হয়, সেসব থেকে নির্বাচনে অংশ নিতাম। নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত আমার নিজের, এটা আজকের সিদ্ধান্ত নয়। আমার সঙ্গে যে লোকজন আছেন তারা সবাই জানেন। তাদের আমি বলেছি যে, বিএনপিতে আমার জায়গা নেই। আমার যদি নির্বাচন করতে হয়, স্বতন্ত্রই করত হবে। সেভাবেই আমার প্রস্তুতি ছিল এবং সেভাবেই আমি এসেছি।’
নির্বচনে জয়ের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘এখানে আমার বাবার পর আমিই বিএনপি সৃষ্টি করেছি। এটাই আমার বড় সাহস। আমি জানতাম দল থেকে মনোনয়ন পাব না। তবে নেতাকর্কীদের সঙ্গে আমার সংশ্লিষ্টতা দীর্ঘদিনের। এ কারণে আমি আমার জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।‘
সারাবাংলা/পিটিএম