Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মনোনয়ন জমায় উৎসবের আমেজ, উপেক্ষিত আচরণবিধি!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৩০ নভেম্বর ২০২৩ ২০:৩৮

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে শেষদিনে উৎসবের আমেজে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা। মিছিল-স্লোগান, শোডাউনে দিনভর মুখর ছিল রিটার্নিং অফিসারদের কার্যালয়ের আশপাশ। আচরণবিধিতে মিছিল-শোডাউন নিষিদ্ধ থাকলেও আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীদের অনেকেই সেটা মানেননি। স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়ন জমা দেওয়া আওয়ামী লীগের নেতাদের কেউ কেউও শোডাউন করে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) সকাল থেকে জেলা প্রশাসন ও বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসেন প্রার্থীরা।

চট্টগ্রামের ১৬ আসনের মধ্যে মহানগরী ও সংশ্লিষ্ট ছয়টিতে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বিভাগীয় কমিশনার। জেলার ১০টি আসনে দায়িত্বে আছেন জেলা প্রশাসক।

নির্বাচনের আচরণবিধিতে কোনো প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেওয়ার সময় মিছিল বা কোনো প্রকার শোডাউন করতে পারবেন না বলে স্পষ্টভাবে বলা আছে। তাছাড়া পাঁচ জনের অধিক লোক নিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ এবং জমা দিতে পারবেন না। কিন্তু প্রার্থীদের অনেকেই মিছিল করে যেমন রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে গেছেন, তেমনি জমা দেওয়ার সময়ও পাঁচজনের বেশি লোক নিয়ে ঢুকেছেন।

বেলা ১১টার দিকে সবার আগে চট্টগ্রাম জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাহফুজুর রহমান মিতা। তার সঙ্গে ছিলেন সন্দ্বীপ উপজেলা চেয়ারম্যান মাইন উদ্দীন মিশন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলাউদ্দিন বেদন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মাজহারুল ইসমাল ও মগধরা ইউপি চেয়ারম্যান এস এম আনোয়ার হোসেন। এ সময় বাইরে নেতাকর্মীরা জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। এর পর মনোনোয়নপত্র জমা দেন চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে খাদিজাতুল আনোয়ার সনি।

বেলা ১২টার দিকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি-বাকলিয়া) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালি-চান্দগাঁও) আসনে নোমান আল মাহমুদ ও চট্টগ্রাম -১০ (পাহাড়তলী, হালিশহর, ডবলমুরিং) আসনে মহিউদ্দিন বাচ্চু। তাদের সঙ্গে ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, সহ সভাপতি ইব্রাহিম চৌধুরী বাবুল, খোরশেদ আলম সুজন, আলতাফ চৌধুরী বাচ্চু ও সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান মাহমুদ হাসনীসহ নগর আওয়ামী লীগের অন্তত ২০ জন নেতাকর্মী।

বিজ্ঞাপন

এ সময় বাইরে থাকা তাদের সমর্থকরা ‘নৌকা মার্কায় ভোট চাই’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। নির্বাচনের আচরণবিধিতে নির্বাচন কমিশন থেকে ঠিক করে না দেওয়া পর্যন্ত কোনো প্রার্থীর সমর্থকরা নির্দিষ্ট মার্কা নিয়ে স্লোগান দিতে পারবেন না বলেও নির্দেশ দেওয়া আছে।

মনোনোয়ন ফরম জমা দিয়ে বিপুল নেতাকর্মী পরিবেষ্টিত হয়ে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় ত্যাগ করেন মহিউদ্দিন বাচ্চু। এ সময় জেলা পরিষদ চত্বরে কিছুক্ষণের জন্য গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

দুপুর আড়াইটার দিকে চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনে মনোনোয়ন ফরম জমা দিতে আসেন সাবেক যুবলীগ নেতা আরশেদুল আলম বাচ্চু। মনোনয়মপত্র জমা দেওয়ার সময় রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে তার সঙ্গে ঢুকে পড়েন ডজনখানেক নেতাকর্মী। এ সময় তার কর্মী সমর্থকরা নিচে তার নাম ধরে স্লোগান দিতে থাকেন। ফরম জমা দিয়ে বের হওয়ার পর সমর্থকদের নিয়ে মিছিল করে বের হয়ে যান তিনি।

বিপুল নেতাকর্মী পরিবেষ্টিত হয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যান বাঁশখালী আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত মোস্তাফিজুর রহমান। রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়েও তাকে পাঁচজনের বেশি লোক নিয়ে ঢুকতে দেখা গেছে। এ নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন। এ ঘটনায় তাকে তলব করেছে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি। শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) বিকেল তিনটার মধ্যে সশরীরে অথবা প্রতিনিধির মাধ্যমে কমিটির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে হাজির হয়ে ব্যাখা দিতে বলা হয়েছে তাকে।

চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এম এ সালাম দুপুর ১টায় মনোনোয়ন ফরম জমা দেন বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে। তার সঙ্গেও অনেক নেতাকর্মী রিটার্নিং কর্মকর্তার রুমে ঢুকে পড়েন। চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনোয়ন ফরম জমা দেন আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন। চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনে ফরম জমা দেন চন্দনাইশ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার চৌধুরী।

এরপর চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুজিবুর রহমান সিআইপি। এ সময় তার সঙ্গে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে ১৩ জন ঢুকে পড়েন। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে প্রায় হাজার নেতাকর্মীর বহর নিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে মনোনোয়ন ফরম জমা দিতে আসেন চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর) আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী এম এ লতিফ। তার কর্মী সমর্থকদের ‘নৌকা, নৌকা’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো চত্বর। নারী শক্তির শত শত মহিলাও যোগ দেন র‍্যালির বহরে।

প্রার্থীদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল বাসার মো. ফখরুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার কাছে যে প্রার্থীই মনোনোয়ন ফরম জমা দিতে এসেছেন আমি সবাইকে আচরণবিধি মানতে বলেছি। প্রার্থীরা আমাদের বলেছেন অনেক কর্মী-সমর্থক তাদের দেখতে জড়ো হয়েছেন। অনেকে প্রথমবার নির্বাচন করছেন। তাই আচরণবিধি সম্পর্কে জানেন না। তবুও কেউ না মানলে আমরা সেটা ব্যাখ্যা চাইব।’

পুলিশ প্রটোকল নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন হুইপ সামশুল

নির্বাচনি আচরণবিধি না মেনে পুলিশ প্রটোকল ও জাতীয় পতাকাবাহী গাড়ি নিয়ে এসে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালার ১৪ (১) ও ১৪ (২) ধারা অনুযায়ী, ‘সরকারি সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তাহার সঙ্গে তাহার সরকারি কর্মসূচির সঙ্গে নির্বাচনী কর্মসূচি বা কর্মকাণ্ড যোগ করতে পারবেন না। আর সরকারি সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তার নিজের বা অন্যের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় সরকারি যানবাহন, সরকারি প্রচারযন্ত্রের ব্যবহার বা অন্যবিধ সরকারি সুবিধাভোগ করতে পারবেন না।’

বৃহস্পতিবার দুপুরে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জাতীয় পতাকাবাহী একটি গাড়িতে আসেন সংসদ সদস্য প্রার্থী সামশুল হক চৌধুরী। এ সময় পুলিশের প্রটোকলে তিনি গাড়ি থেকে নামেন।

জানতে চাইলে সামশুল হক চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, আমি শুধু আমার নির্বাচনি এলাকায় প্রটোকল পাব না, পতাকা পাব না। আমি এই পাঁচ বছরে সরকারি গাড়িতে চড়িনি। তেলও ব্যবহার করিনি। সুতরাং পতাকা ও প্রটোকল বন্ধ হবে আমার এলাকায় ঢুকলে। তফসিল ঘোষণার পর আচরণবিধি যদি কার্যকর হয়, তাহলে আমি এখনও পতাকা নিয়ে আমার এলাকায় ঢুকিনি। এখনও আমাকে কিছু জানানো হয়নি। জানালে আর পতাকা নিয়ে ঢুকব না।’

উল্লেখ্য, সামশুল হক চৌধুরী চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। আওয়ামী লীগের বর্তমান এ সংসদ সদস্য এবার দলের মনোনয়ন পাননি।

এদিকে, মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহবুব রহমান রুহেল। সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিনের কাছে তিনি মনোনয়নপত্র জমা দেন। এ সময় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, মীরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জেকে চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক একেএম জাহাঙ্গীর ভুঁইয়া উপস্থিত ছিলেন।

এ ছাড়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তার হাতে মনোনয়নপত্র জমা দেন বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) এর চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী মাইজভান্ডারী।

বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে মনোনোয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক দল বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন। দলের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর ওই আসনের বর্তমান এমপি। এবার এ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল আনোয়ারের মেয়ে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য খদিজাতুল আনোয়ার সনিকে। তবে শরিক দলগুলোকে আসন ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ।

এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নজিবুল বশর বলেন, ‘জোট এখনো বহাল। জোটের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জোটের শরিক দলসহ আরও অনেক দল নৌকা চাইছে। সব দলের সবাই মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর জোটের সভা হবে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে। আমাদের দলের অনেকেই মনোনয়ন ফরম নিয়েছি এবং জমা দিয়েছি। জোটের মিটিংয়ে আসন নিয়ে দর কষাকষি হবে।’

সারাবাংলা/আইসি/পিটিএম

আওয়ামী লীগ আচরণবিধি উপেক্ষিত প্রার্থী মনোনয়ন জমা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর