চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের ১৬ বনাম স্বতন্ত্র ৩০
৩০ নভেম্বর ২০২৩ ২২:২১
চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মোট ১৪৫ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপিসহ ২১টি দলের প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য বিভিন্ন আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৩০ জন, যাদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে নির্বাচনের মাঠে এসেছেন।
মনোনয়নপত্র জমাদান প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) রাতে চট্টগ্রামের দুই রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে এসব তথ্য দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রামের ১৬ আসনের মধ্যে মহানগরী ও সংশ্লিষ্ট ছয়টিতে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বিভাগীয় কমিশনার। জেলার ১০টি আসনে দায়িত্বে আছেন জেলা প্রশাসক। বৃহস্পতিবার দিনভর উৎসবের আমেজে রিটার্নিং অফিসারদের কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা হয়।
চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) আসনে মোট আট জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত মাহবুব রহমান রুহেলের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা গিয়াস উদ্দিন।
চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে ১৪টি মনোনয়নপত্র জমা পড়লেও দু’জন একাধিক মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এ হিসেবে এ আসনে প্রার্থীর সংখ্যা ১২ জন। ফটিকছড়িতে নৌকার প্রার্থী খাদিজাতুল আনোয়ার সনির পাশাপাশি একই প্রতীকের বর্তমান সাংসদ তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারিও মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এছাড়া ফটিকছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হুসাইন মো. আবু তৈয়বসহ চার জন।
চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে বর্তমান নৌকার সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতাসহ ১০ জন প্রার্থী হয়েছেন। এর মধ্যে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী।
চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড ও নগরীর একাংশ) আসনে মোট প্রার্থী ৯ জন। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এস এম আল মামুনের বিপরীতে দু’জন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।
চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী ও নগরীর একাংশ) আসনে ১০ জন প্রার্থী হয়েছেন। আওয়ামী লীগের এম এ সালাম, জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম এবং তৃণমূল বিএনপির সাবেক চাকসু ভিপি নাজিম উদ্দিন এখানে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন।
চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে আওয়ামী লীগের এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীসহ পাঁচ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া ও বোয়ালখালীর একাংশ) আসনে মোট সাতটি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাছান মাহমুদ দুটি মনোনয়ন পত্র দাখিল করায় এখানে প্রার্থীর সংখ্যা ছয়। এ আসনে কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হননি।
চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী ও নগরীর একাংশ) আসনে মোট ১৩টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী দুটি মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ায় একটি বাতিল হয়ে যাবে। এজন্য এখানে প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়াবে ১২। এ আসনে আওয়ামী লীগের নোমান আল মাহমুদের বিপরীতে তিন জন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এদের মধ্যে নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সদস্য আরশেদুল আলম বাচ্চু আছেন।
চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া-চকবাজার) আসনে আওয়াামী লীগের মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ সাত জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এখানে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই।
চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-হালিশহর-পাহাড়তলী) আসনে মোট প্রার্থী ১২ জন। এ আসনে আওয়ামী লীগের মহিউদ্দিন বাচ্চুর বিপরীতে সাবেক মেয়র মনজুর আলম ও সাবেক যুবলীগ নেতা ফরিদ মাহমুদসহ চার জন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আছেন।
চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে মোট প্রার্থী নয় জন। এ আসনে এম এ লতিফের বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী দুজন। এদের একজন দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন।
চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন মনোনয়ন বঞ্চিত বর্তমান সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী। এ আসনে মোট প্রার্থী ১০ জন, যার মধ্যে স্বতন্ত্র তিন জন।
চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনে মোট সাতটি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রার্থী তিনটি মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ায় দুটি বাতিল হয়ে এখানে প্রার্থী হবে পাঁচ জন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের বিপরীতে এখানে কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হননি।
চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনে মোট আট জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এখানে আওয়ামী লীগের নজরুল ইসলাম চৌধুরীর বিপরীতে স্বতন্ত্র হিসেবে আছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার।
চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে মোট নয় জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মোতালেব ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের নেতা ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান।
চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে আওয়ামী লীগের মোস্তাফিজুর রহমানের বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আছেন দক্ষিণ জেলার সহ-সভাপতি মুজিবুর রহমানসহ চার জন। মোট প্রার্থী ১৩ জন।
আওয়ামী লীগ ছাড়াও চট্টগ্রামে প্রার্থী দেওয়া দলগুলো হচ্ছে- জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি, বাংলাদেশ কংগ্রেস, ন্যাশনাল পিপলস ফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, খেলাফত আন্দোলন, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), তরিকত ফেডারেশন, সাম্যবাদী দল, সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, জাকের পার্টি, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ এবং গণফোরাম।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল বাসার মো. ফখরুজ্জামান বলেন, ‘১ ডিসেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত নমিনেশন ফরমগুলো যাচাই-বাছাইয়ের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। যে সকল স্বতন্ত্র প্রার্থী নমিনেশন পেপার সাবমিট করেছেন, তাদের এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর প্রয়োজন হয়। আমরা সেগুলো অনবরত যাছাই করব আমরা ১ ও ২ ডিসেম্বর। ৩ ডিসেম্বর ও ৪ ডিসেম্বর দল থেকে নমিনেশন পাওয়া প্রার্থীদের যাছাই-বাছাই করা হবে। সেখানে আমাদের বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকে কেউ ঋণখেলাপী আছেন কি না বা যে সকল বিষয়গুলো থাকলে প্রার্থিতা বাতিল বলে গণ্য হবে সে বিষয়গুলো আমরা যাচাইবাছাই করব। সেটার পর আমরা প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করব।’
সারাবাংলা/আইসি/আরডি/পিটিএম