বরের চোখে জল, কনের মুখে হাসি
১৯ মে ২০১৮ ১৮:২৪
।। মাকসুদা আজীজ, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর।।
“বিবাহসভায় চারি দিকে হট্টগোল; তাহারই মাঝখানে কন্যার কোমল হাতখানি আমার হাতের উপর পড়িল। এমন আশ্চর্য আর কী আছে। আমার মন বারবার করিয়া বলিতে লাগিল, ‘ আমি পাইলাম, আমি ইহাকে পাইলাম।'”
“কাহাকে পাইলাম। এ যে দুর্লভ, এ যে মানবী, ইহার রহস্যের কি অন্ত আছে!”
বিয়ের আসরে হৈমন্তির হাতের স্পর্শ পেয়ে অপুর ঠিক এ কথাটাই মনে হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথের লেখা হৈমন্তি গল্পের অপুর মনের কথা লিখতে গিয়ে কবিগুরু যে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ষষ্ঠ উত্তরাধিকারী হেনরি চার্লস এলবার্ট ডেভিড ওরফে সবার প্রিয় প্রিন্স হ্যারির মনের কথা পড়ে ফেলবেন, তাও এক শতক আগে- এটা কে কবে ভেবেছিল?
কিন্তু ঘটনা হচ্ছে রাজ্য চালনার শিক্ষা, অস্ত্রবিদ্যার দীক্ষা সব ছাপিয়ে যুবরাজ হ্যারির মনে বসেছিল নরম এক প্রেমিক। যে নববধূর স্পর্শ পেয়ে জেগে ওঠে।
বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার শুরু থেকেই বেশ তটস্থ দেখা যাচ্ছিল যুবরাজকে। বিয়ের উত্তেজনা নাকি দুশ্চিন্তা, কে বলবে? বিয়ের আগেও তো ধকল কম যায়নি। তার বধূ মেগান মারকল রাজপরিবারের বধূ হওয়া পথে পার হয়েছেন কতই না অনিশ্চয়তা।
রাজপরিবারের কেউ নন, এমনকি জাতীয়তাও নয় ব্রিটিশ। কৃষ্ণাঙ্গ মায়ের সন্তান, তালাকপ্রাপ্ত এবং চলচ্চিত্রের অভিনেত্রী। মোট কথা রাজ পরিবারের বধূ হতে হলে যা যা হওয়া নিষেধ সব গুণ আছে মেগানের মধ্যে। এতসবের পরেও সকল বাঁধা পেরিয়ে, গত বছর এ জুটি যখন বাগদান করেন তখন আনন্দের হিল্লোল বয়ে যায় সাধারণের মধ্যে। তবে ভাবার কোনো কারণ নেই প্রাচীনপন্থী অভিজাত ব্রিটিশরা একদম কিছু বলেনি। প্রতিনিয়তই মেগানকে হেয় করে কথা বলা হয়, এমনকি নভেম্বরে বাগদানের পর রীতিমতো মিছিল হয়েছে তাকে রাজপরিবারে যুক্ত না হতে দেয়ার দাবিতে।
সব কিছু ছাপিয়ে মেগান সব সময় খুব আত্মবিশ্বাসী। হাসি তার মুখ থেকে মুছেই না। পরিস্থিতি যাই হোক কখনও তা প্রকাশ পায় না তার চেহারায়।
সেসব দিন পার করে আজ মাথায় ঝকমকে মুকুট মাথায় মেগান যখন গির্জার প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেছে আনন্দে চিৎকার করে উঠেছে উপস্থিত জনতা। এমনকি গির্জার ভেতরে থাকা ভীষণ ভদ্র, নম্র রয়ালরাও আনন্দের ধ্বনি তুলেছেন মেগান যখন গির্জায় প্রবেশ করে।
শুধু মেগানের বর হ্যারির চোখে মুখে আতঙ্ক। সব পেরিয়ে বধূ অবশেষে যখন এসে তার হাত ধরলেন, সহসাই কিছু অশ্রু নেমে এলো তার গাল বেয়ে। পশ্চিমা বরদের জন্য এই চোখের পানি খুব বিরল নয়। তবে রাজ পরিবারে হ্যারিই প্রথম বর যিনি কাঁদলেন নিজের বিয়েতে।
মেগান কিন্তু বরাবরের মতোই অবিচল। শক্ত করে ধরেছিলেন বরের হাত। আত্মবিশ্বাস ও পাশে থাকার আশ্বাস নিয়ে।
সারাবাংলা/এমএ
আরও পড়ুন
রাজকীয় বিয়ের যত মুহূর্ত
মধুরেণ