Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বন বিভাগের ১১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে


২ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:৪৭

বগুড়া: রংপুর বন বিভাগের কতিপয় কর্মচারী-কর্মকর্তার সহযোগিতায় ১১ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগের নেতা পরিচয়দানকারী ডিজেল আহমেদ ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে। তবে এ ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন বগুড়ার বন সংরক্ষক কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম। এতে বন বিভাগের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

বগুড়ার কৈগাড়ি অফিসে রংপুর অফিসের লট টেন্ডার বাণিজ্যের দুর্নীতি অভিযোগে তদন্ত শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) বিকেলে এসব মন্তব্য করেন এই  বন কর্মকর্তা।

আমিনুল ইসলাম আরও বলেন, আজ বগুড়া অফিসে বাদী-বিবাদী দুই পক্ষকে তলব করেন তদন্ত কমিটি। সেখানে বাদী আসলেও কোনো বিবাদী পক্ষ উপস্থিত হয়নি। আমরা তদন্ত রিপোর্ট রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বন অধিদফতর বরাবর জমা দেব।

জানা গেছে, রংপুরে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে টেন্ডার বাণিজ্য করে সরকারের প্রায় ১১ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সন্ত্রাসী ডিজেল বাহিনী। এই চক্রে জড়িত রয়েছে বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী। কর্মচারীদের সহযোগিতায় সন্ত্রাসী কায়দায় টেন্ডার বাণিজ্য করছে চক্রটি। বছরের পর বছর এভাবেই শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্র। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সম্প্রতি রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বন অধিদফতরের উপ-প্রধান বন সংরক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী। তার আগে এ বিষয়ে সাধারণ ডায়রিও করা হয়েছে।

ওই লিখিত অভিযোগে বলা হয়, চলতি বছরের ১৮ অক্টোবর রংপুর সামাজিক বনায়ন বিভাগ প্রায় ২ হাজার ৩০০ লট বিক্রির জন্য উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করে। গত ১৮ অক্টোবর থেকে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত দরপত্র গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। ১৫ হাজারের অধিক দরপত্র বিক্রি হলেও রহস্যজনকভাবে মাত্র ২ থেকে ৩ হাজার দরপত্র জমা হয়। কারণ হিসেবে অভিযোগ করা হয়েছে, রংপুরের আওয়ামী লীগের নেতা পরিচয়দানকারী ডিজেল আহমেদ ও তার সহযোগীরা মিলে অন্যান্য দরপত্র ক্রেতাদের ভয়-ভীতি, হুমকি-ধমকি দিয়ে দরপত্র জমাদানে বিরত রাখেন। যারা দরপত্র জমা দিয়েছেন তারা ডিজেল আহমেদের সঙ্গে সমঝোতা করে দরপত্রে অংশ নিয়েছেন। এদের মধ্যে যারা দরপত্র পাবেন তারা প্রত্যেকে প্রতিটি লটে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা ডিজেল আহমেদকে প্রদান করবেন বলে শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়।

সেখানে আরও বলা হয়, বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সহযোগিতায় দীর্ঘদিন যাবত টেন্ডার বাণিজ্য করছেন এক সময়ের বিএনপির ক্যাডার হিসেবে পরিচিত বর্তমানে আওয়ামী লীগ নেতা নামধারী ডিজেল আহমেদ। এছাড়া রংপুর বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মোশাররফ করিম, হেড ক্লার্ক শাহ আলম ও অফিস সহকারী গোপাল বাবুসহ আরও কয়েকজন এই ডিজেল চক্রের অপকর্মে সহযোগিতা করেন। গত ১৬ নভেম্বর রংপুর বন বিভাগের অফিসে অন্যান্য দরপত্র ক্রেতারা দরপত্র জমা দিতে গেলে সশস্ত্র ডিজেল বাহিনী তাদের মারধর করে বের করে দেয়। অফিস থেকেই সিন্ডিকেটের লোকজন ডিজেলকে খবর দেওয়া হয়। এরপর তার লোকজন ওই সেখানে পৌঁছে সন্ত্রাসী কায়দায় দরপত্র ক্রেতাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে দরপত্র জমা দিতে দেয়নি।

অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, এর আগেও রংপুর বন বিভাগের অফিসে দরপত্রের খোঁজ নিতে গিয়ে হুমকি-ধামকি, অপহরণ ও মারধরের শিকার হয়েছেন একজন দরপত্র ক্রেতারা। এ ঘটনায় রংপুর মেট্টোপলিটনের কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন ভুক্তভোগী।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ জুন সামাজিক বনায়নের লট বিক্রির জন্য একটি দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে রংপুর বন বিভাগ। গত ১১ সেপটেম্বর এ বিষয়ে খোঁজ নিতে রংপুর বন বিভাগে যান মো. শিবলী সাদিক জিম (১৯) ও তার শ্বশুর মো. শাহজাহান আলী (৫০)। তখন বন বিভাগের কর্মচারী গোপালবাবু ও হেডক্লার্ক শাহ আলম তাদের বসিয়ে রেখে খবরটি ডিজেল আহমেদকে জানিয়ে দেন। এসময় শিবলী সাদিকের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কল করে হুমকি দিয়ে ডিজেল তাদের চলে যেতে বলেন। এসময় প্রাণে মারার হুমকি দিয়ে শিবলীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন ডিজেল। কিন্তু তারা অফিস ত্যাগ না করায় এর কিছুক্ষণ পরে ডিজেলের লোকজন সশস্ত্র অবস্থায় বন অফিসে গিয়ে শিবলী সাদিক ও তার শ্বশুর শাহজাহান আলীকে বন বিভাগের কর্মচারী গোপাল বাবু ও শাহ আলমের সামনে থেকে ধরে গণেশপুর ক্লাব মোড়ের মসজিদের পাশে নিয়ে যায়। সেখানে তাদের বেদম মারধর করা হয়। তাদের ফোন কেড়ে নেওয়া হয়।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে বন অধিদফতরের উপ-প্রধান বন সংরক্ষক মো. জগলুল হোসেন বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা  হবে।’

এর আগে, গত ১৩ নভেম্বর দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর থানা সদরের ভবানীপুর বিটের ২৯৭টি লটের উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হলে সবার উপস্থিতিতে সর্বোচ্চ দরদাতাকে দরপত্র প্রদান করা হয়। এতে প্রতি সেফটি কাঠের গড় মূল্য ৬৫০ থেকে ৭৫০ টাকা পর্যন্ত ডাক উঠে। অন্যদিকে, রংপুর সামাজিক বনায়নে প্রতি সেফটি কাঠের গড় মূল্য মাত্র ৩২০ থেকে ৪৩০ টাকায় দরপত্র প্রদান করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে প্রতিটি লটে ২৪০ থেকে ২৬০ সেফটি কাঠ পাওয়া যায়। সেই হিসেবে ২ হাজার ৩০০ লটের গড়ে কাঠের পরিমাণ ৫ লাখ ৭৫ হাজার সেফটি। হিসাব অনুসারে দিনাজপুরের তুলনায় রংপুর সামাজিক বনায়নে অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কারণে সরকার প্রায় ১১ কোটি টাকা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

টপ নিউজ ডিজেল আহমেদ রংপুর বন বিভাগ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর