Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘নির্বাচনের বিরোধিতা দেশকে অরাজনৈতিক ধারায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা’

ঢাবি করেসপন্ডেন্ট
২ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৮:৩৩

ঢাকা: সংবিধান মেনে গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচন হওয়া জরুরি। নির্বাচনের বিরোধিতা করা মূলত দেশকে অরাজনৈতিক ধারায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিকে ক্ষমতায় আসতে হবে। পাশাপাশি নির্বাচনের পর গঠিত মন্ত্রিসভায় এমন কাউকে স্থান দেওয়া যাবে না, যারা সিন্ডিকেট ভাঙতে কিংবা অর্থপাচার রোধ করতে পারে না।

শনিবার (২ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত এক নাগরিক সম্মিলন অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। অলাভজনক সামাজিক স্বেচ্ছাসেবামূলক সংগঠন ‘ক্যাম্পেইন ফর ডেভেলপড বাংলাদেশ’র আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন দেশের বিভিন্ন খাতের বিশিষ্টজনেরা।

আলোচনা সভায় ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির উপাচার্য আবদুল মান্নান চৌধুরী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধকালীন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলাম। সে সময় একমাত্র শিক্ষক হিসেবে ভারতে ট্রেনিং নিয়েছিলাম। এটা আমি গর্ব করে বলি। সার্বভৌমত্ব বলতে অনেক দেশ কেবল ভৌগলিক সীমারেখা সংরক্ষিত হওয়া বোঝে। আমাদের বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বিষয়টি কেবল এটি নয়। বরং আমাদের চেতনার জায়গাটাও সার্বভৌমত্বের অংশ। সার্বভৌমত্বের নিদর্শন হিসেবে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্রও আছে।’

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অনেকে বলছে, এবার নির্বাচন হবেই না। কিন্তু বাংলাদেশে নির্বাচন হতেই হবে। এই নির্বাচনে এখনও পর্যন্ত ৩০-৩২টি দল অংশ নিচ্ছে। যদি আওয়ামী লীগ ২৯৮ আসনে জিতে যায়, তাইলে আমি বিস্মিত হব না। নির্বাচিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের দায়িত্ব অনেক বেড়ে যাবে। তারা ক্ষমতায় এসে যেন বাহাত্তরের সংবিধান আক্ষরিক অর্থে বাস্তবায়ন করে— সে আশা রাখি।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডা. মো. শারফুদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আমরা কলঙ্কিত ছিলাম। হত্যাকারীদের বিচার করে আমাদের কলঙ্কমুক্ত করেছেন বিধায় বঙ্গবন্ধু কন্যাকে ধন্যবাদ জানাই।’

তিনি বলেন, ‘আমরা অনির্বাচিত সরকার চাই না। গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার চাই। এটি না হলে আমাদের যে উন্নয়ন প্রক্রিয়া, সেগুলো ব্যর্থ হবে। বাংলাদেশ, জাতির পিতা, জাতীয় পতাকা— এগুলো নিয়ে যারা কথা বলবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও অর্থনীতিবিদ আতিউর রহমান বলেন, ‘চাকরি পাচ্ছে না দেখে আমাদের অনেক তরুণ শিক্ষার্থী বিদেশ চলে যেতে চায়। কেননা তারা এদেশে চাকরি পাচ্ছে না। এক্ষেত্রে কেবল তাদের দোষ আছে, বিষয়টি এমন নয়। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থারও ঘাটতি রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আশ্রিত একটি নতুন শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে উঠবে এ আশ্বাস তরুণদের দিতে হবে। যারা এখন বিদেশ চলে যেতে চায় তারা সর্বত্রই দেখে নীতির থেকে দুর্নীতি বড়। তখন তারা চিন্তা করে এই বিপরীত পরিবেশে তারা টিকতে পারবে না। এর পাশে রয়েছে নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টিও। আগামী দিনে যে সমাজ বা অর্থনীতি আমরা গড়ে তুলব সেখানে তরুণ প্রজন্মের স্বপ্নগুলো কীভাবে পূরণ করা যায় সে চিন্তা রাখতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যারা সমাজ বদলের কথা বলি, অর্থনীতি বদলের কথা বলি- তরুণদের এই আশাগুলো দেখাতে হবে। নির্বাচনে তরুণদের আকৃষ্ট করতে তাদের চিন্তাকে প্রাধান্য দিতে হবে। যারা তরুণদের মন জোগাতে পারবেন তারাই ভোটগুলো পাবেন। আমাদের আহ্বান থাকবে যারা তরুণদের ও গণমানুষের আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী কাজ করেন তারা যেন নির্বাচন থেকে বাদ পড়েন। আর যারা স্বচ্ছ সমাজ গড়ার পক্ষে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সমাজ গড়তে চায় তারাই যেন ভোটে অগ্রাধিকার পান।’

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘আমরা এ দেশে নির্বাচন চাই। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়ে আসুক— সেটাও চাই। আজ আমেরিকা গণতন্ত্র নিয়ে কথা বলে। তারা কোথাও কি আসলে গণতন্ত্র আনতে পেরেছে? লিবিয়া, সিরিয়া, ভিয়েতনাম— কোথাও তো পারেনি।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার সাংবাধিনাক উপায়ে গণতন্ত্রের ধারায় নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে। এটি অনেক সাহসের বিষয়। নির্বাচন না করলে কী করা যেতে পারে? এতে মূলত রাজনীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়। যারা নির্বাচন চায় না, তারা বাংলাদেশকে একটি অরাজনৈতিক ধারায় নিয়ে যেতে চায়।’

বিএনপি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিএনপি মূলত কোনো দল নয়। এটি একটি প্ল্যাটফর্ম। যারা মূলত ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করে। যে দল পরিচালনার জন্য ২০০ সহ-সভাপতির প্রয়োজন পড়ে, সে দল তো নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস করে দেবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘গত সপ্তাহে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টে বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেছিলাম, কেন অন্যের দেওয়া গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের সংজ্ঞা আমাদের মেনে নিতে হবে? মানবাধিকার ও গণতন্ত্র যারা বারবার ভঙ্গ করে, সেই আমেরিকা যখন এসবের কথা বলে, তখন তা গ্রহণযোগ্য নয়!’

তিনি বলেন, ‘বিচার বিভাগের উপর আস্থা চলে গিয়েছিল ১৯৭৫ সালে। তখন বলা হয়েছিল, সামরিক শাসন সংবিধানের ঊর্ধ্বে। এখন বিচার বিভাগের উপর আস্থা ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার মধ্য দিয়ে আস্থা ফিরিয়ে এনেছেন।’

আগামী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যে সরকার গঠিত হবে, সে সরকারের মন্ত্রিপরিষদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সিন্ডিকেট যারা ভাঙতে পারে না, যারা অর্থপাচার ঠেকাতে পারে না, তারা কেউ যেন নতুন সরকারে মন্ত্রিত্ব না পায়!

নাগরিক সম্মিলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বিজেএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, গোলাম কুদ্দুস প্রমুখ।

সারাবাংলা/আরআইআর/পিটিএম

অরাজনৈতিক ধারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন বিরোধিতা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর