স্বতন্ত্রের সঙ্গে লড়ে জনপ্রিয়রাই জিতুক— কৌশলে অনড় শেখ হাসিনা
২ ডিসেম্বর ২০২৩ ২১:২৯
ঢাকা: স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকারে টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠনের লক্ষ্যে নির্বাচনের মাঠে আওয়ামী লীগ। ২৯৮ আসনে জয় পাওয়ার মতো প্রার্থীদের বিবেচনা নিয়েই মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে দলটি। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের অংশ হিসেবে দ্বৈত কৌশল নিয়েছে বাংলাদেশের ঐহিত্যবাহী এই রাজনৈতিক সংগঠনটি। এবার কৌশলগত কারণে মনোনয়ন বঞ্চিতদের স্বতন্ত্র প্রার্থিতার পথও খোলা রাখার ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এই ঘোষণার ফলে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী অনেক নেতা ও সংসদ সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে পরাজয়ের আতঙ্কে তটস্থ হয়ে পড়েছেন। প্রার্থীরা ইতোমধ্যে চ্যালেঞ্জে পড়ে দলের হাইকমান্ডের কাছেও ধর্ণা দিয়েছেন; যাতে স্বতন্ত্র প্রার্থিতার বিষয়ে দলের নেতাদের নিরুৎসাহিত করা যায়। কিন্তু দলটির হাইকমান্ড তথা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা স্বতন্ত্র প্রার্থিতার বিষয়ে ঘোষিত অবস্থানে অনড় রয়েছেন। এ বিষয়ে অবশ্য দলটির জেলা/মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপিত-সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে প্রায় ৫০ থেকে ৪০জন নেতা আওয়ামী লীগ সভাপতিকে তার ঘোষিত অবস্থানে অনড় থাকার আহ্বানও জানিয়েছেন।
দলীয় সূত্র জানায়, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা/মহানগরের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান শেখ হাসিনার কাছে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা দিয়েছেন। ওই নেতারা নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করে আওয়ামী লীগ সভাপতিতে গণভবনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে ঘোষিত অবস্থানে অনড় থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। নেতারা বলেন, ‘আমরা মাননীয় নেত্রীকে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কৌশল নিয়ে অনড় থাকার আহ্বান জানিয়েছি। আমরা তাকে অবহিত করেছি, আপনি সারাদেশের নেতাদের সামনে গণভবনে যে বার্তা দিয়েছেন, সেই বার্তায় অনড় থাকবেন। তা না হলে তৃণমূলের মনোবল ভেঙে যাবে। আপনার বার্তা পেয়ে সারাদেশের জনপ্রিয় সংগঠকরা উজ্জীবিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে অংশ নিচ্ছে।’
দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য নিয়েও তারা দলীয় প্রধানকে বলেছেন, ‘ইতোমধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থিতার বিষয়ে ধোঁয়াশা রেখে বক্তব্য দিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক। আমরা এ বিষয়ে আপনার স্পষ্ট নির্দেশনায় অপেক্ষায় রয়েছি।’
এদিকে, সম্প্রতি গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন কয়েকজন সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী। তারা নেত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘নেত্রী স্বতন্ত্র প্রার্থিতার কারণে তৃণমূলে চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ছে। আপনি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিন।’ জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমরা তো নির্বাচনে উইনেবল (জয়যোগ্য) বিবেচনা রেখেই প্রার্থীদের মনোনয়ন দিয়েছি। তাহলে কিসের ভয়? যারা জনপ্রিয় তারা জিতে আসুক। আগে তো তৃণমূলে নির্বাচনের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত করা হতো। এখন তো তোমরা তোমাদের পছন্দ মতো নেতা বানিয়ে ফেল? তাহলে তোমাদের কিসের ভয়?’
এ সময় সেখানে থাকা একজন প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ সভাপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘জি নেত্রী, আপনি যা বলেছেন তা ঠিক। সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট, অর্থ্যাৎ যোগ্যরাই জিতে আসবে। ওই সময় আরেকজন প্রতিমন্ত্রী তাকে হাতের ইশারা দিয়ে বলেন, তুমি থাম তো ভাই।’ এর পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘হ্যাঁ সে ঠিকই বলেছে, তোমার কথাই ঠিক। যে জনপ্রিয় সে জিতে আসবে।’
উপস্থিত ওই প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে কথা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন এবং গণমাধ্যমে যাতে তাদের নাম প্রকাশ করা না হয় সে বিষয়েও অনুরোধ করেন।
প্রসঙ্গত, স্বতন্ত্র প্রার্থিতার ঘোষণায় ইতোমধ্যে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন দলের অনেক প্রভাবশালী নেতা ও সংসদ সদস্য। এবার আওয়ামী লীগের জোট শরিক ও জাতীয় পার্টি ছাড়াও তৃণমূল বিএনপি এবং বিএনএমসহ বিএনপি ছেড়ে আসা নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এ সব স্বতন্ত্র প্রার্থী, দল ও জোটের প্রভাবশালীদের সঙ্গে ভোটের মাঠে কি সমীকরণ হবে তা নিয়েও রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানামুখী জল্পনা-কল্পনা।
এবার আওয়ামী লীগ দু’টি আসন বাদ দিয়ে ২৯৮ আসনে মনোনয়ন দিয়েছে। জাতীয় পার্টি দিয়েছে ২৮৯ আসনে মনোনয়ন। বিএনএম ও তৃণমূল বিএনপিও সারাদেশে প্রার্থী দিয়েছে। এছাড়া নৌকার প্রার্থীর আসনে দলের অনেক প্রভাবশালী নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্যরাও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
জানা গেছে, স্বতন্ত্র প্রার্থিতার বিষয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা কৌশলগত কারণে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছেন। এতে আরও বেশি ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গণভবনে ওই নির্দেশনার পর এ বিষয়ে আর কোনো নির্দেশনা স্পষ্ট করেননি।
এ বিষয়ে শনিবার (২ ডিসেম্বর) দলের স্বতন্ত্র প্রার্থিতাকে গণতন্ত্রের বিউটি বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক কাদের। দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক বিফ্রিংয়ে তিনি সাংবাদিককদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।
অনেক প্রভাবশালী নেতা নৌকার মনোনয়ন পেয়েও স্বতন্ত্র আতঙ্কে রয়েছেন? এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এটিই তো গণতন্ত্রের বিউটি। স্বতন্ত্র প্রার্থী যদি হেভিওয়েট কারও সীমানা পেরিয়ে জনপ্রিয়তায় এগিয়ে যায়….? সেটা তো এক ধরনের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ; এটা তো আমরা বাধা দিতে পারি না। গণতন্ত্র কী। গণতন্ত্র তো প্রতিযোগিতা। সুষ্ঠু নির্বাচন, সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা। প্রার্থীকে আমরা প্রার্থী হিসেবেই বিবেচনা করি।’
স্বতন্ত্র প্রার্থিতা বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘ইলেকশন করুক। দেখা যাক, যাকে জনগণ চায় সেই জিতবে।’ এর আগে ওবায়দুল কাদের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে দলের কৌশলগত সিদ্ধান্ত রয়েছে বলে অবহিত করেন। সেজন্য আগামী ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকার আহ্বান জানান তিনি।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলার দুই সাধারণ সম্পাদক জানান, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হবে, সে বিষয়ে কোনো সাংগঠনিক নির্দেশনা এখনো আসেনি। নেত্রী হয়তো কোনো নির্দেশনা দিতে পারেন।
ইতোমধ্যে নৌকার প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে শরীয়তপুর-২ আসনের নড়িয়া এলাকায় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। শরীয়তপুর-২ আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম। তিনি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। অন্যদিকে, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য খালেদ শওকত আলী। তিনি ওই আসনের প্রয়াত সাবেক সংসদ সদস্য ও ডেপুটি স্পিকার শওকত আলীর ছেলে।
বরগুনা-১ আসনে নৌকার মনোনীত প্রার্থী জেলা সভাপতি সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। তিনি পাঁচবারের সংসদ সদস্য। তার বিরুদ্ধেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন তিন নেতা। তারা হলেন- জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম সরোয়ার টুকু, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খলিলুর রহমান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য গোলাম ছরোয়ার ফোরকান।
কুমিল্লা-৬ (কুমিল্লা সদর ও মহানগর) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য আঞ্জুম সুলতানা সীমা। তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি প্রয়াত আফজল খানের মেয়ে। এই আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার।
প্রসঙ্গত, দলের নীতিনির্ধারকদের মতে, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কারণে কোনো কোনো আসনে দলের মনোনীত প্রার্থীরা অনেকটা একঘরে হয়ে পড়েছেন। কোথাও কোথাও আবার মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে বর্তমান সংসদ সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এমন জটিল পরিস্থিতিতে তৃণমূলে বিভক্তির বার্তা ছড়িয়ে পড়েছে। তবে দলীয় সূত্র জানায়, ১৭ ডিসেম্বরের পর স্বতন্ত্র কৌশলে কিছুটা বদল আসতে পারে। তবে সেই কৌশলটা এখনো স্পষ্ট নয় তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে।
কারণ নিকট অতীতে বিভিন্ন স্থানীয় সরকারব্যবস্থার নির্বাচনে বহিষ্কার করার পরও প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি অধিকাংশ বিদ্রোহী তথা স্বতন্ত্র প্রার্থী। সর্বশেষ গত মে মাসে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী আজমতউল্লা খানের বিপক্ষে স্বতন্ত্র দাঁড়িয়ে জয়ী হন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন। জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে বহিষ্কার করার পরও তিনি দমে যাননি। পরে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় প্রাথমিক সদস্যপদ ফিরে পান তিনি।
এদিকে, ফরিদপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ ও মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনের (বিদ্রোহী) লড়াই গত এক দশকের। গত দুটি জাতীয় নির্বাচনে কাজী জাফর উল্লাহ দলীয় মনোনয়ন পেয়েও মজিবুর রহমান চৌধুরীর কাছে পরাজিত হন। এবার কাজী জাফর উল্লাহ দলের কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান হয়েছেন। অন্যদিকে, দুবার দলীয় প্রার্থীকে হারিয়ে ২০২০ সালে যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হন মজিবুর রহমান চৌধুরী। এবারও দলের মনোনয়ন পেয়েছেন জাফর উল্লাহ। যথারীতি স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন মজিবুর রহমান চৌধুরী। এতেই বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থিতায় পুনরায় নিক্সন মডেল আলোচনা শুরু হয়েছে সারাদেশে।
বরিশাল-৫ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। এই আসনে আরেক ব্যবসায়ী সালাউদ্দিন রিপন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে সিটি করপোরেশনের বাইরে সদর উপজেলার ইউনিয়নগুলোতে কাজ করছেন। এই আসনেও কেউ কাউকে ছাড় দেবেন বলে মনে হয় না। হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে ভোটের মাঠে রয়েছেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। এখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী।
রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে নৌকার প্রার্থী মোহা. আসাদুজ্জামান আসাদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র তুলেছেন বর্তমান এমপি আয়েন উদ্দিন। আসাদুজ্জামান আসাদ রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং আয়েন উদ্দিন বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। রাজশাহী-৪ আসনে তিনবারের সংসদ সদস্য এনা প্রপাট্রিজের মালিক এনামুল হক এবার মনোনয়ন পাননি। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে রয়েছেন। তার আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবুল কালাম আজাদ।
নাটোর-২ আসনে বর্তমান এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুলের বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মাঠে রয়েছেন সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. আহাদ আলী সরকার। তিনি বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। দিনাজপুর-৩ আসনে নৌকার প্রার্থী হুইপ ইকবালুর রহিম। সেখানে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক স্বতন্ত্র প্রার্থী বিশ্বজিৎ কুমার ঘোষ। দিনাজপুর-৪ আসনে নৌকার প্রার্থী বর্তমান এমপি ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন চিরিরবন্দর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তারিকুল ইসলাম তারিক।
জয়পুরহাট-২ আসনে নৌকার প্রার্থী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহামুদ স্বপন। তার বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাহফুজ চৌধুরী। ঢাকা-১৯ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান এনাম। তার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন সাবেক এমপি তালুকদার তৌহিদ জং মুরাদ এবং আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।
গাজীপুর-৩ আসনে নৌকার প্রার্থী টানা পাঁচবারের সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত অ্যাডভোকেট রহমত আলীর মেয়ে রুমানা আলী টুসীকে। তিনি বর্তমানে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য। দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের মাঠে শক্ত রয়েছেন বর্তমান এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ। ফরিদপুর-৩ আসনে খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে বাদ দিয়ে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে জেলা সভাপতি শামীম হককে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তার বিপক্ষে নির্বাচন করছেন ব্যবসায়ী নেতা এ কে আজাদ। এ কে আজাদ দীর্ঘদিন ধরে ওই আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী। আর শামীম হক নতুন প্রার্থী।
সিরাজগঞ্জ-৫ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুল মমিন মন্ডল। সেখানে তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে লড়বেন সাবেকমন্ত্রী ও বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ বিশ্বাস। সেজন্য তিনি জেলা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। এছাড়া এই আসনে বেলকুচি উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল ইসলাম সাজেদুলও। আসনটিতে এবারের নির্বাচনে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কুমিল্লা-৬ আসনে আফজল খান ও বর্তমান সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের দ্বন্দ্ব অনেক দিনের। আফজল খান মারা যাওয়ার পর সন্তানদের মধ্যেও সেই দ্বন্দ্ব রয়ে গেছে। এই আসনে দলীয় প্রার্থী বাহাউদ্দিনের সঙ্গে লড়বেন আফজল খানের মেয়ে আঞ্জুম সুলতানা সীমা। তিনি সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য। বাহার মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সীমা সহসভাপতি।
ফরিদপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক এমপি আবদুর রহমান নৌকার প্রার্থী। এখানে ‘কিংস পার্টি’খ্যাত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ মো. আবু জাফরকে মোকাবিলা করতে হবে। তিনি বিএনপি থেকে বিএনএম-এ যোগ দিয়েছেন। এ ছাড়া এই আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম কৃক ও কৃষক লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাবেক সহসভাপতি আরিফুর রহমান দোলনও।
মাদারীপুর-৩ আসনে নৌকার প্রার্থী প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক বর্তমান সংসদ সদস্য ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। তার বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মাঠে রয়েছেন কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য তাহমিনা আক্তার এবং কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. তৌফিকুজ্জামান। শেরপুর-১ (সদর) আসনে নৌকার প্রার্থী হুইপ আতিউর রহমান আতিক। তার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছানোয়ার হোসেন ছানু।
নেত্রকোণা-৪ (মোহনগঞ্জ-মদন-খালিয়াজুড়ি) আসনে নৌকার প্রার্থী সাবেক আমলা বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাজ্জাদুল হাসান। এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা শফি আহমেদ। জাসদ ছাত্রলীগের সাবেক এই সভাপতি নব্বইয়ের গণঅভ্যূত্থানে শীর্ষ নেতা ছিলেন। সিলেট-১ আসনে নৌকার প্রার্থী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ।
চাঁদপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন চাঁদপুর-৪ আসনের সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ড. সামছুল হক ভূঁইয়া। যশোর-২ (চৌগাছা-ঝিকরগাছা) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মনির। এ আসনে নৌকার প্রার্থী তৌহিদুজ্জামান তুহিন। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এবং সাবেক শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের জামাতা।
এর বাইরেও দেশের বিভিন্ন আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। যদি বড় কোনো সিদ্ধান্ত না আসে তাহলে এই সকল প্রার্থীদের দলীয় প্রতীকের মুখোমুখি হতে দেখা যাবে। ধারণা করা হচ্ছে, অবাদ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে অন্যান্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীরা স্বতন্ত্র (দলের) প্রার্থীদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। কোনো কোনো জায়গায় হয়তো স্বতন্ত্ররাই জিতে আসবে। সেজন্য দলীয় মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীরা স্বতন্ত্রের চ্যালেঞ্জ নিতে চাচ্ছেন না। কিন্তু এ ব্যাপারে অনড় অবস্থানে স্বয়ং আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম
৭ জানুয়ারি অনড় আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী নির্বাচন শেখ হাসিনা স্বতন্ত্র