Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চীন মোকাবিলায় ইন্দো-প্যাসিফিকে মিসাইল মোতায়েন করবে যুক্তরাষ্ট্র

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৪:৪৯

২০২৪ সালে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে (ইন্দো-প্যাসিফিক) স্থল-ভিত্তিক মধ্যম পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের পরিকল্পনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির প্রশান্ত মহাসাগরীয় সামরিক শাখার মুখপাত্র রব ফিলিপসের বরাত দিয়ে জাপানের সংবাদমাধ্যম নিক্কেই এ খবর প্রকাশ করেছে। ওই কর্মকর্তা বলেছেন, চীনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সক্ষমতা বাড়াতে স্নায়ুযুদ্ধের পর এই অঞ্চলে প্রথমবারের মতো মিসাইল স্থাপন করতে যাচ্ছে পেন্টাগন।

বিজ্ঞাপন

মার্কিন আর্মি প্যাসিফিকের মুখপাত্র রব ফিলিপস এই পরিকল্পনার একটি রূপরেখা দিয়েছেন। তিনি জানান, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অন্যান্য প্রতিরোধ ব্যবস্থার সঙ্গে স্ট্যান্ডার্ড মিসাইল-৬ (এসএম-৬) এবং টমাহক ক্রুজ মিসাইলের স্থল-ভিত্তিক সংস্করণ মোতায়েন করা হবে। এসব ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ৫০০ থেকে ২৭০০ কিলোমিটারের মধ্যে।

স্নায়ুযুদ্ধের সময় ১৯৮৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। ওই চুক্তির নাম ইন্টারমিডিয়েট র‍্যাঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস ট্রিটি বা আইএনএফ ট্রিটি। ২০১৯ সালে চুক্তিটির মেয়াদ শেষ হয়। ওই চুক্তিতে ৫০০ থেকে ৫ হাজার ৫০০ কিলোমিটার পাল্লার স্থলভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র নিজের কাছে রাখা বা তৈরি নিষিদ্ধ করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্র যখন আইএনএফ ট্রিটির কারণে মধ্যম পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে বিরত, তখন চীন এসব ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি ও উন্নত করার অবাধ সুযোগ পায়। পেন্টাগনের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেইজিং এখন ১ হাজার থেকে ৫ হাজার ৫০০ কিলোমিটার পাল্লার আনুমানিক ১৫০০টি ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে তার অস্ত্রাগার সাজিয়েছে।

ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের মিসাইল সক্ষমতা মোকাবিলা করতে এই অঞ্চলে ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের পথে হাঁটছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৪ সালেই ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করবেন পেন্টাগন। তবে কোথায় এবং কখন মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা হতে পারে তা বিস্তারিত জানাননি মার্কিন আর্মি প্যাসিফিকের মুখপাত্র রব ফিলিপস।

কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস-এর সিনিয়র ফেলো অঙ্কিত পান্ডা মনে করেন, মার্কিন সেনাবাহিনী প্রাথমিকভাবে মার্কিন ভূখণ্ড গুয়ামে মধ্যম পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করবে। পরে প্রয়োজন অনুযায়ী অন্যান্য এশীয় মিত্র দেশগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা হবে।

বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, প্রশান্ত মহাসাগরের একটি ছোট দ্বীপ গুয়াম। উত্তর কোরিয়া থেকে ৩৪০০ কিলোমিটার দূরে গুয়াম দ্বীপটি অবস্থিত। এই দ্বীপটি পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত মূল ঘাটি।

অঙ্কিত পান্ডা বলেন, প্রশান্ত মহাসাগরে মার্কিন দখলকৃত অঞ্চলে মিসাইলগুলো স্থায়ীভাবে মোতায়েন করা হবে। সঙ্কট তৈরি হলে মিত্র দেশগুলোতে মিসাইল মোতায়েন করা হবে। তবে মিত্র দেশে মিসাইল স্থাপনের বিষয়টি ভবিষ্যতের রাজনৈতিক গতিবিধির উপর নির্ভরশীল।

তাইওয়ান প্রণালী বা দক্ষিণ চীন সাগরে কোনো সংকট তৈরি হলে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে ক্ষেপণাস্ত্রের এমন মোতায়েন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। গুরুত্বপূর্ণ জলপথ বা চীনের মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানতে পারে এমন সক্ষমতার মিসাইল মোতায়েন করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এ জন্য ভবিষ্যতে জাপানের ওকিনওয়া দ্বীপ থেকে তাইওয়ান ও ফিলিপাইন পর্যন্ত বিস্তৃত দ্বীপশৃঙ্খলে ব্যাপক সংখ্যায় ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।

পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে কৌশলগত দ্বীপ হলো গুয়াম। এই দ্বীপ থেকে চীনের মূল ভূখণ্ডের দূরত্ব ৪ হাজার কিলোমিটার। মধ্যবর্তী-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ইউনিটগুলো জরুরি অবস্থার প্রতিক্রিয়া হিসেবে গুয়াম থেকে এশিয়ার মিত্রদের কাছে দ্রুত হস্তান্তর করতে পারবে যুক্তরাষ্ট্র।

আপাতত, জাপান এবং ফিলিপাইন নতুন করে মার্কিন অস্ত্র মোতায়েনে রাজি নয়। নতুন মার্কিন অস্ত্র মোতায়েন করা হলে চীনা সামরিক বাহিনীর তাৎক্ষণিক লক্ষ্যে পরিণত হওয়ার ভয় আছে এসব দেশের। হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি কারিন জিন-পিয়েরে গত জানুয়ারিতে বলেছিলেন, জাপানে নতুন স্থল-ভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের কোনো পরিকল্পনা এই মুহূর্তে নেই।

কার্নেগি এনডাউমেন্টের আমেরিকান স্টেটক্রাফ্ট প্রোগ্রামের সিনিয়র ফেলো জেনিফার কাভানাঘ এ ব্যাপারে বলেন, ফিলিপাইনে এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা অনেক দূরের একটি লক্ষ্য। ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র খুব স্পষ্ট করে বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ফিলিপাইনের ঘাঁটিগুলোকে চীনের বিরুদ্ধে স্ট্রাইক অপারেশনের জন্য ব্যবহার করবে না।

তবে চীনের সামরিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ হিসেবে ওয়াশিংটন স্থল-ভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের উদ্যোগ আরও আগ্রসর করতে চায়। কারণ, ভ্রাম্যমান এবং আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র ইউনিটগুলো জাহাজ বা বিমানের চেয়ে সুবিধাজনক। এসব ক্ষেপণাস্ত্র ইউনিট শনাক্তকরণ ব্যবস্থা এবং শত্রুদের আক্রমণ এড়াতে সক্ষম। এসব ক্ষেপণাস্ত্র ইউনিটের জন্য কোনো রানওয়ে বা বন্দরেরও প্রয়োজন হয় না।

মার্কিন সেনাবাহিনী মধ্যপ্রাচ্যে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ থেকে থেকে মনোযোগ সরিয়ে এবার চীন ও রাশিয়ার দিকে মনোনিবেশ করছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র শত্রুদের জাহাজগুলোর দিকে মন দিয়েছে। দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের সঙ্গে একটি সম্ভাব্য সংঘর্ষের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে।

সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সিনিয়র উপদেষ্টা মার্ক ক্যানসিয়ান বলেন, চীনা ক্ষেপণাস্ত্রগুলো পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে মার্কিন নৌ ঘাঁটিগুলোর জন্য হুমকি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরও একই ধরনের সক্ষমতা প্রয়োজন, যেন জাহাজ বা বিমান কোনো ঝুঁকি না নিয়ে চীনা ঘাঁটিতে আঘাত হানতে পারে।

মার্ক ক্যানসিয়ানের মতে, এশিয়ার বিদ্যমান সেনা ইউনিটগুলোতে প্রিসিসন স্ট্রাইক মিসাইল মোতায়েন করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমানে এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা তৈরির কাজ চলছে। প্রায় ৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত পরিসীমা এবং উচ্চ-গতিসম্পন্ন আর্টিলারি রকেট সিস্টেম এবং একাধিক লঞ্চ রকেট সিস্টেমের সঙ্গে এই সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি অস্ত্র ব্যবস্থা হতে যাচ্ছে এই মোতায়েন। তিনি মনে করেন, বিলম্ব সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘ পাল্লার হাইপারসনিক অস্ত্র তৈরির চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

সারাবাংলা/আইই

টপ নিউজ যুক্তরাষ্ট্র

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

উর্মিলার সংসার ভেঙে যাওয়ার কারণ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০২

নতুন পরিচয়ে কুসুম সিকদার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৫৭

সম্পর্কিত খবর