তফসিলের বৈধতা নিয়ে রিটের পরবর্তী শুনানি সোমবার
৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৬:৪৫
ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ঘোষিত তফসিলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিটের পরবর্তী শুনানির জন্য সোমবার (৪ ডিসেম্বর) দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট।
রোববার (৩ ডিসেম্বর) প্রথম দিনের শুনানি শেষে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতের রিটের পক্ষে ছিলেন রিটকারী আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
এর আগে, বুধবার (২৯ নভেম্বর) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট (রিট পিটিশন নম্বর: ১৫১৫৪/২০২৩) করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. ইউনুছ আলী আকন্দ।
রিটে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি), মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইন সচিব, লেজিসলেটিভ সচিব, রাষ্ট্রপতির সচিব, প্রধানমন্ত্রীর সচিব এবং সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবকে বিবাদী করা হয়।
রিটে জাতীয় সংসদ বহাল থাকা অবস্থায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কর্তৃক ঘোষিত গত ১৫ নভেম্বর তারিখের প্রজ্ঞাপন মূলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা কেন অবৈধ হবে না, এই মর্মে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে রুল শুনানি না হওয়া পর্যন্ত তফসিল স্থগিতের আবেদন জানানো হয়।
এর আগে, ২৮ নভেম্বর সংসদ নির্বাচনের তফসিল স্থগিত এবং আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য সংসদ নির্বাচন পেছাতে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছিলেন ইউনুছ আলী আকন্দ।
রেজিস্ট্রি ডাক ও ইমেল যোগে পাঠানো আইনি নোটিশে ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা বেধে দেওয়া হয়েছিল। নোটিশপ্রাপ্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছিল। অন্যথায় উচ্চ আদালতে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছিল। নোটিশের বিষয়ে কোন সাড়া না আজ (২৯ নভেম্বর) হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন তিনি।
জনস্বার্থে এই লিগ্যাল নোটিশ পঠিয়েছি উল্লেখ করে আইনজীবী মো. ইউনুছ আলী আকন্দ বলেন, দেশের বড় রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অনুপস্থিত রয়েছে। যদি তারা নির্বাচনে আসতে চায় তাহলে সেক্ষেত্রে আমাদের নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে দেওয়া উচিত। এ ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিষয়ে বিদেশিদের চাপ রয়েছে। সব দিক বিবেচনায় নিয়ে তফসিল স্থগিত এবং নির্বাচন পেছানোর দাবিতে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়, গত ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জন্য তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। সে অনুযায়ী আগামী ৭ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে রাজনৈতিক সংকটের কারণে হরতাল-অবরোধের সময় দেশের অনিবার্য পরিস্থিতিতে সব রাজনৈতিক দলের ও অন্যান্য স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুত হওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
নোটিশে বলা হয়, সংবিধানের ১২৩(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- সংসদ-সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে।
(ক) মেয়াদ-অবসানের কারণে সংসদ ভেঙ্গে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভেঙ্গে যাওয়ার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে; এবং
(খ) মেয়াদ-অবসান ব্যতীত অন্য কোন কারণে সংসদ ভেঙ্গে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভেঙ্গে যাওয়ার পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে:
তবে শর্ত থাকে যে, এই দফার (ক) উপ-দফা অনুযায়ী অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত ব্যক্তিগণ, উক্ত উপ-দফায় উল্লিখিত মেয়াদ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত, সংসদ সদস্যরূপে কার্যভার গ্রহণ করিবেন না।
(৪) সংসদ ভেঙ্গে যাওয়া ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদের কোনো সদস্যপদ শূন্য হইলে পদটি শূন্য হইবার নব্বই দিনের মধ্যে উক্ত শূন্যপদ পূর্ণ করিবার জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে।
তবে শর্ত থাকে যে, যদি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের মতে, কোন দৈব-দূর্বিপাকের কারণে এই দফার নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে উক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব না হয়, তাহা হইলে উক্ত মেয়াদের শেষ দিনের পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে উক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে।]
আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের মতে, এই ধারায় উল্লিখিত সময়ের মধ্যে এই ধরনের নির্বাচন করা সম্ভব না হলে, পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে এই ধরনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অর্থ্যাৎ এই ধরনের সময়ের শেষ দিনের পরের দিন।
নোটিশে আরও বলা হয়, বর্তমান পরিস্থিতিতে হরতাল-অবরোধের মতো রাজনৈতিক সংকটের কারণে সুষ্ঠু নির্বাচন কখনোই হবে না। তাই এই সংসদের মেয়াদের শেষ দিনের পরের নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। এ ছাড়া আয়কর রিটার্ন দাখিল করার শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর এবং একই তারিখে মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন। ২০২৩ সালের আয়কর রিটার্নের কপি মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দাখিল করতে হবে। কিন্তু রাজনৈতিক সংকটের কারণে রাজনৈতিক ব্যক্তি ও অন্যান্য স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৩০ নভেম্বরের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারেননি। যদিও মনোনয়নপত্রের সঙ্গে উল্লেখিত রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রায় ১০ লাখ ভোটারের মধ্যে ১% ভোটারের স্বাক্ষর প্রস্তুতও করতে পারেনি। তাই নির্বাচনের তফসিলের তারিখ বাড়ানো উচিত।
তাই আপনাকে (প্রধান নির্বাচন কমিশনার) ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংসদ নির্বাচনের পুনঃতফসিল করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য অনুরোধ করছি। ব্যর্থ হলে তা ন্যায়বিচার অস্বীকার করা হয়েছে বলে গণ্য হবে।
সারাবাংলা/কেআইএফ/ইআ