রাজশাহী: রাজশাহী-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে টানা তিনবার সংসদ সদস্য হয়েছেন ওমর ফারুক চৌধুরী। প্রতিবারই তার আয় বাড়ে। যেখানে ২০১৮ সালের নির্বাচনী হলফনামায় ব্যাংকে এক টাকাও ছিল না, কিন্তু এখন তার ব্যাংকে রয়েছে ৯ কোটি টাকা।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) জমা দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
দেখা গেছে, ২০১৮ সালে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ওমর ফারুক চৌধুরীর কোনো অর্থ ছিল না। কিন্তু এবার তার নামে জমা হয়েছে ৯ কোটি ৩৮ হাজার ৬০৬ টাকা। নির্ভরশীলদের নামে ২০১৮ সালে জমি না থাকলেও এবার হয়েছে ৬০ বিঘা।
রাজশাহী-১ আসনে ২০০৮ সালে প্রথমবার এমপি হওয়ার আগে তার নগদ টাকা ছিল ২ লাখ ৫০ হাজার ৭৫০। স্ত্রীর নামে নগদ ছিল ৫০ হাজার টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা অর্থ ছিল নিজ নামে ৩০ লাখ টাকা। স্ত্রীর নামে ছিল ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
২০০৮ সালে ফারুক চৌধুরীর ছিল ৪০ হাজার টাকার একটি গাড়ি। এখন তার গাড়িবহরে ৬৩ লাখ টাকার প্রাইভেট কার, ৬১ লাখ ১৮ হাজার ৮৯৭ টাকার শুল্কমুক্ত জিপসহ নিজ ও নির্ভরশীলদের নামেও রয়েছে বিভিন্ন দামের গাড়ি।
২০১৮ সালে ফারুক চৌধুরী নিজের নগদ টাকা দেখান ৯০ লাখ ৯৫ হাজার। সেবার নির্ভরশীলদের নামে কোনো টাকা ছিল না। গতবার স্ত্রীর নামে ৩৩ লাখ ৯৭ হাজার টাকা ছিল। এবার স্ত্রীর নগদ টাকা কমে হয়েছে ১১ লাখ ৩১ হাজার ১১৪। তবে বেড়েছে নির্ভরশীলদের নামে। শূন্য থেকে নির্ভরশীলদের নামে এবার নগদ জমা হয়েছে ২৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা।
২০১৮ সালে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা অর্থ কিছুই ছিল না। শূন্য থেকে এবার ফারুক চৌধুরীর নামে জমা হয়েছে ৯ কোটি ৩৮ হাজার ৬০৬ টাকা। ২০১৮ সালে ৬৩ লাখ টাকার প্রাইভেট কার, ৬১ লাখ ১৮ হাজার টাকার শুল্কমুক্ত জিপ ও ১৮ লাখ টাকার দুটি ট্রাক ছিল ফারুক চৌধুরীর। এবার নিজের নামে ১৮ লাখ টাকা, স্ত্রীর নামে ১৯ লাখ ৭৪ হাজার টাকা, নির্ভরশীলদের নামে ১৭ লাখ টাকার পরিবহন দেখিয়েছেন তিনি।
২০১৮ সালে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া জমি ছিল ৬০ বিঘা। নির্ভরশীলের নামে কোনো জমি সেবার ছিল না। এবার নিজ নামে আগের ৬০ বিঘা জমির সঙ্গে নির্ভরশীলদের নামে আরও ৬০ বিঘা জমি দেখিয়েছেন তিনি। পাঁচ বছর আগে তার অকৃষিজমি ছিল ১০ বিঘা। এবার তার অকৃষিজমি ৭ লাখ ৫৫ হাজার টাকার।
২০১৮ সালে বিসিক শিল্পনগরীতে ১৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকার বিনিয়োগ দেখান। এবার দেখান ৮৫ লাখ টাকার বিনিয়োগ, অর্থাৎ বিসিকে বিনিয়োগ বেড়েছে প্রায় ৬৯ লাখ টাকা।
একাদশ নির্বাচনের সময় ঢাকার মোহাম্মদপুরে ফ্ল্যাট ক্রয়ে বিনিয়োগ ছিল তার নিজের ৮ লাখ ৫০ হাজার ও ৩৫ লাখ টাকা এবং স্ত্রীর ৬৫ লাখ টাকা। এবার নিজ নামে ৯৬ লাখ ৮০ হাজার ও স্ত্রীর নামে ৬৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ দেখিয়েছেন তিনি।
হলফনামার বিষয়ে কথা বলার জন্য ওমর ফারুক চৌধুরীর নম্বরে ফোন দেওয়া হলে পাওয়া যায়নি। তাই এ বিষয়ে তার বক্তব্য নেওয়া যায়নি।
অন্যদিকে, রাজশাহী-১ আসন থেকে নির্বাচন করছেন বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের প্রার্থী বশির আহমেদ। তার পেশা দেখিয়েছিলেন বেসরকারি চাকরি। বাৎসরিক আয় দেখান ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। তার কাছে নগদ টাকা আছে ৬ লাখ ৮০ হাজার। এছাড়াও তার স্বর্ণালংকার আছে ৫ লাখ টাকার। ইলেট্রনিক্স সামগ্রী আছে দেড় লাখ টাকার। আসবাবপত্র অর্ধ লাখ টাকার ও অন্যান্য আছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার। শিক্ষাগত যোগ্যাতা এমএ পাশ।
এই আসন থেকে নির্বাচন করছেন ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রার্থি নুরুননেসা। শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি পাশ। কৃষিখাত থেকে বাৎসরিক আয় দেখিয়েছেন এক লাখ টাকা। নগদ টাকা আছে ৫০ হাজার। কৃষি জমি আছে দুই বিঘা।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট থেকে নির্বাচন করছেন আল সাদ। শিক্ষাগত যোগ্যতা এমবিবিএস ও এমএস। পেশায় চিকিৎসক এই প্রার্থীর বাৎসরিক আয় ৪ লাখ ২৬ হাজার ৬৬৭ টাকা। নগদ টাকা আছে এক লাখ। ব্যাংকে জমা আছে ১৭ লাখ ৯০ হাজার টাকা। স্বর্ণ আছে পাঁচ ভরি। আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী আছে দেড় লাখ টাকার।
স্বশিক্ষিত তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী জামাল খান দুদু। পেশায় ব্যবসায়ী এই প্রার্থীর বাৎসরিক আয় ৩ লাখ টাকা। নগদ টাকা আছে ১ লাখ ও ব্যাংকে জমা আছে ২ হাজার ৪৩৮ টাকা। স্ত্রীর নামে স্বর্ণ আছে ২ ভরি। এছাড়া আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী আছে অর্ধ লাখ টাকার। প্রার্থীর নামে কৃষি জমি আছে ১৩ শতক ও স্ত্রীর নামে আছে ১ কাঠা।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রার্থী শামসুজ্জোহা বাবু। শিক্ষাগত যোগ্যতা ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং। পেশায় শিক্ষক ও ব্যবসায়ী। বাৎসরিক আয় ৬ লাখ ৯ হাজার ৫৮৮ টাকা। প্রার্থীর একটি মোটরসাইকেল ও এক ভরি স্বর্ণ আছে। এছাড়া স্ত্রীর নামে স্বর্ণ আছে ৯ ভরি। ইলেকট্রনিক্স ও আসবাবপত্র আছে সাড়ে ৩ লাখ টাকার।
আর জাতীয় পার্টির প্রার্থী শামসুদ্দিনের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্বশিক্ষিত। কৃষিখাত ও ব্যবসা থেকে বাৎসরিক আয় ৪ লাখ ৫ হাজার টাকা। নগদ টাকা আছে ২ লাখ ও ব্যাংকে আছে ১ লাখ টাকা। আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী আছে দেড় লাখ টাকার।