Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৫ ডিসেম্বর ১৯৭১— জাতিসংঘে আমেরিকার অপতৎপরতা, রাশিয়ার ভেটো

আসাদ জামান
৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:৫৭

১৯৭১ সালের ৫ ডিসেম্বর। এই দিন মিত্রবাহিনী ঢাকার আকাশ পুরোপুরি দখল করে নেয়। ফলে, বাংলাদেশ নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। জাতিসংঘে বাংলাদেশকে নিয়ে তৈরি হয় বিতর্ক। মার্কিন সরকারের বিশেষ উদ্যোগে জাতিসংঘে নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশন বসে। এতে যুদ্ধ বিরতির জন্য মার্কিন প্রতিনিধি সিনিয়র বুশের চেষ্টায় সোভিয়েত প্রতিনিধি কমরেড মালিক ভেটো প্রদান করেন।

ভেটো প্রয়োগের আগে কমরেড মালিক বলেন, ‘পাকিস্তান সামরিক জান্তার নিষ্ঠুর কার্যকলাপের ফলই পূর্ব বাংলার বর্তমান পরিস্থিতি উদ্ভব হয়ছে।’

বিজ্ঞাপন

মূলত এদিন থেকে বাংলাদেশ নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মূল লড়াইটা শুরু হয় দুই পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল বাংলাদেশের পক্ষে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল পাকিস্তানের পক্ষে। আর বাংলাদেশ সম্পর্কিত তৃতীয় প্রস্তাবটি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপন করে বেলজিয়াম, ইতালি ও জাপান। জাতিসংঘে চীনের প্রতিনিধিরা বলেন, ‘কোনো শর্ত ছাড়াই পাকিস্তান থেকে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার করতে হবে।’

আন্তর্জাতিক অঙ্গনের এই উত্তপ্ত অবস্থার কারণে মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল যেন হারিয়ে না যায়, সে জন্য মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গণি ওসমানী জাতির উদ্দেশে বেতারে ভাষণ দেন।

সারাবাংলার সঙ্গে আলাপচারিতায় সেদিনের স্মৃতি তুলে ধরেন লেফট্যানেন্ট কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীর প্রতীক।

তিনি বলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতিতে নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, স্থলবাহিনী, মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর সমন্বিত ও সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে যুদ্ধে বিজয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু তখনও রাস্তা অনেক বাকি ছিল। আন্তর্জাতিক মহলে তখন অনেকগুলো বিষয় চলছিল। পাকিস্তানকে সমর্থন করছিল আমেরিকা, চীন, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের কিছু দেশ। তারা জাতিসংঘের কাছে যুদ্ধবিরতির সুপারিশ করেছিল। তখন আমাদের মুজিবনগর সরকার কলকাতার ৮ নম্বর থিয়েটার রোড থেকে কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছিল বিভিন্ন দেশে।’

বিজ্ঞাপন

কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বলেন, ‘আমরা দেখেছি, বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন অঞ্চলে বাংলাদেশের স্বীকৃতির জন্য সুপারিশ করা হচ্ছিল। তখন শোনা যাচ্ছিল যে, কিছু দেশ হয়ত আমাদের স্বীকৃতি দেবে। আমরা আশা করছিলাম আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেলে আমাদের মনোবল বেড়ে যাবে। সে কাজে ভারত আমাদের অনেক সহযোগিতা করেছিল। ভারত ও ভুটান আমাদের স্বীকৃতি দিলো। আন্তর্জাতিক মহলে আমাদের একটি সঠিক পদক্ষেপ বাস্তবায়ন হলো। এর ফলে মুক্তিযুদ্ধ আরও আরও গতি পেল।’

এর আগে, ৩ ডিসেম্বর রাত ১টায় বিমান হামলা শুরু করে বাংলাদেশ ও ভারতীয় বিমান বাহিনী। ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ ও মিত্র বিমানবাহিনী অবরুদ্ধ বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ২৩০ বার হানা দেয়। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী সিলেট সেক্টরে বোমাবর্ষণ করে শত্রুর পাঁচটি বাংকার উড়িয়ে দেয়। জামালপুর বিমান হামলায় হানাদার বাহিনীর কয়েকশ সৈন্য নিহত হয়, বিধ্বস্ত হয় বহু সামরিক যানবাহন। এদিন চট্টগ্রামে পাকিস্তান নৌবাহিনী ও যৌথ নৌবাহিনীর যুদ্ধ জাহাজগুলোর মধ্যে তুমুল যুদ্ধ হয়। বখশীগঞ্জে যৌথ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয়।

মুক্ত হয় উত্তরবঙ্গের পীরগঞ্জ, হাতিবান্ধা, পচাগড়, বোদা, ফুলবাড়ী, বীরগঞ্জ ও নবাবগঞ্জ। আর জীবননগর, দর্শনা ও কোটচাঁদপুরে পাক হানাদার বাহিনী মিত্রবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে টিকতে না পেরে আত্মসমর্পণ করে।

কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বলেন, ‘৫ ডিসেম্বর চৌগাছাতে ট্যাংক যুদ্ধের সূচনা হয়। সে যুদ্ধে ভারতের ট্যাংক রেজিমেন্ট যুদ্ধ করে। তাদের সঙ্গে অবস্থান নিয়েছিল ৮ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা এবং আরেকটা সেনাদল এগিয়ে যায় যশোর এক্সিসের দিকে। সেদিন যশোর বিমানবন্দরের ওপরে আর্টিলারি ও মর্টার সেলের প্রচণ্ড গোলাবর্ষণ হয়। কারণ, সেখানে পাকিস্তানিদের শক্ত অবস্থান ছিল। তারাও যুদ্ধে লড়ে যাচ্ছিল।’

সারাবাংলা/এজেড/একে

৫ ডিসেম্বর ১৯৭১