চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ড পেল আসামবস্তি-কাপ্তাই সংযোগ সড়ক
৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ২২:৪৭
রাঙ্গামাটি: ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই সৌন্দর্য ও নান্দনিকতার অপূর্ব সমন্বয়ে পরিণত হয়েছে রাঙ্গামাটির আসামবস্তি-কাপ্তাই সংযোগ সড়ক। পুরো সড়কের একদিকে বিস্তীর্ণ কাপ্তাই হ্রদ, আরেকদিকে সবুজ ঘেরা পাহাড়। সবুজ পাহাড় আর নীল জলরাশির হ্রদের ‘বুক চিরে’ জেগে ওঠা ১৮ কিলোমিটার সড়কটি দুই লেনে উন্নীত করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)।
নান্দনিক এই সড়কটি সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যাওয়ার্ডে প্রকল্প হিসেবে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এলজিইডির প্রকৌশলীরা বলছেন, এটি পুরো বিভাগের জন্যই বড় একটি সাফল্য।
প্রকল্পটির ম্যানেজার হিসেবে চ্যাম্পিয়ন পুরস্কার অর্জন করেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) রাঙ্গামাটি কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আহামদ শফি। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে রাজধানী ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী মো. আলি আখতার হোসেনের কাছে পুরস্কারটি তুলে দেন প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট (পিএমআই) বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট অন্বেষা আহমেদ।
পুরস্কার নেওয়ার সময় এলজিইডির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ নুর হোসেন হাওলাদার, রাঙ্গামাটি এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আহামদ শফি, রাঙ্গামাটি অফিসের সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী যুগল কৃষ্ণ মণ্ডল, সদর উপজেলা প্রকৌশলী প্রনব রায় চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট (পিএমআই) বাংলাদেশ চ্যাপ্টার প্রতিবছরই দেশের ভৌত অবকাঠামো ও যোগাযোগব্যবস্থার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ, জনবান্ধব ও সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়ে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার দিয়ে থাকে। এবারের ২০২৩ সালের ‘সোস্যাল ইমপ্যাক্ট’ ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশে চ্যাম্পিয়ান হয়েছে রাঙ্গামাটির ‘আসামবস্তি-কাপ্তাই সড়ক’।
১৮ কিলোমিটার নান্দনিক সড়কটি সম্প্রসারণ করেছে এলজিইডি রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা দফতর। এ প্রসঙ্গে উপজেলা প্রকৌশলী প্রনব রায় চৌধুরী বলেন, ‘এবারের বাংলাদেশ প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যাওয়ার্ডে দেশের ৪৪টি প্রতিষ্ঠান ও দফতর আবেদন করেছিল। এর মধ্যে সামাজিক ইমপ্যাক্টের ওপর এবারে আমাদের আসামবস্তি-কাপ্তাই সড়ক প্রকল্পটি চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরব ও আনন্দের। পুরো বিভাগের জন্য এই প্রকল্প সাফল্য বয়ে এনেছে।’
এই প্রকৌশলী বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমরা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার প্রচেষ্টা করেছি। পুরো ১৮ কিলোমিটার সড়কটি এক লেনের সড়ক থেকে দুই লেনে উন্নীত করা হয়েছে, রয়েছে তিনটি নান্দনিক আরসিসি গার্ডার সেতুও। ৪১ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের প্রকল্পটি সম্পন্ন শেষে এলজিইডির তিন কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে বলে দাবি করেন এই প্রকৌশলী।
প্রজেক্ট ম্যানেজার ও এলজিইডি রাঙ্গামাটির নির্বাহী প্রকৌশলী আহমদ শফি বলেন, ‘রাঙ্গামাটির মতো দুর্গম এলাকার একটি প্রকল্প আন্তর্জাতিক পুরস্কার জিতেছে, এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। পুরো কাজটি সম্পন্ন করতে টিমের সবাই অনবদ্য সহযোগিতা করেছেন। এই পুরস্কার আমাদের দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।’
এলজিইডি রাঙ্গামাটি সদর দফতর জানিয়েছে, ২০১৭ সালে রাঙ্গামাটিতে ভয়াবহ পাহাড়ধসের কারণে আসামবস্তি-কাপ্তাই সড়কটির বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। এর সঙ্গে ছিল প্রচুর খানাখন্দ। ফলে সড়কটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। পরে সড়কটি সংস্কার ও এক লেন থেকে দুই লেনে উন্নীত করার প্রকল্প হাতে নেয় এলজিইডি। ২০২১ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পর কাজ শেষ হয়েছে গত জুনে।
রাঙ্গামাটিতে পর্যটক ও স্থানীয়দের ভ্রমণে পছন্দের শীর্ষে থাকে আসামবস্তি-কাপ্তাই সংযোগ সড়কটি। সংস্কারের পর সড়কটির সৌন্দর্য আরও বেড়েছে। গত কয়েক বছরে রাঙ্গামাটি সদরে যে কটেজ-রিসোর্টগুলো গড়ে উঠেছে, তার ৮০ শতাংশই এই সড়কটি ঘিরে। এলজিইডি জানিয়েছে, সড়কটির সৌন্দর্যবর্ধনে আরও কাজ করবে তারা।
সারাবাংলা/টিআর