Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৮ ডিসেম্বর ১৯৭১— হানাদারদের দিকে বিমান থেকে আত্মসমর্পণের বার্তা

আসাদ জামান
৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:১৮

১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সব জায়গায় পরাস্ত, সারা বাংলাদেশে তারা অবরুদ্ধ। আত্মসমর্পণ করছে অথবা আত্মসমপর্ণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এদিন হানাদার বাহিনীকে লক্ষ্য করে বিমান থেকে আত্মসমর্পণের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়। দলখলদার বাহিনীর উদ্দেশে যৌথ বাহিনীর অধিনায়ক জেনারেল মানেকশ’র লেখা ওই বার্তায় দ্রুত আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয়। সেইসঙ্গে এ আশ্বাসও দেওয়া হয় যে, আত্মসমর্পণ করলে তাদের প্রতি জেনেভা কনভেনশনের রীতি অনুযায়ী সম্মানজনক আচরণ করা হবে।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধারা চাচ্ছিলেন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এভাবে সারেন্ডার না করুক। যুদ্ধের মাধ্যমে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করে জীবনের তরে বাংলার মাটিতে তাদের উচিত শিক্ষা দেওয়া ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের মূল উদ্দেশ্য। মুক্তিযোদ্ধাদের মনের এই অবস্থা ঠিকই বুঝে ফেলেছিল মিত্রবাহিনী। অতঃপর স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্ত এলাকার জনগণের উদ্দেশে শৃঙ্খলা বজায় রাখার নির্দেশনা প্রচার করে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার।

বিজ্ঞাপন

এদিন তিনটি গুরুত্বপূর্ণ শহরে পতন হয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর। কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চাঁদপুর, তথা বৃহত্তর কুমিল্লা মুক্ত হয়। তবে, অবরুদ্ধ ময়নামতি ক্যান্টনমেন্টে তখনও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নিষ্ক্রিয় অবস্থান ছিল। কুমিল্লা বিমান বন্দরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অবস্থানের ওপর মুক্তিসেনারা আর্টিলারি আক্রমণ চালিয়ে শেষ রাতের দিকে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করে। রাতব্যাপী প্রচণ্ড যুদ্ধে ২৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। হানাদার বাহিনীর কতিপয় সেনা বিমান বন্দরের ঘাঁটি ত্যাগ করে শেষ রাতে বরুড়ার দিকে এবং সেনানিবাসে ফিরে যায়। কুমিল্লা বিমানবন্দরের ঘাঁটিতে ধরা পড়া কতিপয় পাকিস্তানি সেনা আত্মসমর্পণ করে।

সেদিন কুমিল্লার রাস্তায় নেমে আসে জনতার ঢল। আপামর জনগণ মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে বরণ করে নেয়। বিজয়ের আনন্দে মিত্রবাহিনীর শিখ সৈন্যদের দুই চোখ ছিল অশ্রুসিক্ত। তবে সে অশ্রু ছিল আনন্দের। বিকেলে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনী জনতার উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে। তৎকালীন পূর্বাঞ্চলের প্রশাসনিক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান জহুর আহমেদ চৌধুরী দলীয় পতাকা এবং মুক্ত কুমিল্লার প্রথম প্রশাসক অ্যাডভোকেট আহমদ আলী বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।

যুদ্ধবিধ্বস্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্ত হওয়ার পর সর্বত্র উড়ানো হয় লাল-সবুজ পতাকা। বিজয়ের আনন্দে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। চাঁদপুরে বিজয়ের সুবাতাস বয়। মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধারা ট্যাংক নিয়ে চাঁদপুরে প্রবেশ করে এবং পলায়নপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর লঞ্চ ডুবিয়ে দেয়। চাঁদপুর সম্পূর্ণ শত্রুমুক্ত হয়।

কিছু বিচ্ছিন্ন জায়গা ছাড়া মেঘনা নদীর পূর্বপার মিত্র-মুক্তিবাহিনীর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর তখনও মুক্ত হয়নি। অবশ্য পাকিস্তানিদের শক্ত ঘাঁটি তিতাস-ডোলভাঙা নদী বেষ্টিত বাঞ্ছারামপুর থানা মুক্তিযোদ্ধারা অবরুদ্ধ করে রাখে।

এদিন যশোর ক্যান্টনমেন্ট মিত্র-মুক্তিবাহিনী দখল করে নেয়। দাউদকান্দি, ইলিয়টগঞ্জ, বিদ্যাকূট, মৌলভীবাজার, শ্রীমঙ্গল, সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), হাজিগঞ্জ, মিরসরাই (চট্টগ্রাম), ঝালকাঠি, কালকিনি (মাদারীপুর), দৌলতপুর (কুষ্টিয়া), মিরপুর (কুষ্টিয়া), মেলান্দহ (জামালপুর), মাগুরা মুক্ত হয়। পাকিস্তান বিমান বাহিনীর সবেধন নীলমনি দুইটি স্যাবার জেট মিত্রবাহিনী ভূপাতিত করে।

শহর-নগর-বন্দর-গ্রাম একের পর এক জয় করে মিত্র ও মুক্তিবাহিনী ঢাকার দিকে ঝড়ের বেগে এগিয়ে আসতে থাকে। দেশের নানা প্রান্ত থেকে বিজয় ও মুক্ত এলাকার তাজা খবর আসতে থাকায় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে যৌথবাহিনীকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত রক্তগরম করা রণসংগীত বাজাতে থাকে।

সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম

৮ ডিসেম্বর ১৯৭১ আত্মসমর্পণ বার্তা মিত্রবাহিনী হানাদার বাহিনী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর