‘মানবাধিকারের নামে দেশের পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চক্রান্ত হচ্ছে’
৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৯:০৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবসকে সামনে রেখে দেশের পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চক্রান্ত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী একথা বলেন। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মানবাধিকার একটি ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। মানবাধিকারের কথা বলে এখন কোনো কোনো দেশকে দমন করে রাখার চেষ্টা করা হয়। পৃথিবীতে কিছু মানবাধিকার সংগঠন আছে, যেগুলো মূলত মানবাধিকারের ব্যবসা করে। বিশ্ব মানবাধিকার দিবসকে সামনে রেখে দেশের পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চক্রান্ত হচ্ছে।’
‘ফিলিস্তিনে পাখি শিকার করার মতো মানুষ মারা হচ্ছে, মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কোনো বিবৃতি নেই। আমাদের দেশে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে, কিন্তু বিবৃতিজীবীরা হারিয়ে গেছেন। অথচ সন্ত্রাসীর মানবাধিকার নিয়েও কেউ কেউ সোচ্চার হয়। কিন্তু সেই সন্ত্রাসী যে এত মানুষ মারল, সেটি নিয়ে কোনো কথাবার্তা নেই। বরিশালে একজন আরেকজনকে ঘুষি মারল এবং কোথায় কিছু মানুষ একজনকে ধাওয়া করল সেজন্য বিবৃতি দিল। আমি কথাগুলো বলছি, কারণ ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস।’
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর থেকে সামরিক শাসনামলে মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের বিনা বিচারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা, একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা এবং ২০১৩ থেকে ১৫ সালে মানুষ পুড়িয়ে হত্যার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এগুলোই চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ হরতাল-অবরোধের ডাক দিতে পারে, সরকার পতনের ডাক দিতে পারে, সরকারের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখতে পারে, এটিই গণতান্ত্রিক ও বহুমাত্রিক সমাজের রীতি। কিন্তু ঘরে বসে সেই ডাক দিয়ে গাড়ির মধ্যে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করা, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা, সেটি তো কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নয়। এগুলো একদিকে যেমন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, অপরদিকে মানুষের অধিকার এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করা।’
এর বিরুদ্ধে সোচ্চার না হওয়ায় ‘বুদ্ধিজীবীদের’ সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘কিছু বিবৃতিজীবী আছেন, বিবৃতি দেওয়ায় তাদের পেশা। বাংলাদেশেও কিছু বিবৃতিজীবী আছেন। ইদানিং অবশ্য তাদের দেখা যাচ্ছে না, বিবৃতিজীবীরা বেশিরভাগ হারিয়ে গেছেন। দেশে যেভাবে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে, সবসময় যারা এ ধরনের বিবৃতি দেন, তাদের বিবৃতি এখন দেখতে পাচ্ছি না। এই বিবৃতিজীবীরা কই ? জনগণ এদের খুঁজছে, আমিও তাদের খুঁজছি। আমি একটু উদ্বিগ্ন তাদের জন্য। তারা জ্বর কিংবা ডেঙ্গুতে আক্রন্ত হলো কি না, তা নিয়ে মানুষ চিন্তায় আছে।’
শ্রমিক অধিকারের নামে বিদেশি শক্তির এজেন্ট হিসেবে কেউ কাজ করছে কি না, এমন প্রশ্ন করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আলপনা আক্তার, কল্পনা আক্তার, জল্পনা আক্তাররা বছরে ১২ বার বিদেশ গেছে, ১৮-২০ লক্ষ টাকা বিমান ভাড়া দিয়েছে। এদের কারো কারো আবার গাড়ি আছে, ঢাকা শহরে বড় বড় ফ্ল্যাট আছে। শ্রমিক সমাবেশে যাবার সময় কিছু দূরে গাড়ি রেখে হেঁটে কিংবা রিকশায় যান, যদি শ্রমিকরা গাড়ি দেখে ফেলে। এরা কার এজেন্ট হিসেবে কাজ করে সেটি আজ স্পষ্ট। এসব এজেন্টের ব্যাপারেও আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আমি সাংবাদিক সমাজের কাছে অনুরোধ করবো, তাদের মুখোশ উন্মোচন করার জন্য।’
চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) সভাপতি তপন চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ শহীদুল আলম, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আলী আব্বাস ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য কলিম সরওয়ার, সিইউজের সাধারণ সম্পাদক ম শামসুল ইসলাম, সিনিয়র সহসভাপতি রুবেল খান, সহসভাপতি অনিন্দ্য টিটু।
সারাবাংলা/আরডি/এনইউ