১১৬ বছরের পুরোনো এক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সাফল্যগাঁথা
১০ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:১০
রাঙ্গামাটি: ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দের ৯ ডিসেম্বর যাত্রা শুরু করেছিল চন্দ্রঘোনা খ্রিস্টিয়ান হাসপাতাল। হাসপাতালটি গতকাল ১১৭ বছরে পা দিয়েছে। ব্রিটিশ সরকারের শাসনামলে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলার কর্ণফুলী নদীর পাড়ে চন্দ্রঘোনা খ্রিস্টিয়ান হাসপাতালটির প্রতিষ্ঠা করে ইংল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান ব্যাপ্টিস্ট মিশনারি সোসাইটি (বিএমএস)। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ব্যাপ্টিস্ট চার্চ সংঘের (বিবিসিএস) কাছে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির হস্তান্তর করে দেয় ইংল্যান্ডের বিএমএস। বর্তমানে এটি বিবিসিএস’র মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে।
হাসপাতালটির প্রতিষ্ঠাকালীন সময় ১৯০৭ থেকে ১৯০৯ পর্যন্ত পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন ডা. জিও টেইলর। ষষ্ঠ পরিচালক হিসেবে প্রথম বাংলাদেশি ডা. এসএম চৌধুরী দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৫ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৩৭ বছর দায়িত্বে ছিলেন। নবম পরিচালক হিসেবে বর্তমানে পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন ডা. প্রবীর খিয়াং।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে এটি ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বছরে আন্তঃবিভাগে প্রায় ৫ হাজার রোগী এবং বর্হির্বিভাগে প্রায় ২০ হাজার রোগীর চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। এখানে বছরে ২০ লাখ টাকা সমমানের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়ে থাকে।
কুষ্ঠ নিয়ন্ত্রণে সাফল্যগাঁথা
চন্দ্রঘোনা খ্রিস্টিয়ান হাসপাতালে ১৯১৩ সালে কুষ্ঠ চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে বৃহত্তর চট্টগ্রামের তিন কোটি জনগোষ্ঠীর জন্য এটিই একমাত্র বিশেষায়িত কুষ্ঠ চিকিৎসা হাসপাতাল। প্রতি বছর প্রায় ২৫০ জনের ওপর কুষ্ঠরোগী বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেন। এখানে বিনামূল্যে সব ধরনের প্রয়োজনীয় পরীক্ষা, চিকিৎসা, খাবার ও থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও রোগীদের বিকলাঙ্গতা প্রতিরোধের জন্য উপকরণও দেওয়া হয়।
নার্সিং সেবা অন্তর্ভুক্তকরণ
১৯৩৭ সালে চন্দ্রঘোনা খ্রিস্টিয়ান হাসপাতালে প্রতিষ্ঠিত হয় নার্সিং ট্রেনিং ইনস্টিটিউট। এটি অবিভক্ত ভারতবর্ষের অন্যতম প্রাচীন প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে অগণিত সেবক-সেবিকা বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মরত রয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটি এখানে পার্বত্য চট্টগ্রামের অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণে অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে।
প্রতিষ্ঠানটির তথ্য মতে, এ পর্যন্ত আনুমানিক ছয় হাজার ছাত্র-ছাত্রী ট্রেনিং শেষ করে দেশের সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবায় অবদান রেখে যাচ্ছে। এখানে দুই ধরনের কোর্স পরিচালিত হচ্ছে। একটি হলো ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সাইন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কোর্স এবং আরেকটি হলো ১৮ মাস মেয়াদি মিডওয়াইফারি কোর্স।
জানতে চাইলে চন্দ্রঘোনা খ্রিস্টিয়ান হাসপাতালের পরিচালক ডা. প্রবীর খিয়াং সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের কুষ্ঠ রোগের হাসপাতালটি পুরোপুরি বিদেশি সহায়তার ওপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু ২০০৯ সাল থেকে বিদেশি অর্থায়ন বন্ধ রয়েছে। কুষ্ঠ রোগীদের ওষুধ, চিকিৎসা ও খাবারসহ অন্যান্য বিষয়টি আমাদের হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে সরবরাহ করতে হয়। যে কারণে আমাদের জেনারেল হাসপাতালের ওপর চাপ পড়ে। বছরে কুষ্ঠ হাসপাতালের জন্য ৫০-৬০ লাখ টাকা খরচ হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের নার্সিং ইনস্টিটিউটটি ভারতবর্ষে অনেক প্রাচীন একটি প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে এখানে ভবন সংকট রয়েছে। নতুন একটি স্থায়ী ভবন হলে আমরা আরও কয়েকটি কোর্স চালু করতে পারতাম।’ এছাড়া হাসপাতালে স্টাফদের অন্যান্য হাসপাতালের মতো বেতন স্কেল দিতে পারে না বলেও জানান তিনি।
সারাবাংলা/পিটিএম