উত্তরবঙ্গ গরু মেলার আকর্ষণ ছিল র্যাম্প শো
১০ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৩:৩৯
বগুড়া: জেলায় দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়েছে উত্তরবঙ্গ গরু মেলা। উত্তরবঙ্গ মেলা বলা হলেও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে খামারিরা এতে অংশ নিয়েছিলেন। দেশি-বিদেশি নানা জাত ও নামের প্রায় সাড় ৪ শতাধিক সৌখিন গরু-মহিষের সঙ্গে পোষা বিড়াল, আকর্ষণীয় মূল্যবান পাখিসহ অনেক ধরনের পশুপাখি এই মেলায় প্রদর্শন করা হয়। বিশেষভাবে সাজানো ছিল ‘গরুর র্যাম্প শো’। যা মেলায় আসা ক্রেতা-বিক্রেতা ও দর্শকদের বিনোদনের নতুন মাত্রা এনে দেয়। র্যাম্প শো’র মঞ্চ ছিল দর্শকে ভরা।
চারদিকে আলোকচ্ছটার মাঝে প্রদর্শন করা হয় গরু। অনেকটা প্রাচীন গ্রিক থিয়েটারের মতো মঞ্চ। তবে আর সাধারণ র্যাম্প শো’র মতো নয়, বাদ্যের তালে তালে গরু নিয়ে বৃত্তাকার জায়াগায় হেঁটে যাওয়া, আর গরুর মূল্যসহ খুঁটিনাটি উপস্থাপন করা হয়। সকাল থেকে গরু মেলা শুরু হলেও বেলার বাড়ার সঙ্গে ক্রেতা, দর্শক ও খামারিদের সংখ্যা ছিল উল্লেখ করার মতো। মেলার প্রথম দিনে ৩ লাখ টাকার ছাগল ও ৫০ লাখ টাকার গরু উঠেছিল। গত শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুর শুরু হয়ে দুই দিনের এই মেলা শেষ হয় গতকাল শনিবার (৯ ডিসেম্বর) রাতে।
বগুড়ার মমইন ভিন্ন জগতের মাঠে এই মেলার আয়োজন করে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মাস অ্যাসোসিয়েশন (বিডিএফ)। আয়োজকরা জানান, বড় খামারি, ক্রেতা ও ক্ষুদ্র খামারিদের সঙ্গে সেতুবন্ধন তৈরিই মেলার মূল উদ্দেশ্য।
মেলায় ওঠা টমটম জাতের একটি গরু বড়ই দুরন্ত। সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখতে হয়। উচ্চতা ৩০ ইঞ্চির বেশি নয়। তারপরেও তাকে নিয়ে দর্শককের আগ্রহ অনেকটাই বেশি। টমটমের মালিক রাজু জানান, দড়ির বাঁধন খুলে দিলে তার পাত্তা পাওয়াই মুশকিল হয়ে দাঁড়াবে। মুহূর্তে হাওয়া হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এধরনের গরুর উচ্চতা যতো কম হবে দরও তত বেশি।
পাবনা থেকে আসা এম আর এগ্রোর রাজু আহম্মেদ জানান, টমটম ভুট্টি জাতের গরু। ভুটানে লালন পালন হলেও এখন বাংলাদেশের খামারগুলোতে সৌখিনতায় এসব গরু পালন হচ্ছে। মেলায় তিনি টমটমের দাম হেঁকেছেন ৩ লাখ। দাম বেশি হওয়ার কারণ সর্ম্পকে জানান, এই গরু তৈরি হতে ৩ থেকে ৪ বছর লাগে। অথচ তার টমটমের উচ্চতা মাত্র ২৬ ইঞ্চি। এর মাংসের স্বাদ সাধারণ গরুর তুলনায় অনেক বেশি। তাই সব মিলিয়ে দামও বেশি।
চোখে পড়ার মতো ছাগল এনেছেন সিরাজগঞ্চের উল্লাপাড়ার মেহিদী হাসান। ইয়া বড় লোম দাড়িতে মুখ থেকে পায়ের পাতা অবধি ঝুলানো। দর্শনীয় এই ছাগল কাশ্মীরি ছাগল হিসাবে পরিচিতি বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ঢাকাতেও তার ফার্ম রয়েছে। দু’টি ছাগলের দাম হেঁকেছেন ৬ লাখ টাকা। এক একটি ছাগলের দাম ৩ লাখ টাকা করে।
মেলায় শাহীওয়াল গরু থেকে ব্রাহামা, ফ্রিজিয়ান, গীর, ওস্ট্রাল, পাহাড়ি গয়াল ও ইন্দোনেশিয়ান অ্যানবিনোসহ বিভিন্ন প্রজাতির বিদেশি দর্শনীয় মহিষ ও বিভিন্ন জাতের গরু এই মেলায় স্থান পায়। এর সঙ্গে দর্শকদের আকর্ষণ করতে রাখা হয়েছিল ম্যাকাও পাখি থেকে শুর করে বিদেশি বুনো মোরগ, ময়ুর, বিদেশি কুকুর ও বিড়াল।
খামারি রাহাত খান জানান, তার ব্রাহামা জাতের গরুটি সরাসরি আমেরিকার টেক্সাস থেকে আনা। দাম ধরেছেন ৫০ লাখ টাকা। অ্যানোবিনো মহিষের দাম চেয়েছেন ৭ লাখ।
ঠাকুরগাঁওয়ের খামারি ফজলে এলাহী সাকিব নানা জাতের গরুর সঙ্গে আনেন নিলীরাভি মহিষ। দাম ৬ লাখ টাকা। ঢাকার দিয়াবাড়ী থেকে খামারি মমিনুর রহমান এনেছেন দর্শনীয় কংরাস জাতের গরু। দাম হেঁকেছেন ১৫ লাখ। এনেছেন সিমেন্টাল জাতের গরুও। মেলায় ওঠা গরুর মূল্য আড়াই লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত বলে জানান আয়োজকরা।
পাবনার ঈশ্বরদীর বিসমিল্লাহ অ্যাগ্রোর পাভেল সাজিয়ে এনেছেন শিংওয়ালা গরু কাঙ্ক্ষারাজ। জানালেন, মেলায় তিনি অবশ্যই পুরস্কার পাবেন। এতোবড় শিংওয়ালা গরু আর কেই আনেননি। বিপুল সজ্জায় এনছেন উলবাড়ি নামের ষাড়। দু’টি গরুই ভারত থেকে আনা। মেলায় প্রবেশের পর এর সাজ সজ্জা ও বিশাল শিংওয়ালা গরু দেখতে দর্শকদের ভিড় জমে গেলে স্টলে প্রবেশের আগেই।
সিরাজগঞ্জের এক ছোট খামারি আবু হাসান মাস্টার জানান, মেলায় স্টল ভাড়া কমালে তাদের মতো বাড়িতে গড়ে তোলা ছোট খামারিদের জন্য ভালো হতো।
আয়োজকদের মধ্যে অন্যতম তৌহিদ পারভেজ বিপ্লব জানান, মেলায় স্টলের সংখ্যা ১৯০টি থাকার কথা থাকলেও তা বাড়িয়ে ২১৬টি করা হয়েছে। এতে স্থান পেয়েছে সাড়ে ৪ শতাধিক গরু। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মেলায় গরু নিয়ে আসা খামারিদের পুরস্কৃত করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মোট ৭৫টি পুরস্কার দেওয়া হবে। মেলায় অন্তত ১৫ কোটি টাকার গরু বেচা কেনা হবে বলে তাদের ধারণা।
এই মেলায় বিপুল রেকর্ড পরিমাণ দর্শকের সমগম হয়েছে। গত শুক্রবার সকালে মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বগুড়া সদর আসনের সংসসদ সদস্য রাগেবুল আহসান রিপু, মৎস ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশিদ, মহাপরিচালক ডা. মো. এমদাদুল হক, বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মাস অ্যাসোসিয়েশনের ইমরান হোসেন প্রমুখ।
সারাবাংলা/এনএস