প্রতিমন্ত্রী পলকের সম্পদ বেড়েছে ১০০ গুণ, স্ত্রীর ১৬৭ গুণ
১১ ডিসেম্বর ২০২৩ ১০:০৩
রাজশাহী: আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নাটোর-৩ (সিংড়া) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সম্পদ ও বার্ষিক আয় গত ১৫ বছরে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে তিনি ধার করে নির্বাচন করেছিলেন। তিন জাতীয় নির্বাচন শেষে এই এমপির স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ১০০ গুণ। তার বার্ষিক আয়ও বেড়েছে ২৭ গুণ। আর স্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে ১৬৭ গুণ। নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামা থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
পলক নাটোর-৩ আসনে তিন বারের সংসদ সদস্য ও দুই বারের প্রতিমন্ত্রী। হলফনামায় নিজেকে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী উল্লেখ করেছেন তিনি। তার স্ত্রী আরিফা জেসমিন কণিকা একজন নারী উদ্যোক্তা। পলক ও তার স্ত্রীর মালিকানায় নগদ অর্থ ছাড়াও রয়েছে বাড়ি, গাড়ি ও বৈধ অস্ত্র। পলকের নারী উদ্যোক্তা স্ত্রী ১৫ বছরে প্রায় তিন কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।
হলফনামা অনুযায়ী, ২০০৮ সালে তার বাষির্ক আয় ছিল ৫৮ হাজার টাকা। ২০২৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ লাখ ২২ হাজার ২৬৮ টাকাতে। ২০০৮ সালে তার স্থাবর সম্পদের মূল্য ছিল ১৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা। ২০২৩ সালে হয়েছে ৭৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকার। ২০০৮ সালে অস্থাবর সম্পদ ছিল না প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকের। ২০২৩ সালে তার অস্থাবর সম্পদ হয়েছে ৩ কোটি ২৩ লাখ ৬২ হাজার ১৭৭ টাকা।
হলফনামায় দেখা গেছে, ২০০৮ সালে পলকের স্ত্রীর কোনো আয় ছিল। ২০২৩ সালে বার্ষিক আয় হয়েছে ১৮ লাখ ৬৭ হাজার ১২৭ টাকা। পলকের স্ত্রীর স্থাবর সম্পদ আছে ৭৬ লাখ ৬৫ হাজার টাকার। অস্থাবর সম্পদ আছে ২ কোটি ৬২ লাখ ৬৮ হাজার ৬২৬ টাকা।
নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা এবারের হলফনামায় পলক উল্লেখ করেছেন, তার কাছে নগদ টাকা আছে ১ কোটি ১৭ লাখ ৪১ হাজার ১১২ টাকা। তার স্ত্রীর কাছে আছে ৪৫ লাখ ৬৫ হাজার ৯৯১ টাকা। ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় দেওয়া হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেন, সে সময় তার কাছে নগদ টাকা ছিল ৯ লাখ ১৭ হাজার ২৪৩ টাকা। স্ত্রীর ছিল ৬ লাখ ৭৯ হাজার ৫৬০ টাকা। স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই নগদ টাকা বেড়েছে বহুগুণ।
তবে কমেছে পলকের ব্যাংকে টাকার পরিমাণ। ২০১৮ সালে পলকের ব্যাংক হিসাবে ছিল ৬২ লাখ ২৭ হাজার ৬৬৯ টাকা। আর স্ত্রীর ছিল ৩১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৩২ টাকা। এখন পলকের নামে ব্যাংকে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ৬ লাখ ৬৫ হাজার ৫৫০ টাকা। পলকের কমলেও বেড়েছে স্ত্রীর নামে ব্যাংকে থাকা টাকার পরিমাণ। এখন পলকের স্ত্রীর ব্যাংকে আছে ৫৪ লাখ ২০ হাজার ৮০৬ টাকা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে পলকের দাখিল করা হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। হলফনামার তথ্যানুযায়ী, জুনাইদ আহমেদ পলকের কাছে বৈদেশিক মুদ্রা ১০ হাজার ইউএস ডলার রয়েছে। স্থায়ী আমানতে তার মোট বিনিয়োগ করা আছে ১ কোটি ২৫ লাখ ২৯ হাজার ৫১৫ টাকা। তার স্ত্রীর ১ কোটি ৬২ লাখ ৮১ হাজার ৮২৯ টাকা। পলকের ১ কোটি টাকা মূল্যের একটি জিপ গাড়ি রয়েছে। নিজের ২ ভরি ও স্ত্রীর ৩০ ভরি সোনা আছে।
তার ইলেকট্রনিক সামগ্রী ১ লাখ ২ হাজার টাকা ও আসবাবপত্র ২০ হাজার টাকার রয়েছে (উপহার ও প্রতিমন্ত্রী) হতে প্রাপ্ত সামগ্রীর কথাও উল্লেখ রয়েছে। একটি শর্টগান ও একটি পিস্তল আছে, যার মূল্য ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা।
হলফনামায় পেশা হিসেবে পলক আইনজীবী দেখালেও সেখান থেকে তিনি আয় করেন না। কৃষি খাত থেকে বার্ষিক ৪৮ হাজার টাকা, বাড়ি-দোকান-অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া ৬০ হাজার, শেয়ার-সঞ্চয় থেকে ৭ লাখ ৭৫ হাজার ৭৬৪ টাকা, চাকরি (প্রতিমন্ত্রী হিসেবে) থেকে ২১ লাখ ৩৬ হাজার ৫০৪ টাকা এবং টকশো করে ২ লাখ ২ হাজার টাকা বছরে আয় করেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রীর স্ত্রী কৃষি খাত থেকে ১ লাখ ৯০ হাজার ৮৯০ টাকা, বাড়ি-দোকান-অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া থেকে ৫ লাখ ৭৬ হাজার টাকা এবং শেয়ার-সঞ্চয় থেকে ১১ লাখ ২৩৭ টাকা আয় করেন।
প্রতিমন্ত্রীর নামে কৃষি জমি ২ দশমিক ৪৩ একর, অকৃষি জমি সিংড়ায় শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ এবং পূর্বাচলে রাজউকের ১০ কাটা প্লট রয়েছে। ৪ শতাংশ জমির ওপর দোতলা পৈতৃক বাড়ি, যার নিচে চারটি দোকান ও একটি গুদাম প্রতিমন্ত্রীর নামে রয়েছে। এছাড়া স্ত্রীর বাড়িতে ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ ও মধুমতি ব্যাংক লিমিটেড মতিঝিল শাখা থেকে গাড়ির লোন ৫ লাখ ৩২ হাজার ৮৬১ টাকা ‘দায়’ এর কথা উল্লেখ রয়েছে হলফনামায়।
২০১৩ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাখিলকৃত হলফনামায় পলক বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন ১৮ লাখ ২ হাজার ৭৫২ টাকা। তার স্ত্রীর ৭ লাখ ৮ হাজার ৩০০ টাকা। অস্থাবর সম্পদ হিসেবে সেসময় প্রতিমন্ত্রীর কাছে নগদ টাকা ছিল দুই লাখ। ব্যাংকে ছিল ৪ লাখ ৬১ হাজার ৪০৪ টাকা, শেয়ার ৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকা, একটি গাড়ি ছিল, যার মূল্য ৪৪ লাখ ৫৪ হাজার ৬৬২ টাকা। একটি শর্টগান ও একটি পিস্তল ছিল, যার মূল্য ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা।
স্থাবর সম্পদ হিসেবে সে সময় প্রতিমন্ত্রীর নামে ছিল কৃষি জমি ৭ বিঘা ১১ শতাংশ, অকৃষি দান সূত্রে ৪ শতাংশ ও একটি দোতলা বিল্ডিং ও চারটি দোকান।
সারাবাংলা/পিটিএম