ঐতিহ্যবাহী দুটি মন্দির থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ
১১ ডিসেম্বর ২০২৩ ২২:০৭
ঢাকা: হবিগঞ্জের সদর উপজেলায় লুকড়া গ্রামের শ্রী শ্রী গোপাল জিউর আখড়া (মন্দির ও শ্মশান) এবং হবিগঞ্জের সদর উপজেলায় রিচি গ্রামের বৈষ্ণব আখড়ার (মন্দির ও শ্মশান) জায়গা দখল করে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের এই আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। আর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত করে বাদী পক্ষকে ১৫ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে করা এক রিটের শুনানি নিয়ে সোমবার (১১ ডিসেম্বর) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।
রুলে মন্দির ও শ্মশানের জায়গা পুনরুদ্ধারে বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন বেআইনি এবং আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়েছেন আদালত। চার সপ্তাহের মধ্যে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মাহবুবুর রহমান ও টিপু সুলতান।
আদেশের বিষয়টি সারাবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন আইনজীবী টিপু সুলতান। তিনি বলেন, ‘হবিগঞ্জ সদর উপজেলার শত বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী মন্দির ও শ্মশানের জায়গা দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে ১৬ জন ব্যক্তি দখল করে রেখেছেন। এর মধ্যে হবিগঞ্জের সদর উপজেলায় লুকড়া গ্রামের শ্রী শ্রী গোপাল জিউর আখড়ার (মন্দির ও শ্মশান) জায়গা অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে জহির মিয়া মেম্বারসহ একাধিক ব্যক্তি। আর হবিগঞ্জের সদর উপজেলায় রিচি গ্রামের বৈষ্ণব আখড়ার (মন্দির ও শ্মশান) জায়গা জবর দখল করে রেখেছেন ওই এলাকার নূর মোহাম্মদসহ একাধিক ব্যক্তি। মন্দির ও শ্মশানের জায়গার এস এ পর্চা খতিয়ান নং ১, ২৬৬ দাগে মন্দিরের ৩৪ শতক জমি, ও ২৬২ দাগে শ্মশানের ৭০ শতক জমি। যেগুলো নতুন জরিপেও লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। তবে সবগুলোই এখন পর্যন্ত কোন ব্যক্তির নামে করা হয়নি যা খতিয়ান নং ১ এ লিপিবদ্ধ আছে। বর্তমানে মন্দির ও শ্মশানের জমির বৈধ কাগজপত্রে মালিক হয়েও নূর মোহাম্মদ বাস্তবে মন্দির ও শ্মশানের জমিতে অনেকগুলো দোকানপাট তৈরি করে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছে ভাড়া দিয়ে রেখেছেন। এ ছাড়া অবশিষ্ট জমিতে ঘর তৈরি করে পরিবারের লোকজন নিয়ে নিজেই বসবাস করছেন।’
একইভাবে শ্রী শ্রী গোপাল জিউর আখড়ার জায়গা জহির মিয়া মেম্বারসহ একাধিক ব্যক্তি অবৈধভাবে দখল করে ব্যবহার করছেন। তাই ওই দুটি মন্দির ও শ্মশানের জায়গা পুনরুদ্ধার করে সনাতন ধর্মাবলম্বীর পূজা, আরাধনা ও সৎকার কার্যক্রম পুনরায় চালু করার দাবি জানিয়ে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবরে দু’বার আবেদন করা হয়। তবে সে আবেদন নিষ্পত্তি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় এর প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।
হবিগঞ্জের শ্রী শ্রী গোপাল বিশ্বম্বর জিউ ঠাকুর অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সুমন্ত্র দাস গুপ্ত বাদি হয়ে গত মাসে রিটটি (রিট পিটিশন নম্বর: ১৩৯৭০/২০২৩) দায়ের করেন।
আজ শুনানি শেষে আদালত দুটি আখড়ার (মন্দির ও শ্মশান) জায়গায় গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়ে রুল জারি করেন। পাশাপাশি আদেশ বাস্তবায়নের বিষয়ে ১৫ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
সারাবাংলা/কেআইএফ/একে