চট্টগ্রামে কমছে পেঁয়াজের দাম, একযোগে অভিযানে ৬ ম্যাজিস্ট্রেট
১২ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৯:০৫
চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রামে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবরাহ না বাড়লেও বাজারে ক্রেতা কম থাকায় দাম কমিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে। এদিকে, পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ছয় জন ম্যাজিস্ট্রেট একযোগে নগরীর বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালিয়েছেন। খুচরা পর্যায়ে একজন ক্রেতার কাছে দুই কেজির বেশি পেঁয়াজ বিক্রি না করা এবং ১২০ টাকার মধ্যে দাম রাখার নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামে ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার চাক্তাই ও খাতুনগঞ্জে ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতিকেজি ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজারে খুচরা পর্যায়ে ভারতীয় পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করেছে। গত দুই দিনে প্রায় এক হাজার মেট্রিকটন মুড়িকাটা পেঁয়াজ খাতুনগঞ্জে এসেছে। নতুন এসব পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৮০-৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে গত দুই দিনে ভারতীয় পেঁয়াজ খাতুনগঞ্জে তেমন আসেনি। আড়তে আগের মজুত ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রির জন্য দোকানে তোলা হয়েছে। সেগুলো ১২০-১৩০ টাকায় কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে।
খাতুনগঞ্জের হামিদউল্লাহ মার্কেটের পেঁয়াজের আড়তদার মো. ইদ্রিস সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কমছে। বাজারে ক্রেতা নেই। হঠাৎ দাম বেড়ে যাওয়ায় এবং কয়েকদিন পেঁয়াজ না থাকায় ক্রেতা আসছে না। ফের দাম কমতে শুরু করায় খুচরা বিক্রেতারা ভাবছেন, দাম আরও কমতে পারে। সেজন্য তারাও আসছেন না। আবার দেশি পেঁয়াজও আসছে। এজন্য আমরা দাম কমিয়ে বিক্রি করছি।’
অভ্যন্তরীণ সরবরাহ ও দাম ঠিক রাখতে শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) থেকে ভারত পেঁয়াজ রফতানিতে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করে। ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই ঢাকাসহ সারাদেশে পেঁয়াজের বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। চট্টগ্রামে খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ২০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়।
এ অবস্থায় গত রোববার থেকে জেলা প্রশাসন ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর বিভিন্ন আড়তে ও দোকানে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার নগরীর চৌমুহনীর কর্ণফুলী বাজারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম, পাহাড়তলি বাজারে ম্যাজিস্ট্রেট হিমাদ্রী খীসা, ষোলশহর দুই নম্বর গেইটের কর্ণফুলী মার্কেটে মো. উমর ফারুক, চাক্তাই পাইকারি বাজারে রাকিবুল ইসলাম, রিয়াজউদ্দিন বাজারে খায়রুল ইসলাম এবং কাজির দেউড়ি বাজারে ফেরদৌস আরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করেন।
অভিযানে মূল্যতালিকা না টানানো এবং কেনা-বেচার চালান দেখাতে না পারায় বিভিন্ন বাজারের ১৬ দোকানিকে মোট ৬৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া ১৫ উপজেলায়ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘পাইকারিতে ১১০-১২০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। খুচরায় আমরা ১২০-১৩০ টাকার বেশি যাতে পেঁয়াজ বিক্রি না করে সেজন্য বিভিন্ন দোকানকে সতর্ক করেছি। এছাড়া কোনো ক্রেতার কাছে যাতে একসঙ্গে দুই কেজির বেশি পেঁয়াজ বিক্রি না হয়, সে বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন মার্কেট কর্তৃপক্ষ ও দোকান মালিক সমিতি নিজেরাই এ বিষয়ে নোটিশ ইস্যু করেছে। আশা করছি, দু’য়েকদিনের মধ্যে পেঁয়াজের দাম আরও কমে আসবে।’
চৌমুহনী কর্ণফুলী মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে দোকান মালিক সমিতির পক্ষ থেকে নোটিশ ঝোলানো হয়েছে মার্কেটের বিভিন্ন স্থানে। একজন ক্রেতার কাছে দুই কেজির বেশি পেঁয়াজ বিক্রি না করা, পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেলে সমিতিকে দ্রুত অবহিত করা এবং প্রতিদিন হালনাগাদ মূল্যতালিকা প্রদর্শনসহ নোটিশে পাঁচটি নির্দেশনা উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে, অতিরিক্ত দামে পেঁয়াজ বিক্রি করায় নগরীর চান্দগাঁও কামালবাজারে চারটি দোকানকে মোট ২৯ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। দোকানগুলো হচ্ছে- আলহা ট্রেডিং, ফয়সাল স্টোর, মোহছেন আউলিয়া বাণিজ্যালয় এবং জসিম এন্টারপ্রাইজ। সংস্থাটির চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক নাসরিন আক্তার অভিযানে নেতৃত্ব দেন।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম