ঢাকা: মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে কনডেম সেলে রাখা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষ হয়েছে।
এ বিষয়ে শুনানি শেষে মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এর রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রেখেছেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার। কারা মহাপরিদর্শকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খন্দকার শাহরিয়ার শাকির। এ ছাড়া অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে এ বিষয়ে মতামত দেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী ও এস এম শাহজাহান।
২০২২ সালের ৫ এপ্রিল এ বিষয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। রুলে জেল কোডের ৯৮০ বিধি (মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিদের পৃথকভাবে কনডেম সেলে রাখা) কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তাও জানতে চেয়েছিলেন উচ্চ আদালত।
রুলের পর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেছিলেন, বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক সাজা কার্যকর করার আইনগত কোনো বিধান নেই। মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করতে কয়েকটি আবশ্যকীয় আইনগত ধাপ অতিক্রম করতে হয়।
প্রথমত, ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারামতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হাইকোর্ট বিভাগের অনুমোদন নিতে হবে। একইসঙ্গে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪১০ ধারা অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগে আপিল দায়েরের বিধান রয়েছে।
দ্বিতীয়ত, হাইকোর্ট বিভাগ মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখলে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি সাংবিধানিক অধিকার বলে আপিল বিভাগে সরাসরি আপিল করতে পারেন।
তৃতীয়ত, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১০৫ অনুযায়ী আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনের আইনগত সুযোগ রয়েছে।
সর্বোপরি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৯-এর অধীন রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে পারেন। রাষ্ট্রপতি ওই ক্ষমার আবেদন নামঞ্জুর করলে তখন মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আইনগত বৈধতা লাভ করে। কিন্তু বাংলাদেশে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পরই সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে নির্জন কনডেম সেলে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে বন্দি রাখা হয়।
তিনি আরও বলেন, জেল কোডের ৯৮০ বিধি চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। সেখানে বলা আছে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিদের পৃথকভাবে কনডেম সেলে রাখা হবে।
২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে কনডেম সেলে রাখার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন কয়েদি। যাদের আপিল হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে।
তারা হলেন- চট্টগ্রাম কারাগারের কনডেম সেলে থাকা সাতকানিয়ার জিল্লুর রহমান, সিলেট কারাগারে থাকা সুনামগঞ্জের আব্দুল বশির ও কুমিল্লা কারাগারে থাকা খাগড়াছড়ির শাহ আলম।