Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

১৩ ডিসেম্বর ১৯৭১— চূড়ান্ত বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ

আসাদ জামান
১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:১৫

১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর। এদিন অকুতোভয় তরুণ মুক্তিযোদ্ধারা ঢাকায় ঢুকে পড়ে। নিরস্ত্র জনতা রাস্তায় নেমে আসে। তাদের রক্তে শুধু সশব্দ গর্জন। পাকিস্তানি হানাদারদের সঙ্গে লড়ছে, মরছে তবুও প্রতিশোধ চাই। মা, বাবা ও সন্তান হারানোর প্রতিশোধ। আকাশ, জলে-স্থলে সবদিকে হানাদাররা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ায় জেনারেল নিয়াজি রাওয়ালপিন্ডিতে আরজি পাঠান, ‘আরও সাহায্য চাই।’

চারদিকে উড়তে থাকে বাঙালির বিজয় নিশান। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় শত শত পাকিস্তানি সেনা আত্মসমর্পণ করে। শুধু ময়নামতিতেই আত্মসমর্পণ করে এক হাজার ১৩৪ জন। আর সৈয়দপুরে আত্মসমর্পণ করে ৪৮ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের অধিনায়কসহ ১০৭ পাকিস্তানি সেনা। খুলনা, বগুড়া ও চট্টগ্রামে হানাদারদের সঙ্গে মুক্তিবাহিনী ও স্থানীয় মানুষের অবিরাম যুদ্ধ চলে। মুজিবনগরে তখন চরম উত্তেজনা।

বিজ্ঞাপন

রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্রের অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের স্টুডিওতে বসে বার্তা বিভাগীয় প্রধান কামাল লোহানী, আলী যাকের ও আলমগীর কবির ঘন ঘন সংবাদ বুলেটিন পরিবর্তন ও পরিবেশন করেন। প্রতি মুহূর্তে খবর আসছে— ঢাকা ছাড়া বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা মুক্ত। মূলত, চূড়ান্ত বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ।

যুদ্ধ জয়ের নিশ্চয়তা জেনেই বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে জাতিসংঘের যেসব কর্মী, কূটনৈতিক, প্রতিনিধি ও বিদেশি নাগরিক নিরাপদে সরে আসতে চান বাংলাদেশ সরকার তাদের সম্ভাব্য সবধরনের সুযোগ-সুবিধা দেবে।’

বিজ্ঞাপন

শান্তি কমিটি, গভর্নর ডা. মালিক মন্ত্রিসভা ও স্বাধীনতাবিরোধী দালালরা তৎকালীন গভর্নর হাউজে জেনারেল নিয়াজির সঙ্গে বৈঠক চলাকালে মিত্রবাহিনীর বিমান সেখানে বোমাবর্ষণ করে। গভর্নর ডা. মালিক তখনই পদত্যাগ করেন এবং মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়ে রেডক্রসের গাড়িতে করে নিরপেক্ষ এলাকা বলে ঘোষিত হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এসে আশ্রয় নেন।

এদিন পূর্ব ও উত্তর দিক থেকে মিত্রবাহিনী ঢাকার প্রায় ১৫ মাইলের মধ্যে পৌঁছে যায়। অকুতোভয় তরুণ মুক্তিযোদ্ধারা ঢাকায় ঢুকে পড়ে। ৫৭ নম্বর ডিভিশনের দুটো ব্রিগেড এগিয়ে আসে পূর্বদিক থেকে। উত্তর দিক থেকে আসে জেনারেল গন্ধর্ব নাগরার ব্রিগেড এবং টাঙ্গাইলে নামা ছত্রীসেনারা। পশ্চিমে ৪ নম্বর ডিভিশনও মধুমতি পার হয়ে পৌঁছে যায় পদ্মার তীরে।

রাত ৯টায় মেজর জেনারেল নাগরা টাঙ্গাইল আসেন। টাঙ্গাইলে মেজর জেনারেল নাগরা মুক্তিবাহিনীর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা যদি আমাদের বিনা বাধায় এতটা পথ পাড়ি দিতে সাহায্য না করতেন, তাহলে আমাদের বাহিনী দীর্ঘ রাস্তায় যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ত। পথেই আমাদের অনেক শক্তি ক্ষয় হয়ে যেত।’

এদিন মুক্তি-মিত্রবাহিনী জয়দেবপুর, টঙ্গী ও সাভার হয়ে ঢাকার উপকণ্ঠে এসে উপস্থিত হয়। লে. কর্নেল শফিউল্লাহর ‘এস’ ফোর্স ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়ে ডেমরা পৌঁছায়। যৌথবাহিনীর অগ্রবর্তী সেনাদল শীতলক্ষ্যা ও বালু নদী অতিক্রম করে ঢাকার ৫-৬ মাইলের মধ্যে পৌঁছে যায়। বাংলাদেশের নিয়মিত বাহিনীর সর্বপ্রথম ইউনিট হিসেবে ঢাকার শীতলক্ষ্যার পূর্বপাড়ে মুরাপাড়ায় পৌঁছায়।

বাসাবো ও খিলগাঁও এলাকার চারদিকে আগে থেকেই পাকিস্তান বাহিনী ফিল্ড ডিফেন্স বা আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য সর্বাত্মক ব্যবস্থাসহ অবস্থান নেয়। কিন্তু ঢাকার আকাশ মিত্রবাহিনীর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে থাকায় পাকিস্তানি বাহিনী তেমন সুবিধা করতে পারেনি। মিত্রবাহিনী পাকিস্তানি সামরিক অবস্থানের ওপর তীব্র বিমান আক্রমণ চালায়। অবস্থা বেগতিক দেখে জেনারেল নিয়াজি বোমাবর্ষণ বন্ধ রাখার জন্য মানেকশ’র প্রতি আহ্বান জানান।

সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধা ফাউন্ডেশনের মহাসচিব জি. কে বাবুল সারাবাংলাকে বলেন, ‘১৩ ডিসেম্বর আমরা নারায়ণগঞ্জ ক্যাম্পে ছিলাম। এদিন সকালে মেসেজ এলে- মেঘনার পাড় থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনী আসবে এবং তাদেরকে আমাদের রিসিভ করতে হবে। এদিন আমরা পুরো বন্দর থানা ঘেরাও করে রেখেছিলাম। আমাদের নেতৃত্ব দেন গিয়াস উদ্দিন, বীর প্রতীক। তার নেতৃত্বে আমরা পাকিস্তানি ৩৯ জন সেনাকে এদিন হত্যা করি। এরপর আমরা বন্দর স্বাধীন করি। অতপর আমরা অপেক্ষা করি ভারতীয় সেনারা কখন আমাদের কাছে রিপোর্ট করবে।’

সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম

১৩ ডিসেম্বর ১৯৭১ চূড়ান্ত বিজয় বাংলাদেশ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর