Tuesday 10 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নতুন শিক্ষাক্রমের আলোচনা অনুষ্ঠান বাতিল, যে কারণ দেখাল ঢাবি

ঢাবি করেসপন্ডেন্ট
১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ২০:৫০

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের অধীন আরসি মজুমদার মিলনায়তনে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক আয়োজিত নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানটি শেষ পর্যন্ত হয়নি। অনুষ্ঠানে এক ঘণ্টারও কম সময় আগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মিলনায়তন ব্যবহারের অনুমতি প্রত্যাহার করলে ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২১: আমরা কেন উদ্বিগ্ন?’ শীর্ষক আলোচনা সভাটি ভেস্তে যায়।

আয়োজক শিক্ষকরা বলছেন, অনুষ্ঠান শুরুর কিছু আগে ‘বিশেষ এক জায়গা থেকে ফোন পাওয়ায়’ কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আব্দুল বাছির মিলনায়তনের বরাদ্দ বাতিল করে অন্য কোথাও আলোচনাটি করতে বলেন। আর কলা অনুষদের ডিন বলছেন, অনুষ্ঠানে রাষ্ট্র ও সরকারকে ‘হেয় করা’র আশঙ্কা ছিল, যা মিলনায়তন বরাদ্দের নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ার কারণেই বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে।

বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুর আড়াইটায় আরসি মজুমদার মিলনায়তনে ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২১: আমরা কেন উদ্বিগ্ন?’ শীর্ষক আলোচনা সভা আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। এর পৌনে এক ঘণ্টা আগে মিলনায়তনের বরাদ্দ বাতিল হওয়ায় আলোচনা সভাটি হয়নি। দুপুর আড়াইটার দিকে অডিটোরিয়ামের দরজায় ‘দলদাসদের প্রতি ঘৃণা’ এবং ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে মত প্রকাশের অধিকার খর্ব করা চলবে না’ লেখা দুটি পোস্টার দেখা যায়।

আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২১’ নিয়ে দেশব্যাপী তর্ক-বিতর্ক চলছে। নতুন এই শিক্ষাক্রম নিয়ে সমালোচনা করার কারণে কয়েকজন অভিভাবক ও শিক্ষকের বিরুদ্ধে সরকার সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছে ও কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে এই উন্মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন তারা।

সংগঠনটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, নিয়ম অনুযায়ী অনুষ্ঠানের শিরোনাম ও আলোচকদের নামসহ কলা অনুষদের ডিন বরাবর আবেদন করে এবং ব্যাংকে নির্ধারিত বুকিং ফি জমা দিয়েই আলোচনা অনুষ্ঠানের অনুমতি নেওয়া হয়। অনুষ্ঠান শুরুর কিছুক্ষণ আগে (দুপুর ১টা ৪৮ মিনিট) কলা অনুষদের ডিন আয়োজকদের ফোনে জানান, আলোচনা সভার অনুমতি বাতিল করা হয়েছে। কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, বিশেষ জায়গা থেকে ফোনে বলা হয়েছে যেন মিলনায়তন শিক্ষক নেটওয়ার্ককে ব্যবহার করতে দেওয়া না হয় । তিনি দুঃখপ্রকাশ করে অনুষ্ঠানটি অন্যত্র করতে বলেন।

আয়োজকদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান বলেন, ‘মিলনায়তনটি আমাদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শুরুর আধা ঘণ্টা আগে আমাকে কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছির ফোন করেন। তিনি আমাকে বলেন, এই ভেন্যুতে আমাদের দেওয়া বুকিং ক্যানসেল করা হয়েছে। আমরা যেন প্রোগ্রামটি না করি।’

অধ্যাপক তানজীম বলেন, “এক জায়গা থেকে তিনি (ড. বাছির) ফোন পেয়েছেন। ওই জায়গার পক্ষ থেকে নাকি বলা হয়েছে, আমাদের যেন স্পেসটি ব্যবহার করতে না দেওয়া হয়। এরপর তিনি আমাকে বলেছেন, ‘যেহেতু ফোন এসেছে, সেহেতু ঝামেলা হতে পারে। আপনাদের অনুরোধ করব, আপনারা যেন প্রোগ্রাম না করেন।’”

এদিকে কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছিরের দাবি, অনুষ্ঠানটি পূর্বনির্ধারিত এবং মিলনায়তনটি অনুষ্ঠানের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হলেও আধা ঘণ্টা আগে তিনি জানতে পারেন, এই অনুষ্ঠানের ধরন মিলনায়তন বরাদ্দের নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সে কারণে অনুষ্ঠানটি অন্য কোথাও আয়োজনের অনুরোধ করেন তিনি।

অধ্যাপক বাছির বলেন, ‘রাষ্ট্র, সরকার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতিসত্তা এবং ধর্ম ও ব্যক্তিকে আঘাত করে কথা বলা হবে না— এই শর্তে মিলনায়তনটি বরাদ্দ দেওয়া হয়। এখানে এক ধরনের আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল যে তারা রাষ্ট্র ও সরকারের সমালোচনা বা রাষ্ট্র-সরকারকে হেয় করতে পারেন। নীতিমালার এই অংশ থেকে দেখলাম, তারা অনুষ্ঠানটি অন্য জায়গায় করলে তাদের জন্যও ভালো, আমার জন্যও ভালো।’

ফোন পেয়ে বরাদ্দ বাতিল প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অধ্যাপক বাছির বলেন, ‘এটা একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যায় না! বোঝাই যায় যে রাষ্ট্র, সরকার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে হেয় করার চেষ্টা ছিল তাদের। এতটুকু বলার মধ্য দিয়েই বোঝা যায় তাদের উদ্দেশ্য খারাপ ছিল।’

সারাবাংলা/আরআইআর/টিআর

অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছির অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান আরসি মজুমদার মিলনায়তন জাতীয় শিক্ষাক্রম টপ নিউজ নতুন শিক্ষাক্রম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর