Wednesday 11 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘৭২ ঘণ্টার মধ্যে কার্যকর সিদ্ধান্ত নিন, নইলে পেনাল্টি দিতে হবে’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ২১:১২

ঢাকা: তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট (বিএনএম) ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভোটমুখী করতে নেপথ্য থেকে কাজ করা বিএনপির পুনর্গঠনের উদ্যোক্তা কামরুল হাসান নাসিম বলেছেন, যদি সত্যিকারে বুদ্ধিমান শ্রেণি আপনার (প্রধানমন্ত্রী) দলে থাকে, তাহলে আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কার্যকর সিদ্ধান্ত নিন। না হলে ১৭ তারিখে পেনাল্টি দিতে হবে।

নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করার জন্য জাতীয় পার্টির (জাপা) সঙ্গে আসন ভাগাভাগি থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়ে নাসিম বলেন, ‘৩০টি থেকে দুটি উইকেট পড়েছে, ২৮টি রাজনৈতিক দল আছে। জাপার সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করলে অন্যরাও একই রকম সুযোগ চাইবে। সুতরাং জনগণকে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের যে কমিটমেন্ট দিয়েছেন, সেটি যদি রাখতে পারেন তাহলে ইলেকশনটা করেন, না হলে ১৭ তারিখে সবাই প্রত্যাহার করেন।’

নাসিম আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনার জন্য হলেও আমরা ভোটকেন্দ্রে যাব। কেন? তিনি বাংলাদেশের জন্য চেষ্টাটা করেছেন।’

বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে আয়োজিত ‘জাতীয়তাবাদী রাজনীতির বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।

‘কোনো দিন কারও প্রেসক্রিপশনে কিছু হয়নি, হবে না’— এমন মন্তব্য করে কামরুল হাসান নাসিম বলেন, ‘সত্যিকারে জাতীয়তাবাদী দল হতে হবে। সেটা বিএনপি আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে হোক, তৃণমূল বিএনপি হোক, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট (বিএনএম) হোক বা অনাগত কোনো জাতীয়াতাবাদী শক্তি হোক, হতে হবে। কারণ, এভাবে আর চলে না।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পাঁচ থেকে সাতজন ছাড়া প্রত্যেকটি লোক অসৎ। প্রকৃতি তাদের বিচার করবে। সুতরাং এখানে একটি জাতীয়তাবাদী শক্তি আসন্ন, আসতে হবে। জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিন। এই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার মধ্য দিয়ে সত্যিকারে ১০ জন জাতীয়তাবাদী প্রতিনিধিত্বকারী চরিত্রও যদি ওখানে যায়, সেই বীজ বপন করতে হবে। এ জন্য আমরা ভোটকেন্দ্র পাহারা দেবো, যদি তারা জোর করে নিয়েও নেয়। আমরা এটাকে ধারণ করে রাখব এবং এর বিস্ফোরণ বাংলাদেশে হবে।’

নাসিম বলেন, ‘খুব কম সময়ের চেষ্টায় ৩০০ আসনের মধ্যে ৪৭টি আসনে বিএনপির হার্ডকোর পলিটিক্স করা ব্যক্তিরা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। সমর্থক শ্রেণি মিলে টোটাল ৮৭টি আসনে বিএনপি নির্বাচন করছে। ইলেকশন কমিশন আর পাঁচটা দিন সময় বাড়ালে এ সংখ্যা দেড় শ ছাড়াত।’

বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘যেহেতু এখানে সংসদীয় গণতন্ত্র, তাহলে বিএনপিকে খোলসা করে বলতে হবে, তাদের কি সংসদীয় গণতন্ত্রে আস্থা নেই? তারা যখন বলছে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে, তাহলে তো ঘুরে ফিরে এসে বলতে হবে আগে তারা নির্বাচনে জিতুক। ওই আওয়ামী লীগের ট্র্যাডিশনাল পলিটিক্যাল ক্যারেক্টারে যারা আছেন, তাদের মতো করে আমি বলছি না, সংবিধান মোতাবেক হতে হবে। মানুষের জন্য সংবিধান পরিবর্তন করাই যায়, ওটা বিষয় না।’

‘তার আগে একটা প্রশ্নের জবাব দিতে হবে— ১৯৯১ সাল থেকে যখন সংসদীয় গণতন্ত্রের যাত্রার শুরু হলো, সেদিন থেকে যতগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসেছে তারা কি প্রতিবেশী আধিপত্যবাদী শক্তি কিংবা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির প্রেসক্রিপশনে একটি বিশেষ দলকে ক্ষমতায় আনেনি? ১৯৯১ সালে কোন শক্তি বিএনপিকে ক্ষমতায় এনেছিল,’— প্রশ্ন কামরুল হাসান নাসিমের।

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে বলেছেন, ২০০১ সালে যখন তার মেয়াদ শেষ হয়, তখন ভারতের কাছে গ্যাস বিক্রি করেননি বলে প্রতিবেশী আধিপত্যবাদী শক্তি ২০০১ সালে বিএনপিকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় এনেছিল। আর আজ আপনাদের কাছে প্রশ্ন, বিএনপি এখন কোন সাম্রাজ্যবাদী শক্তির প্রেসক্রিপশনে থাকা সুশীল কমিউনিটির তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়, যারা তাদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসাবে?’

নাসিম বলেন, ‘১৫টা বছর পার হয়েছে। আমরা দেখেছি, একটি দিনের জন্যও বিএনপি বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণের রাজনীতি করেনি। তিস্তা চুক্তির জন্য লংমার্চ হয়েছে। মির্জা ফখরুল করেছেন। কিন্তু তার কোনো ফলোআপ মিটিং হয়নি। কারণ সে সময় আনু মুহম্মদেরা তথা তেল-গ্যাস-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির তথাকথিত বাম রাজনীতিকেরা এটা নিয়ে আন্দোলন করছিল। তখন তিনিও (মির্জা ফখরুল) মনে করেছিলেন, এটাও একটা রাজনীতি হতে পারে আমিও একটু ধরতে চাই।’

বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সমালোচনা করছেন, গালমন্দ করছেন যে তোমরা ভোট দিচ্ছ না, গণতন্ত্র দিচ্ছ না। আমি বিএনপিকে প্রশ্ন রাখতে চাই, তোমাদের দলে গণতন্ত্র আছে? অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র আছে? এক ব্যক্তি ৩৫ বছর ধরে কেন দলের চেয়ারপারসন থাকবে? এক ব্যক্তি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব থেকে কেন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হবে? গণতন্ত্র আগে ওখানে আসতে হবে। তারপর রাষ্ট্রের কাছে গণতন্ত্র চাও। আগে নিচের গালে থাপ্পর মারো। তারপর অন্যের গালে থাপ্পর মারতে এসো।’

‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার নেতৃত্ব দেওয়া দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। শিষ্টাচারের কথা বলো? আগের ঘর সামলাও। নিজেদের পরিবর্তন করো। দেখবা, আজকের এই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে প্রকৃতি বিচার করে দেবে,’— বলেন কামরুল হাসান নাসিম।

তিনি বলেন, ‘কেন ৫৩ বছর পরে এসে কৃত্রিম অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টিকারীদের সহযোগিতা করছ, অর্থাৎ নতুন করে রাজাকারি করছ? মার্কিনিরা বাংলাদেশকে মগের মুল্লুক মনে করেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে যা খুশি তাই করছে। কেন জাতীয়তাবাদী দল থেকে বলা হচ্ছে না— এই, তোমরা চুপ থাকো— কীসের স্যাংশন? আমাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যার সমাধান আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাপা, জেপি মিলে আমরা করব। তোমরা কে?’

নাসিম বলেন, ‘আমরা যখন তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম করে নির্বাচনে যাচ্ছি, তখন আমাদের বলা হচ্ছে আওয়ামী লীগের দালাল। আর আমরা বলছি, মির্জা ফখরুলেরা দালাল। কার দালাল? ওই সাম্রাজ্যবাদীদের দালাল। হেনরি কিসিঞ্জার বলেছিল, তীব্র জনঘনত্ব, সম্পদের অপ্রতুলতায় বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের মৃত্যু আসন্ন। বলার সময় মনে করেছিল যে এটা তাত্ত্বিক কথা। যদি তাত্ত্বিক কথা হতো, আজ তো বাংলাদেশের অস্তিত্ব থাকার কথা না। তারা ১৯৭১ সালেও বাংলাদেশ মেনে নিতে পারেনি, আজ অবধি তারা আমাদের প্রধান শত্রু। তাদের দালালি করে সত্যিকারের জাতীয়তাবাদী হওয়া যায় না।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের কৃষি, বাংলাদেশে শিল্প, বাংলাদেশের মৎস, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ, বাংলাদেশের পর্যটন, বাংলাদেশের সমুদ্র সম্পদের সঙ্গে যদি একটি ডিফেন্স ডক্টিন করা যায়, তাহলে আগামী সাত বছরের মধ্যে পৃথিবীর ১০টি বড় অর্থনৈতিক দেশের একটি হবে বাংলাদেশ।’

তারেক রহমান ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উদ্দেশে নাসিম বলেন, ‘জাতীয়তাবাদী হতে হলে সত্যিকারে জাতীয়তাবাদী হও। একটা রাষ্ট্রকে রিপ্রেজেন্ট করবার জন্য যে জায়গায় যাওয়া দরকার, যে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি কায়েম করা দরকার বাংলাদেশকে সেই জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য সত্যিকারে জাতীয়তাবাদী হও।’

সেমিনারে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি এস এ সুলতান টিটু, সাবেক সংসদ সদস্য শফি আহমেদ চৌধুরী, তৃণমূল বিএনপির নেতা আব্দুল কাদির তালুকদার, জব্বার হোসেন, এম এ ইউসুফ, জুলফিকার আলী, সরকার বাদল, মোজাফফর হোসেন, খলিলুর রহমান প্রমুখ। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ মাঠ করেন বিএনপি নেত্রী আসমা শহীদ।

সারাবাংলা/এজেড/এনইউ

টপ নিউজ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর