ঢাকা: রাজধানীর গুলশান-১ এ অবস্থিত ‘গুলশান শপিং সেন্টার’ অবিলম্বে ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এই শপিং সেন্টারের লিজ গ্রহীতাদের আমোক্তারসহ সংশ্লিষ্টদের নিজ দায়িত্বে তা ভেঙে অপসারণ করতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী। সিটি করপোরেশনের পক্ষে ছিলেন সাজেদ সামী। রাজউকের পক্ষে ছিলেন মাজেদুল ইসলাম মিয়াজী। রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় উপস্থিত ছিলেন।
আদেশের বিষয়টি সারাবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন আইনজীবী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে গুলশান শপিং সেন্টার। এই শপিং সেন্টার ভেঙে ফেলার নির্দেশনা চেয়ে বানীচিত্র লিমিটেড ও চলচ্চিত্র লিমিটেড নামে দুটি কোম্পানি হাইকোর্টে রিট করেন। ওই রিটের শুনানি নিয়ে আদালত রুল জারি করেছিলেন।
এরপর গতকাল মঙ্গলবার রুলের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট অবিলম্বে গুলশান শপিং সেন্টারের লিজ গ্রহীতার আমোক্তারদের নিজ দায়িত্বে তা ভেঙ্গে অপসারণ করতে বলা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ আদেশ পেলে আরও বিস্তারিত জানা যাবে।
গত ২৩ জুলাই রাজধানীর গুলশান-১ এ অবস্থিত গুলশান শপিং সেন্টারটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সিলগালা করে দেয় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। ‘গুলশান শপিং সেন্টার’-এর হোটেল, দোকান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সিলগালা ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জুলকার নায়ান ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহবুব হাসান।
‘গুলশান শপিং সেন্টার’-এর জরাজীর্ণ ভবন ও অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা না থাকার কারণে ২০২১ সালে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর মার্কেটটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিত্যক্ত ঘোষণা করে ডিএনসিসিকে জরুরি ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি দেয়।
অঞ্চল-৩ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জুলকার নায়ন বলেন, শপিং সেন্টারটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় যেকোনও ধরনের মানবিক বিপর্যয় ঠেকাতে দোকান মালিকদের ভবন খালি করে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হলেও তারা সেটি করেনি। ঝুঁকিপূর্ণ পরিত্যক্ত এই ভবন ধসে হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারে। ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের জন্য মৃত্যু ঝুঁকি রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বারবার সতর্ক করা হলেও ব্যবসায়ীরা পরিত্যক্ত ভবনটি খালি করছে না। খালি করার জন্য একাধিকবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তারা ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ব্যবসা পরিচালনা করে চলেছে। জানমালের নিরাপত্তার জন্য ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের সুপারিশ বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯, তৃতীয় তফসিল-১৭, ইমারত নিয়ন্ত্রণ ইমারত সম্পর্কিত প্রবিধানের ১৭.১ ও ১৭.২ অনুযায়ী জনস্বার্থে ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটটি সিলগালা করা হয়েছে।
ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ও নিরাপত্তার স্বার্থে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাঁচ প্লাটুন পুলিশ, এক প্লাটুন এপিবিএন ও অন্যান্য সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসহ উপস্থিত হয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে মার্কেটটির গেটসমূহ তালাবদ্ধ ও সিলগালা করা হয়। এ সময় মাইকিং করা হয় ও মালামাল সরানোর জন্য নিদের্শনা দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিদ্যুৎ, গ্যাস ও অন্যান্য সেবা সংস্থার প্রতিনিধির উপস্থিতিতে এগুলোর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
এ অবস্থায় এই শপিং সেন্টার ভেঙে ফেলার নির্দেশনা চেয়ে বানীচিত্র লিমিটেড ও চলচ্চিত্র লিমিটেড নামে দুটি কোম্পানি হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন।