Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হারানোর দিন আজ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ০০:২৩

ঢাকা: আজ ১৪ ডিসেম্বর। শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তার দোসর রাজাকার আল-বদর, আল-শামস মিলিতভাবে বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। এর ঠিক দুদিন পর ১৬ ডিসেম্বর জেনারেল নিয়াজির নেতৃত্বাধীন বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে এবং স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।

দিবসটি উপলক্ষে জাতীয়ভাবে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

বিজ্ঞাপন

একাত্তরে ৩০ লাখ শহিদের মধ্যে বুদ্ধিজীবীদের বেছে বেছে হত্যার ঘটনা বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী তাদের পরাজয় আসন্ন জেনে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে বুদ্ধিজীবী নিধনের এই পরিকল্পনা করে। চরম বিপর্যয় আসন্ন, পরাজয় একেবারেই সন্নিকটে— ঠিক এমন সময় তারা সেই পরিকল্পনা কার্যকর করে।

একাত্তরের এই দিনে তালিকাভুক্ত বুদ্ধিজীবীদের চোখ বেঁধে নিয়ে হত্যা করা হয়। স্বাধীন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে এভাবেই অন্ধকার করার পাঁয়তারা করেছিল পাকিস্তানি বাহিনী। তবে অপারেশন সার্চলাইটের নামে একাত্তরের ২৫ মার্চ যখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালি নিধনে নামে, তখনই দেশে ও দেশের বাইরে একটি উদ্বেগের বিষয় ছিল যে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের এভাবে হত্যা করা হতে পারে।

একাত্তরের সেই যুদ্ধাপরাধী ও বুদ্ধিজীবী হত্যায় জড়িত অনেকের বিচারের রায় কার্যকর হয়েছে। এর মধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত অনেকের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় হয়েছে। মানবতাবিরোধী হত্যা মামলায় দণ্ডিত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হয়েছে। জামায়াতের আরেক নেতা মো. কামারুজ্জামান ও বুদ্ধিজীবী হত্যার অন্যতম হোতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

২০১৬ সালের ১১ মে মুক্তিযুদ্ধকালে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের নীলনকশা বাস্তবায়নকারী গুপ্তঘাতক আলবদর বাহিনীর প্রধান ও জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হয়। তবে বুদ্ধিজীবী হত্যায় সরাসরি জড়িত চৌধুরী মইনুউদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খান পলাতক থাকায় রায় এখনো কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। চৌধুরী মইনুদ্দীন যুক্তরাজ্য ও আশরাফুজ্জামান খান যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক। তাদের ২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানের এ দেশীয় দোসর আল-বদরের সাহায্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ও বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, সংস্কৃতি কর্মীসহ বিভিন্ন পেশার বরেণ্য ব্যক্তিদের অপহরণ করে। পরে রায়েরবাজার ও মিরপুরে নিদারুণ যন্ত্রণা দিয়ে তাদের হত্যা করা হয়। এ দুটি স্থান এখন বধ্যভূমি হিসেবে সংরক্ষিত।

মুক্তিযুদ্ধের শেষ লগ্নে ১০ থেকে ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে আল-বদর বাহিনী আরও অনেক বুদ্ধিজীবীকে ধরে নিয়ে মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে স্থাপিত আল-বদর ঘাঁটিতে নির্যাতনের পর রায়েরবাজার বধ্যভূমি ও মিরপুর কবরস্থানে নিয়ে হত্যা করে।

শহিদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে রয়েছেন— অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, ডা. আলিম চৌধুরী, অধ্যাপক মুনিরুজ্জামান, ড. ফজলে রাব্বী, সিরাজ উদ্দিন হোসেন, শহীদুল্লা কায়সার, অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র দেব (জিসি দেব), জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, সাংবাদিক খন্দকার আবু তাহের, নিজামউদ্দিন আহমেদ, এস এ মান্নান (লাডু ভাই), এ এন এম গোলাম মোস্তফা, সৈয়দ নাজমুল হক, সেলিনা পারভীনসহ আরও অনেকে।

শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে দেশের সব জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলোচনা সভা হবে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে।

আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে— সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ; সকাল ৭টায় মিরপুর শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন এবং সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ও সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ।

শহিদ বুদ্দিজীবী দিবস উপলক্ষে বিএনপিও বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। সকালে সাড়ে ৮টায় মিরপুর শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এবং রায়ের বাজার শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শহিদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন বিএনপি নেতারা। এতে নেতৃত্ব দেবেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান। সকাল সাড়ে ১০ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে হবে আলোচনা সভা।

সারাবাংলা/এজেড/টিআর

বুদ্ধিজীবী দিবস শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর