Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নদভীর সম্পদ বেড়ে দ্বিগুণ, স্ত্রীর সাড়ে তিনগুণ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ১০:৩৫

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে আবারও মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য (এমপি) আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী। গত কয়েক বছরে তার স্থাবর-অস্থাবরসহ মোট সম্পদ বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা। যা আগের পাঁচবছরের চেয়ে দ্বিগুণ। আর তার স্ত্রী রিজিয়া রেজা চৌধুরীর স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে সম্পদ বেড়েছে সাড়ে তিনগুণ।

২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জমা দেওয়া হলফনামায় আবু রেজা নদভী তার মোট সম্পদ দেখিয়েছিলেন ৩ কোটি ৫৬ লাখ ৩৬ হাজার ৪৩০ টাকা। পাঁচ বছর পর তার সম্পদ দ্বিগুণ বেড়ে হয়েছে ৭ কোটি ৮৩ লাখ ৫ হাজার ১০৬ টাকা। চট্টগ্রামে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়ন পত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামা পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

বিজ্ঞাপন

হলফনামায় দেখা যায়, পাঁচ বছর আগে ২০১৮ সালে ব্যাংকে নদভীর ৬৩ লাখ ৬২ হাজার ৯০১ টাকা জমা ছিল। বর্তমানে ব্যাংকে তার নামে জমা আছে ১ কোটি ৬৪ লাখ ৯৬ হাজার ৩৪৪ টাকা।

২০১৮ সালে যেখানে তার নামে ১১ লাখ ৩৮ হাজার ৪২৬ টাকা সঞ্চয়ী আমানত (ডিপিএস), ১৪ লাখ ২২ হাজার ৭৯১ টাকার স্থায়ী আমানত (এফডিআর) এবং বিনিয়োগ ছিল ২ লাখ ১৮ হাজার ২০০ টাকা। বর্তমানে তার ২ লাখ ৭২ হাজার ৯৯৪ টাকার সঞ্চয় এবং ২ কোটি ২৮ লাখ ৮৭ হাজার ২২০ টাকা স্থায়ী আমানত আছে।

পাঁচ বছর আগে নদভীর কাছে কোনো নগদ টাকা না থাকলেও বর্তমানে তার কাছে ৪ লাখ ৫৮ হাজার ৯৪১ টাকা নগদ আছে। বর্তমানে নিজের কাছে থাকা তিনটি গাড়ির মূল্য দেখিয়েছেন ১ কোটি ৮৮ লাখ ৫২ হাজার ১৬৬ টাকা। যেখানে তিনি ২০১৮ সালে গাড়ির মূল্য দেখিয়েছিলেন ৭৮ লাখ টাকা। তবে কয়টা গাড়ি সেটা তিনি উল্লেখ করেননি।

বিজ্ঞাপন

হলফনামায় নিজের নামে ৯০ ভরি সোনা ও অন্যান্য ধাতুর মূল্য দেখিয়েছেন ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ইলেকট্রনিক সামগ্রী ৪ লাখ টাকা ও আসবাবপত্র ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেখিয়েছেন। এছাড়া নিজের নামে অন্যান্য আয় দেখিয়েছেন ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

এদিকে ২০১৮ সালের নির্বাচনী হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, তার বার্ষিক আয় ছিল ৫২ লাখ ৭ হাজার ৮৭৭ টাকা। এবারের হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, তার বার্ষিক আয় এখন বেড়ে ১ কোটি ৮১ লাখ ৮৭ হাজার ৪৪১ টাকা।

২০১৮ সালের হলফনামায় নদভী আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো সম্মানি ভাতা পাওয়ার তথ্য না দেখালেও বর্তমানে তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও অধ্যাপক হিসেবে বছরে ১ কোটি ৩৭ লাখ ৬১ হাজার ৪৪২ টাকা এবং জাতীয় সংসদ থেকে ২৩ লাখ ১৫ হাজার ৭০৭ টাকা ভাতা পান। বাড়ি ভাড়া থেকে আয় দেখানো হয়েছে ৫ লাখ ৩১ হাজার টাকা। শেয়ার ও ব্যাংক আমানত থেকে পান ১৫ লাখ ২৮ হাজার ৩৫০ টাকা। নদভীর কৃষি খাতে কোনো বিনিয়োগ বা আয় ছিল না। এখন এ খাত থেকে তার আয় ৫০ হাজার টাকা।

২০১৮ সালের হলফনামায় তার বাড়ি ভাড়া বাবদ আয় ছিল ৪ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। শিক্ষকতা, পরামর্শক ও জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে মোট ভাতা পেতেন ২৫ লাখ ২৫ হাজার ৮৮৬ টাকা। পাঁচ বছর আগে পরিচালক হিসেবে আল্লামা ফজুল্লাহ ফাউন্ডেশন থেকে বছরে ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা সম্মানি ভাতা পেলেও বর্তমানে সেটা পান না বলে নদভী হলফনামায় দেখিয়েছেন। শেয়ার ও ব্যাংক আমানত থেকে পেতেন ৩ লাখ ২২ হাজার ৯২৯ টাকা।

২০১৮ সালের হলফনামায় বিভিন্ন ব্যাংক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও বিভিন্ন সেমিনারে যোগদানে সম্মানি হিসেবে ১১ লাখ ৮০ হাজার টাকা ভাতা পেলেও বর্তমানে সেটা তিনি পান না বলে দেখিয়েছেন গত ২৮ নভেম্বর জমা দেওয়া হলফনামায়।

পাঁচ বছরে নদভী পত্নীর সম্পদ বেড়েছে সাড়ে তিনগুণ

গত পাঁচ বছরে শুধু নদভীরই সম্পদ বাড়েনি, বেড়েছে তার স্ত্রী রিজিয়া রেজা চৌধুরীরও। পাঁচ বছর আগে হলফনামায় তিনি স্ত্রীর নামে অস্থাবর সম্পদ দেখান ১৯ লাখ টাকা ২৪ হাজার ৭৩৯ টাকার। বর্তমানে সে সম্পদ গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৬৭ লাখ ৫৪ হাজার ২৯৫ টাকার, যা সাড়ে তিনগুণ বেশি।।

২০১৮ সালের হলফনামা অনুযায়ী, আবু রেজার স্ত্রীর কাছে নগদ ৫ লাখ টাকা ছিল। ২০২৩ সালের হলফনামা অনুযায়ী, এখন তার স্ত্রীর কাছে নগদ ২০ লাখ ২১ হাজার ২৪৬ টাকা আছে।

২০১৮ সালে তার স্ত্রীর ব্যাংকে জমা ছিল ৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। ২০২৩ সালে স্ত্রীর ব্যাংকে জমা আছে ১৩ লাখ ৪১ হাজার ৯৫ টাকা।

২০১৮ সালে নদভীর স্ত্রীর ১ লাখ ৩৪ হাজার ৭০০ টাকার ডিপিএস এবং ১ লাখ ৪৮ হাজার ৮৩৯ টাকার এফডিআর ছিল। ৫ বছর পর বর্তমানে স্ত্রীর ৭ লাখ ৯৮ হাজার ৭৮ টাকার সঞ্চয় এবং ১৮ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭৬ টাকার স্থায়ী আমানত আছে।

জামায়াত ইসলামীর দুর্গ হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসন। দুর্গ ভাঙতে ‘জামায়াত ঘরানার’ আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভীকে দলে এনে ২০১৪ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ, যিনি ‘মধ্যপ্রাচ্য লবির’ জন্য আগে থেকেই পরিচিত ও আলোচিত।

‘কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার’ নীতি নিয়ে আওয়ামী লীগ তাকে দলে নিলেও দলটির পোড়খাওয়া অনেক নেতাকর্মীই তাকে মেনে নিতে পারেননি। একাংশের বিরোধিতার মধ্যেই নদভী ২০১৪ ও ২০১৮ সালে দুই দফায় সাংসদ নির্বাচিত হন। তার স্ত্রী রিজিয়া রেজা চৌধুরী মহিলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত।

সারাবাংলা/আইসি/এনএস

আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী চট্টগ্রাম-১৫

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর