Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ইসির চিঠি অন্যায় পদক্ষেপ: বিএনপি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৩:৩৬

ঢাকা: আগামী ১৮ ডিসেম্বর থেকে জাতীয় নির্বাচনের ভোটগ্রহণের আগ পর্যন্ত ভোটের প্রচার ছাড়া অন্য কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি আয়োজনে যেন অনুমতি দেওয়া না হয় মর্মে নির্বাচন কমিশন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে যে চিঠি দিয়েছে, সেটিকে অন্যায় পদক্ষেপ বলে মনে করছে বিএনপি।

বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ ব্যাপারে বিএনপির বক্তব্য তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ‘৭ জানুয়ারি তথাকথিত নির্বাচনের নামে, ভাগ-বাটোয়ারার মাধ্যমে ডামি নির্বাচন আয়োজনের যে অপপ্রয়াস, সেটিকে পৃষ্ঠপোষকতা করতেই অথর্ব ও অযোগ্য নির্বাচন কমিশন জনবিদ্বেষী সিদ্ধান্তটি নিয়েছে। প্রকারান্তরে এটি আবারও প্রমাণ হয়েছে, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ওপর কেন সর্বজনীন অনাস্থা ও বিশ্বাসহীনতা বিরাজমান এবং সর্বাঙ্গীনভাবে পক্ষপাতদুষ্ট এই কমিশনের অধীনে কেন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা ফেয়ার ইলেকশন সম্ভব নয়।’

রিজভী বলেন, ‘বস্তুত, ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখবার মোহে অন্ধ শেখ হাসিনার দ্বারা আদিষ্ট হয়ে গণতন্ত্রকামী জনগণের আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে গিয়ে নির্বাচন কমিশনের এই দুরভিসন্ধি একাধারে অনৈতিক, অবৈধ ও অসাংবিধানিক। জনগণের মুক্তি ও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে দমিয়ে রাখতে, দুঃশাসন, দুর্নীতি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অসহনীয় মূল্য বৃদ্ধিতে মানুষের ভয়াবহ দুর্গতির মধ্যে নীল-নকশার এই অন্যায় পদক্ষেপকে, গণতন্ত্রের পক্ষের সকল শক্তি ঘৃণাভরে ধিক্কার জানাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘ইতিপূর্বে নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দলসমূহকে নিবন্ধন ও ভুয়া প্রতিষ্ঠানসমূহকে নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্দেশনা প্রতিপালন করেছে মেরুদন্ডহীন নির্বাচন কমিশন। জনগণের কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় তথাকথিত রাজনৈতিক দল সৃষ্টি করে নির্বাচনকে কিঞ্চিৎ অংশগ্রহণমূলক দেখানোর যে অপকৌশল এবং সেটিকে বৈধতা প্রদানে দেশি-বিদেশি ভাড়াটে পর্যবেক্ষক এনে দেশবাসীর সঙ্গে যে নির্লজ্জ মিথ্যাচার আওয়ামী লীগ ও নির্বাচন কমিশনের এই যৌথ প্রতারণা জাতির সামনে সুস্পষ্টভাবে উম্মোচিত হয়েছে।’

রিজভী বলেন, ‘বিদ্যমান পরিস্থিতিতে, জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা রাজনৈতিক কর্মসূচি বন্ধের নব্য অপতৎপরতায় উদ্বেগ প্রকাশ করছি ও নিন্দা জানাচ্ছি। গণতান্ত্রিক মত প্রকাশের অধিকারকে রুদ্ধ করবার এই অশুভ উদ্যোগ বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক, অর্থনীতিক ও কূটনীতিক সংকটকে আরও ঘনীভূত করে তুলবে।’

তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারে বিএনপির চলমান শান্তিপূর্ণ ও অহিংস আন্দোলন একটি সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার। সভা-সমাবেশ ব্যাহত করে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ও দাবি আদায়ের সংগ্রামের বিরুদ্ধে যে অবস্থান নিয়েছে নির্বাচন কমিশন, আমরা আশা করছি দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে তারা এটি প্রত্যাহার করবেন।’

রিজভী বলেন, ‘কারসাজির মাধ্যমে ভোটারবিহীন ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন তথাকথিত নির্বাচনে পূর্বনির্ধারিত ফলাফল ঘোষণার লক্ষ্যে নামস্বর্বস্ব নানা দলের সঙ্গে যেভাবে আসন নিয়ে ভাগ-বাটোয়ারা করছে আওয়ামী লীগ, একতরফা সেই নির্বাচন আয়োজনের নৈতিক, সাংবিধানিক ও আইনগত কোনো ভিত্তি নেই। আওয়ামী লীগ ও রাষ্ট্রযন্ত্রের পূর্বনির্ধারিত ফলাফলের এই নির্বাচনি অপপ্রয়াসকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ।’

তিনি বলেন, ‘ভোটে অংশগ্রহণ করা বা না করা, দু’টি সিদ্ধান্তই দেশের প্রতিটি ভোটার ও রাজনৈতিক দলের গণতান্ত্রিক অধিকার। গণতান্ত্রিক বিশ্বের সকল দেশে, সকল সমাজে, ব্যক্তিগত ও দলীয় এই সিদ্ধান্তকে সম্মান জানানো হয়, সেটিই স্বাভাবিক। বাংলাদেশের বৃহত্তম ও জনপ্রিয়তম রাজনৈতিক দল হিসেবে জনগণের সমর্থনকে শক্তি হিসেবে ধারণ করে বিএনপি কখনোই নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিপক্ষে নয়। কারণ, আমরা বিশ্বাস করি বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলে সেটিতে বিএনপির বিপুল বিজয় অনিবার্য ও অবশ্যম্ভাবী।’

রিজভী বলেন, ‘দেশে-বিদেশে এটি আজ প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, নির্বাচনের নামে ২০১৪ সালের ভোটারবিহীন প্রহসন বা ২০১৮ সালের নিশিরাতের ভোটপ্রদান এর কোনোটিই কোনো বিবেচনাতেই তাত্বিক সংজ্ঞা বা ব্যবহারিক প্রয়োগে নির্বাচন ছিল না। ফলে ইলেকশনের নামে সিলেকশন করে পরপর দু’টি প্রতারণামূলক নির্বাচনে রাষ্ট্রযন্ত্রের চিহ্নিত অংশের সহযোগিতায় পূর্বনির্ধারিত ফলাফল ঘোষণা করেছিল ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার।’

তিনি বলেন, ‘২০১৪ ও ২০১৮ সালে ভোট ডাকাত শেখ হাসিনার অধীনে বাংলাদেশের মানুষ ভোট প্রদানের ন্যূনতম সুযোগটুকু পাননি। বিচার বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাংশের চলমান চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রেক্ষিতে, ২০২৪ সালের নির্বাচন-পূর্ববর্তী পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ বলে প্রতীয়মান। ফলে বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের সকল শক্তির ঐক্যবদ্ধ দাবি শেখ হাসিনাকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বাইরে রেখে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অত্যাবশ্যক। জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত এই গণদাবি উপেক্ষা করে পূর্ববর্তী দু’টি ন্যাক্কারজনক নির্বাচনের মতোই নির্বাচন কমিশন ও রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে পাতানো নির্বাচনের সাজানো রায়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা।

রিজভী বলেন, ‘এটি আজ স্পষ্ট, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের কলঙ্কিত ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে ২০২৪ সালেও প্রহসনমূলক নির্বাচনের ছক এঁকেছে আওয়ামী লীগ। জনগণের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও ভোটের আকাঙ্ক্ষার সাথে সাংঘর্ষিক এই সমঝোতা ভিত্তিক প্রকল্পকে সংজ্ঞাগতভাবে নির্বাচন বলে অভিহিত করা যায় না। খোদ শেখ হাসিনার নির্দেশে ডামি নির্বাচন আয়োজনের গণবিরোধী উদ্যোগকে নির্বাচন বলে দাবি করা যারপরনাই হাস্যকর একটি বিষয় বলে আমরা মনে করি।’

তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রযন্ত্রের দ্বারা সংঘটিত চলমান সর্বগ্রাসী সহিংসতা ও বিভাজিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায়, যে নির্বাচনকে অন্তর্ভুক্তিমূলক বা অংশগ্রহণমূলক করবার ন্যূনতম পরিবেশও সৃষ্টি করেনি নির্বাচন কমিশন, জাতির সাথে প্রতারণামূলক সেই উদ্যোগে ১৬০০ কোটি টাকা ব্যয় করে নির্বাচন কমিশন কী অর্জন করতে চাচ্ছে, সেটি নিয়েও আজ জনমনে প্রশ্ন রয়েছে।’

রিজভী বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের কবলে আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনে পরিণত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের কাছ থেকে সম্ভাব্য সকল সুযোগ-সুবিধা উপভোগ করছে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে প্রতিটি দিন ও প্রতিটি মুহূর্তে সর্বাঙ্গীন মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হচ্ছে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহ। আওয়ামী লীগ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, বিচার বিভাগ ও প্রশাসনের চিহ্নিত অংশের বহুমাত্রিক হামলা-মামলা, জেল-জুলুম, আঘাত-নিপীড়নে আজ বিএনপির সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের ন্যূনতম নিরাপত্তা ও নাগরিক অধিকার নেই।’

তিনি বলেন, ‘এরই মাঝে, সকল গণতন্ত্রমনা রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে বিএনপি যুগপৎ আন্দোলন পরিচালনা করছে। গণমানুষের প্রেরণায় তাদের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে পরিকল্পিত ভাগ-বাটোয়ারার নির্বাচনকে বর্জন করেছে বিএনপিসহ ৬৩টি রাজনৈতিক দল। ১২ কোটি ভোটারের ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আমাদের এই শান্তিপূর্ণ ও ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে, আরও বেগবান হবে।’

রিজভী বলেন, ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এই প্রতিজ্ঞায় আমাদের প্রেরণা যোগাচ্ছে জনগণের প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা ও অভূতপূর্ব সমর্থন তথা সকল শ্রেণি ও পেশার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি। ডামি নির্বাচন বর্জনকারী প্রতিটি দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলের একটিই লক্ষ্য- সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে হলেও জনগণকে সাথে নিয়ে আমরা শীঘ্রই জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করব।’

সারাবাংলা/এজেড/এনইউ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর