আলোয় স্মরণ বুদ্ধিজীবীদের, সাম্প্রদায়িক শক্তিকে প্রত্যাখানের ডাক
১৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ২৩:৩৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো: নিকষ কালো আঁধার শীতের রাত। সব ক’টা জানালা খুলে হয়তো আজ-ও দাঁড়িয়ে আছে কোনো দুঃখী সন্তান, একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর রাত থেকে যার অপেক্ষার প্রহর আর ফুরোয় না। যে রাতটিতে এদেশের মুক্তিকামী মেধাবী সন্তানদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি বর্বর বাহিনী, সেই রাতে হারিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিজীবীদের চট্টগ্রামে আলো জ্বালিয়ে স্মরণ করেছে প্রশাসন এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগরীর পাহাড়তলী বধ্যভূমিতে আলোক প্রজ্বলনের আয়োজন করা হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক নেতাকর্মী, সংস্কৃতিকর্মী, ছাত্র-যুব সংগঠকরা হাজির হয়েছিলেন শ্রদ্ধার ডালি নিয়ে।
প্রজ্বলিত মোমবাতি হলে বধ্যভূমির পাদদেশে দাঁড়িয়েছিলেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল আহমেদ, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনা, সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
স্মরণ আয়োজন শেষে বীর মুক্তিযোদ্ধা সরওয়ার কামাল দুলু সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ গড়ার কাজ অব্যাহত আছে। মুক্তিযুদ্ধের যে চারটি মূলনীতি ছিল, এর মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষ-অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার সংগ্রামটি এখনও আমাদের চালিয়ে যেতে হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এ দেশের সামরিক শাসকরা এবং পরবর্তী সময়ে তাদের উত্তরসূরিরা দেশ ও সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে সাম্প্রদায়িকতার বীজ ছড়িয়ে গেছে, তার মুলোৎপাটন এখনও সম্ভব হয়নি। আমাদের বুদ্ধিজীবীরা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বানানোর জন্য প্রাণ দেয়নি।’
‘আরেকটি বিষয়, চট্টগ্রামে যে বধ্যভূমিটি আছে, এটি এত সংকুচিত ছিল না। বধ্যভূমির জায়গা একটি মাফিয়া চক্রের হাতে বন্দি হয়ে আছে। সরকার চেষ্টা করছে, প্রশাসনকে আমরা বারবার বলছি, অবশ্যই এই জায়গা মাফিয়াদের কাছ থেকে উদ্ধার করতে হবে। এখানে একটি পূর্ণাঙ্গ স্মৃতিসৌধ করতে হবে।’
নারীনেত্রী হাসিনা আক্তার টুনু সাংবাদিকদের বলেন, ‘শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস মানে শুধু বধ্যভূমি বা শহিদ মিনারে ফুল দেওয়া নয়, শুধু মোমবাতি জ্বালিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা নয়। আমাদের নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে সেই বুদ্ধিজীবী কারা ছিলেন, তাদের আদর্শ কী ছিল, কেন তাদের টার্গেট করে পাকিস্তানিরা হত্যা করেছিল, তাদের হত্যায় এদেশীয় কারা ইন্ধন দিয়েছিল ও সহযোগিতা করেছিল। নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানাতে হবে। তাহলেই আমরা দেশপ্রেমিক প্রজন্ম পাব।’
শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মরণে খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগর আয়োজিত প্রদীপ প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি থেকে সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে প্রত্যাখ্যানের আহ্বান জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় নগরীর বৌদ্ধ মন্দিরের সামনে শহিদদের স্মরণে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সভাপতি মুনির হেলালের সভাপতিত্বে ও সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য প্রীতম দাশের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন- খেলাঘর কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য রথীন সেন, কেন্দ্রীয় সদস্য রোজী সেন, চন্দন পাল, মহানগর কমিটির সহ-সভাপতি দেবাশীষ রায়, মহিউদ্দিন শাহ, সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ বসু, সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য প্রার্থ প্রতীম নাহা, জয়ন্ত রাহা, সদস্য অমিত হোড়, নিউটন দত্ত, প্রবাল চৌধুরী মানু।
এর আগে, সকালে খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির পক্ষ থেকে অস্থায়ী শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
সকালে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষ্যে নগরীর সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের সভাপতিত্বে সভায় বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি প্রবীর কুমার রায়, সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এম এ মাসুদ, পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম জেলার ভারপ্রাপ্ত ইউনিট কমান্ডার এ কে এম সরোয়ার কামাল ও মহানগর ডেপুটি কমান্ডার নুর উদ্দিন বক্তৃতা করেন।
এছাড়া শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রাম জেলা ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ থেকে পাহাড়তলী বধ্যভূমিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়। জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ইমরান চৌধুরী, শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক তাহলীল আবছার অর্ণব, ক্রীড়া সম্পাদক দীপ্ত নূর, কোতোয়ালি থানার সহ সভাপতি কংকন শর্মা, সাংগঠনিক সম্পাদক সৌম্য মল্লিক অর্ক, ঋষু সাহা, পাহাড়তলী থানার কোষাধাক্ষ্য সুমন রহমান, সদস্য শ্রাবণ নাথ, ইমরান হোসেন ছিলেন। এ সময় শহিদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে নীরবতা পালন করা হয়।
সন্ধ্যায় মিউনিসিপ্যাল মডেল উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অস্থায়ী কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে জেলা ছাত্র ইউনিয়ন। এ সময় জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক টিকলু কুমার দে, প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক এস এম নাবিল উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম